দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে
২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৪ হাজার কর্মী বিদেশে গেছে। গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার। এর মধ্যে ২ লাখের ও বেশি দক্ষ শ্রমিক এবং ৯ লাখের ও বেশি অদক্ষ শ্রমিক। সব মিলিয়ে করোনার পরে বিদেশের শ্রমবাজারে নতুন করে ২৫ লাখ বাংলাদেশি যুক্ত হয়েছে। এ বছর শ্রম অভিবাসনের একটি ইতিবাচক দিক হলো মধ্যপ্রাচ্যের প্রচলিত বাজারগুলোর পরিবর্তে ইতালি এবং যুক্তরাজ্যের মতো অপ্রচলিত গন্তব্যে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী গেছে।
২০২২-২৩ সালে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে প্রায় ২১.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এক লাখেরও বেশি নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের থেকে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার কথা তা আসছে না। এর অন্যতম কারণ হলো দক্ষ জনবলের অভাব। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে সারা পৃথিবী এখন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো কায়িক শ্রমের স্থান দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের অদক্ষ জনবল তাদের কাজ হারাচ্ছে। এশিয়া এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার কায়িক শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম। বিদেশে বাংলাদেশি কায়িক শ্রমিকদের মজুরি গড়ে মাসিক দুইশত ডলারের সামান্য বেশি। ঠিক একাজেই ভারতীয়দের মজুরি চারশত ডলারেরও বেশি, চীনের প্রায় সাড়ে পাঁচশত ডলার এবং ফিলিপিনোদের প্রায় ছয়শত ডলার।
আমাদের অর্থনীতি এখন কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, যার ফলে আমাদের কর্মদাতাদের একটা অভিযোগ হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে কর্মদক্ষহীনভাবে কর্মজগতে আসে। আমরা বড়োসংখ্যক সাধারণ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি। কিন্তু অর্থনীতিতে এত বেশি গ্র্যাজুয়েট যুক্ত হতে পারছে না, টিকতে পারছে না। এটা শুধু চাকরির চ্যালেঞ্জ নয়, একই সঙ্গে সামাজিক চ্যালেঞ্জও। আমাদের দেশের শিল্প কলকারখানায় দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড়ো তৈরি পোশাক খাতে ২০ শতাংশ দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। আর এ সুযোগটি গ্রহণ করছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। তাদের কয়েক হাজার দক্ষ জনবল আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করছে এবং তাদের উচ্চ বেতন দিতে হচ্ছে। অথচ আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে খুব কম বেতনে কাজ করছে। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের ৬২ শতাংশ অদক্ষ, ৩৬ শতাংশ আধা দক্ষ এবং মাত্র ২ শতাংশ দক্ষ। এদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক বা তদোর্ধ্ব পাস করেছে কম বেশি ১২ শতাংশ।
দেশে প্রশিক্ষণকে সবচেয়ে অবহেলা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতাপূর্ণ শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে উৎপাদনশীলতা কম বেশি ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং এর প্রভাবে মজুরি বৃদ্ধি পায় দেড় শতাংশের মতো। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শ্রমিকের সাথে অদক্ষ শ্রমিকের উৎপাদনশীলতার পার্থক্য কম বেশি ৮ শতাংশের মতো। দেশে-বিদেশে সব জায়গায় এখন দক্ষ জনবলের চাহিদা বেশি। কোনো প্রতিষ্ঠানই অদক্ষ বা আধা দক্ষ জনশক্তিকে চাকরি দিতে চায় না। আমাদের তৈরি পোশাক খাতে যেমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী শ্রমিকরা কাজ করছে এবং এ খাতে তাদের চাহিদাও আছে, তেমনি বিদেশে বিশেষ করে জর্ডান, মরিশাস, সিশেলস, কুয়েত, জাপান ও হংকংসহ বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট, রাঙামাটি, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও খাগড়াছড়িÑ এই পাঁচ জেলা। এর মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে লালমনিরহাটে, মাত্র ৫৬ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ে পিছিয়ে থাকা প্রায় প্রতিটি জেলা জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। আর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অন্যতম কৌশল হিসেবে অভিবাসনকে দেখা হয়। ফলে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা এসব এলাকায় অভিবাসনে আগ্রহ বৃদ্ধি করতে তহবিল বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ভিসাপ্রক্রিয়া সহজীকরণের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। এতে এসব এলাকা থেকে অভিবাসন বাড়বে। কমবে দারিদ্র্য, বাড়বে প্রবাসী আয়।
শ্রমিকদের মজুরি নির্ভর করে কাজের দক্ষতা ও দরকষাকষির সক্ষমতার উপর। দরকষাকষির সক্ষমতা নির্ভর করে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও ভাষার দক্ষতার উপর। সরকারের লক্ষ্য হলো দক্ষ এবং যোগ্যতাসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে শিক্ষা এবং কারিগরি জ্ঞান জগতে জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমাগত বিকাশ এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করা।
লেখক: অর্থনীতিবিদ।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজবাড়ীতে নিখোঁজের ২দিন পর ধান ক্ষেত থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার
ইরানের পরিষেবা রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ
দিনাজপুর সীমান্তে থেকে বিজিবির হাতে বিএসএফ জওয়ান আটক
তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন: তদন্ত কমিটি গঠন
স্তব্ধ গদর, বন্ধ সিপিইসি! পাকিস্তানে বিক্ষোভে উদ্বিগ্ন চীন
আমিরাতে প্রবাসীদের সহজ সেবায় বাংলাদেশি 'মুনির ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম'-এর উদ্বোধন
অধীরের বদলে কেন শুভঙ্কর, পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের হাল ফিরবে?
নতুন সুড়ঙ্গ দিয়ে যুক্ত হচ্ছে ডেনমার্ক ও জার্মানি
গায়েবী মামলার ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনে হাইকোর্টে রিট
ডিএমপিতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৭৭৬ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৬ জাজার
যশোরের জামায়াত নেতাসহ নিহত ২
ভারতে হানা মাঙ্কিপক্সের সেই ভয়ানক ভ্যারিয়েন্টের
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আবু সাঈদের শরীরে গুলির চিহ্ন-মাথায় গর্ত
সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ
ঠাকুরগাঁওয়ে সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানকে আটক করেছে বিজিবি
সড়ক দুর্ঘটনায় সালথা উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতিসহ দুজন নিহত
নোবিপ্রবি উপাচার্যের সাথে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটির সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়
চাঁদপুরে বেড়েছে ইলিশের দাম
হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক
ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত