ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১

ব্যাংকের অর্থ লোপাট বন্ধ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ছোট-বড় ২৪টি অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। গত শনিবার সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত ‘অর্থনীতির চলমান সংকট ও করনীয়’ বিষয়ক ব্রিফিংয়ে ব্যাংকসহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের চিত্র তুলে ধরা হয়। সিপিডির মতে, অর্থনীতির খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাত বৈকল্য দশায় পতিত হয়েছে। সিপিডির দেওয়া তথ্য মতে, ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটে ২০২২ সালে। ওই বছর ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়ে। অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে এস আলম গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে যেসব ব্যাংকে ঋণ অনিয়ম হয়েছে তার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও রয়েছে: বেসিক ব্যাংক, রাষ্টীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক (হলমার্ক), জনতা ব্যাংক (ক্রিসেন্ট, অ্যাননটেকস গ্রুপ), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (সাবেক এন আর বি গ্লোবাল ব্যাংক) (পি. কে হালদার), ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক), এন আর বি কর্মাসিয়াল ব্যাংক প্রভৃতি। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এই অবাধ উৎসবের পাশাপাশি ঋণ খেলাপের অনেক ঘটনা ঘটেছে। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য মতে, ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠেছে, এ অর্থ কি দেশ আছে, না বিদেশে পাচার হয়ে গেছে? নিশ্চিত করে বলার উপার নেই। তবে বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৭শ’ থেকে ৮শ’ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ অর্থ কোথা থেকে আসে? জবাব হলো: ঋণ খেলাপ, কর খেলাপ ও দুর্নীতি থেকে।

ঋণ অনিয়ম, ঋণ খেলাপ, লুট ও পাচার ইত্যাদি কারণে ব্যাংক খাতের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট প্রকট। দেশের ৬১টি ব্যাংকের বেশির ভাগই ধারদেনা করে দৈনন্দিন খরচ মেটাচ্ছে। এত বেশি ব্যাংকের ধার করার নজির অতীতে নেই। প্রকাশিত খবরে উল্লেখ আছে, পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ১৪টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রেকর্ড করেছে। শেয়ার বাজারে মন্দা, বিনিয়োগ স্থবির, আমদানি সীমিত, চলমান মূল্যস্ফীতি সীমার বাইরে। সব মিলে দেশের অর্থনীতিতে মহা বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। ব্যাংক খাত শক্তিশালী ও গতিশীল থাকলে এ অবস্থা দেখা দিতো না। কোনো কারণে কোনো ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিলে সামাল দেওয়া সম্ভব হতো। অর্থনীতি এখন যে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তাতে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুনীতি, অর্থ পাচার বন্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানো অত্যাবশ্যক। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দুঃখ করে বলেছেন, শক্তিশালী একটি ব্যাংক খাতের আমাদের দীর্ঘ দিনের আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, ব্যাংক খাত কিছু সংখ্যক ব্যক্তির কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। তারা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যাংকগুলো ব্যবহার করছে। এটা এখাতের সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। একথা কারো অজানা নেই, সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পায় না। নানা ওজর-আপত্তি দেখিয়ে তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়, বঞ্চিত করা হয়। অথচ ব্যাংকের মালিক-মোক্তার, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ইত্যাদির ঋণ পেতে কখনোই অসুবিধা হয় না। নিয়ম-বিধি বেতোয়াক্কা বা অমান্য করে হলেও তাদের ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ অনিয়মের অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে নিয়ম-বিধি লঙ্ঘন করে। ব্যাংক খাতে নিয়ম-বিধি কম নেই। কিন্তু তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় না।

যে কোনো খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি হতে পারে। অসৎ, নীতিহীন, লোভী, অপরিণামদর্শী মানুষ সব খাতেই কিছু না কিছু আছে। যদি জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকে, নিয়ম-বিধি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা থাকে এবং অনিয়মকারীদের বিচার ও শাস্তির নিশ্চয়তা থাকে, তবে অনিয়ম-দুর্নীতি কম হতে বাধ্য। অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর ঋণ কেলেংকারির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কারোরই বিচার-শাস্তি হয়নি। বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ওরফে বাচ্চুর বিরুদ্ধে দুদকে অনেক মামলা হলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হলেও ধরা সম্ভব হয়নি; ভারতে পালিয়ে গেছেন। ঋণ কেলেংকারির ঘটনাগুলোর তদন্ত ধীর লয়ে চলছে। কবে তদন্ত শেষ হবে, কবে দোষীদের বিচার ও শাস্তি হবে, কেউ বলতে পারে না। দ্রুত তদন্ত বিচার হলে এধরনের অনিয়ম কমে যেতো। ওদিকে যারা বড় বড় ঋণ খেলাপী, তারা নানা কৌশলে পার পেয়ে যায়। প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্য থাকায় আইন-বিধি তাদের স্পর্শ করতে পারে না। ঋণ খেলাপী হওয়ার পরও তাদের নতুন ঋণ পেতে অসুবিধা হয় না। তাদের ঋণের একটা অংশ মওকুফও হয়ে যায়, কেউ জানতে পারে না। এভাবেই যদি চলতে থাকে, তবে ব্যাংক খাতের শক্তিশালী হওয়ার আশা আশাই থেকে যাবে। ব্যাংক খাতের এই নাজুক অবস্থার জন্য ব্যাংকগুলোর দায় তো আছেই, সেইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগেরও দায় রয়েছে। যথাযথ তদারকি ও কড়াকড়ি থাকলে এরকম অবস্থা কখনোই হতে পারতো না। ঋণ কেলেংকারি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত এবং যারা ঋণ খেলাপী, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে এবং অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার