জনসংখ্যা ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে হবে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
মূল্যস্ফীতি বাজারব্যবস্থাপনার কোনো নিয়মকেই অনুসরণ করছে না। আমন-বোরো কিংবা আলু-পেঁয়াজের ভরা মওসুমেও হুহু করে বাড়ছে এদের দাম। সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কৃতিত্ব জাহির করা হলেও বাস্তবে তার প্রমাণ মিলছে না। গত মাসে চালের দাম হঠাৎ প্রতি কেজিতে ৬/৭ টাকা বেড়ে যায়। এ নিয়ে হৈ চৈ ও অভিযান শুরু হলে এখন ১/২ টাকা কমেছে। এ রকম হওয়ার কথা নয়। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, গত বছর প্রায় ৪ কোটি টন চাল উৎপাদন হয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের চাল প্রয়োজন ৩ কোটি ১২ লাখ টন। চাহিদার অতিরিক্ত চাল উৎপাদনের পরও চালের সংকট বা দাম বৃদ্ধি হবে কেন? কেনই বা লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হবে? বলাই বাহুল্য, হয় জনসংখ্যার পরিসংখ্যানে, না হয় উৎপাদনের পরিসংখ্যানে ভুল আছে। অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনের পরিসংখ্যানও যা দেয়া হয়, তাতে মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কৃষকের উৎপাদন খরচের চেয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত পণ্যের মূল্য তিন-চার গুণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে একদিকে মুনাফাবাজ ব্যবসায়ীদের কারসাজি, অন্যদিকে সামগ্রিক চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতাই দায়ী। সিন্ডিকেটকে এ জন্য দায়ী করা হয় বটে, কিন্তু আসলে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করে। তারা সরকারের অতি পেয়ারের। সিন্ডিকেটের কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে স্বীকার করতে হবে, সরকারের বাইরে কোনো সিন্ডিকেট নেই।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় গত মওসুমে আলুর উৎপাদন অন্তত ২০ লাখ টন বেশি হলেও বছরের বেশিরভাগ সময় ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম ৫০ টাকার উপরে ছিল। এমনকি ভারত থেকে আলু আমদানি করে চাহিদা পূরণের ঘোষণা দেয়ার পরও বাজারে তার প্রভাব খুব সামান্যই পড়েছে। একই অবস্থা পেঁয়াজ-রসুনের ক্ষেত্রেও। যখন তখন মূল্য বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার বাস্তবতায় দেশের কৃষকরা এখন এসব পণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছে। বর্ধিত জমি এবং উন্নত বীজ ও চাষাবাদ পদ্ধতির কারণে ফলন পাওয়া যাচ্ছে হাতে হাতে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদনে রেকর্ড গড়ার পরিসংখ্যান আমরা প্রায়শ দেখতে পাচ্ছি। পরিসংখ্যানের তথ্য এবং বাস্তবতার অমিল সমাজ ও অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থির প্রভাব সৃষ্টি করছে। কয়েক বছর আগেও পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ১০ম স্থানে ছিল। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে গত বছর তৃতীয় স্থানে উঠে গেছে বলে কোনো কোনো রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুসারে গত বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম এবং পেঁয়াজ আমদানিতে প্রথম। বিবিএস’র পরিসংখ্যান অনুসারে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫-৩৬ লাখ টন এবং উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টন। এই হিসাবে উৎপাদন ও আমদানি মিলে পেঁয়াজের মজুদ ৪০ লাখ টনের বেশি হওয়ার কথা, যা কথিত চাহিদার চেয়ে কয়েক লাখ টন বেশি। এহেন বাস্তবতায় বাজারে হঠাৎ টান পড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকলেও এবং নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পরও মূল্য প্রতি কেজি ১২০ টাকার নিচে নামছেই না। একই অবস্থা পোল্ট্রি, ডেয়রি, গোশত উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্যের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রেই চাহিদা, উৎপাদন ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দাবির সাথে যোগান ও মূল্য পরিস্থিতি মেলানো যাচ্ছে না।
আমাদের জনসংখ্যা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন, শিল্পোৎপাদনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যে সব পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনা ও মূল্যের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রতিপন্ন হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরা হয়। সেটা ধরেই পণ্যচাহিদা, উৎপাদন, আমদানি ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়। অনেকের ধারণা, প্রকৃত জনসংখ্যা এর চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)এর হিসাবে ২০২২ সালের জনমশুমারি ও গৃহগণনায় ২.৭৫ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। কেউ কেউ প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। অর্থাৎ ৫০ লাখ থেকে কোটি মানুষকে গণনার বাইরে রাখা হয়েছে। যদি এমনটাই হয়, তবে পণ্যচাহিদা পূরণ ও পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা অসম্ভব। পণ্যচাহিদার স্বাভাবিক যোগান নিশ্চিত ও পণ্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমায় রাখতে হলে জনসংখ্যা ও উৎপাদন পরিসংখ্যান নির্ভুল করতে হবে। একদিকে পরিসংখ্যানের গলদ, উন্নয়ন মডেলে শুভঙ্করের ফাঁকি, অন্যদিকে বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণহীনতার খেসারত দিচ্ছে দেশের দরিদ্র মানুষ। সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডেটাবেইজ তৈরির মধ্য দিয়ে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সঠিক ও সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হলে পরিসংখ্যানের গলদ ও গোঁজামিল দূর করতে হবে। সেই সাথে বাজার ব্যবস্থাপনাকে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চীনের সাহায্যে চাঁদে পাড়ি দিল পাকিস্তানের প্রথম চন্দ্র-উপগ্রহ!
যুক্তরাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির বড় জয়, সুনাকের দল ধরাশায়ী
উপজেলা নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল
ইরানকে যেভাবে নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় সাহায্য করছে চীন
মালদহে দেবের হেলিকপ্টারে আগুন
ফ্রিজের ভেতর থেকে চার শিশুর লাশ উদ্ধার, অতঃপর...
ফের কলকাতার সিনেমায় বাঁধন
গাজায় সাত মাসে ৩৪ হাজার ৬২২ ফিলিস্তিনি নিহত
তীব্র দাবদাহে মরছে মাছ, দিশেহারা চাষিরা
টানা আট ঘণ্টা নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যা করলেন মন্ত্রী, দেশজুড়ে বিতর্ক
কোক স্টুডিও বাংলা’র নতুন গান ‘মা লো মা’
বালিশে বুক ঢেকে হোটেল থেকে বের হলেন ব্রিটনি, কী ঘটেছে মাঝরাতে?
কানাডায় নিজ্জর হত্যার ঘটনায় তিন ভারতীয় আটক
শাক্সগাম আমাদের, চীনা নির্মাণের উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে আসার পর দাবি ভারতের
ধর্মান্তরিত হওয়ার একদিন পরই নিজ ধর্মে ফিরলেন অভিনেত্রী
সরকার পতনের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলো একাত্ম: ড. মঈন খান
জনপ্রিয়তায় ব্র্যাড পিটকে হার মানালেন শাহরুখ!
জনপ্রিয় কমেডিয়ান ভারতী সিং হাসপাতালে ভর্তি
মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত নেটিজেনরা
ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো দুটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়