বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত হবে না
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
আগামী মার্চ থেকে সরকার গ্রাহক ও পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে। শিঘ্রই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। গত দেড় দশকে সরকার বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও ভোক্তা পর্যায়ে ১৩ বার বাড়িয়েছে। এখন গড়ে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৮টাকা ২৫ পয়সা ও পাইকারি দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা। পিডিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎখাত থেকে ভর্তুকি তুলে দিতে হলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। ভর্তুকি তুলে দিতে হলে প্রতি ইউনিটের পাইকারি দাম ১২ টাকা ১১ পয়সা এবং ভোক্তা পর্যায়ে প্রায় ১৫ টাকা করতে হবে। এদিকে, আগামী গ্রীষ্মে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারলে ৫০০ থেকে ১০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে দেশের সর্বত্র বিদ্যুতের চরম সংকট দেখা দিতে পারে। দেশে বহুদিন ধরেই ডলার ও জ্বালানি সংকট চলছে। ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি যেমন আমদানি করা যাচ্ছে না, তেমনি দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিল পরিশোধ করতে পারছে না। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার টাকার ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বিদ্যুতের সাথে উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ জড়িত। বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো কিছুই চলে না। সবকিছুই স্থবির ও অন্ধকার হয়ে পড়ে। দেশে এখন চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে। মানুষের আয় কমে যাওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া এবং নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। সরকার সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়ার মতো কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছে না। বহুদিন ধরে নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। তিনবেলা খাবার ঠিকমতো খেতে পারছে না। বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে না পেরে চরম হতাশ নিয়ে মানুষকে ফিরতে হচ্ছে। সন্তানদের প্রয়োজনীয় খাবার দিতে পারছে না। বাসা ভাড়া, সন্তানের ভরণপোষণসহ সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। শোচনীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নি¤œবিত্ত দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তাদের পরিস্থিতি কি হবে, তা সহজেই অনুমেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ জড়িত। এছাড়া কৃষি, সেচ, খামার, ছোটখাটো মিল-কারখানায় বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। এ প্রেক্ষিতে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে, প্রত্যেক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া। পণ্যের উচ্চমূল্যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাসকালে যদি আবার পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা তাদের কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়াবে। তারা অসীম দুর্গতির মধ্যে পড়ে যাবে। এর প্রতিক্রিয়ায় নি¤œবিত্তরা তো নিঃস্ব হবেই, মধ্যবিত্ত শ্রেণী বলতে কিছু থাকবে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাবে। কোনোরকমে দিন কাটানোও তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। সরকার টাকার সংস্থান করতে সাধারণ মানুষের ওপর বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির এই অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। অথচ দেশ থেকে প্রতিনিয়ত বিদেশে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকিং চ্যানেলে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে এক বছরে ৬৫ শতাংশ। এ অর্থ পাচার দেশ থেকে হয়েছে। সরকার পাচার বন্ধ করতে পারছে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকার অর্থ পাচার বন্ধ করতে না পেরে, টাকা জোগাড় করতে নিঃস্ব মানুষের পকেটে হাত দিয়েছে। অন্যদিকে, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ না করলেও ক্যাপটিভ চার্জ হিসেবে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিতে হচ্ছে। গত বছর পিডিবি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলেছে, ৪১ শতাংশ অলস বসে ছিল। অর্থাৎ জনগণ অর্থসংকটে থাকলেও তাদের অর্থ দিয়েই এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে পালতে হচ্ছে।
বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলা সরকারের কাজ হতে পারে না। সরকার যদি সাধারণ মানুষের দুর্দশা উপলব্ধি না করে, তাহলে তারা কোথায় যাবে? সরকার একদিকে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে তাদের স্বস্তি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্বের যেকোনো দেশে পণ্যমূল্য ও ইউটিলিটি বিল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার অনেক চিন্তাভাবনা করে। বাড়ালে সাধারণ মানুষসহ সর্বত্র এর কি কি প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনা করে। আমাদের সরকার এসব চিন্তা করে বলে মনে হয় না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম হুটহুট বাড়িয়ে দেয়। এতে মানুষের কি সমস্যা সৃষ্টি হবে, তাদের জীবনযাপনে কতটা টানাপড়েনের সৃষ্টি হবে, তা বিবেচনায় নেয় না। বাস্তবতা বিবর্জিত ও অবিবেচনাপ্রসূত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের ওপর দুঃসহ জুলুম ছাড়া কিছু নয়। পূর্বে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আগে ‘গণশুনানি’র ব্যবস্থা ছিল। সরকার সেটিও তুলে দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। এখন যখন তখন ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের উচিত, ভর্তুকি কমাতে মানুষের পকেটের অর্থ হাতানোর প্রবণতা বন্ধ করা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি না করা। বিশেষজ্ঞদের মতো, বিদ্যুতের চুরি, অপচয়, অবৈধ লাইন, ক্যাপটিভ চার্জের নামে অর্থবিনাশ বন্ধ করলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৪০ ডিগ্রির নিচে নামল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
নিরঙ্কুশ ব্যবধানে টানা তৃতীয়বারের মতো লন্ডনের মেয়র সাদিক খান
যাকাত ফরজ হওয়ার পর আদায় না করে মৃত্যুবরণ করা প্রসঙ্গে।
আট দফা কমার পর বাড়ল সোনার দাম
অবশেষে ময়মনসিংহে বৃষ্টি: জনজীবনে স্বস্তি
সরকার চিকিৎসা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে -ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি
সাগরদাঁড়িতে জলন্ত চুলায় পড়ে দু ' শিশু দগ্ধ, এক শিশুর করুণ মৃত্যু
সুন্দরবনে ভয়াবহ আগুন, শুরু হয়নি অগ্নি নির্বাপনের কাজ
আবারো লন্ডনের মেয়র হিসেবে বিজয়ী সাদিক খান
বিএনপির ডাকা চলমান আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৮মে প্রথম ধাপার উপজেলা নির্বাচন বয়কটের দাবিতে কেশবপুর পৌর শহরে লিফলেট বিতরণ
ইসলামী ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে প্রাক্তন প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত
নির্বাচিত হলে লৌহজংয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ও হাসপাতাল গড়ে তুলবো: বিএম শোয়েব
আদানি পাওয়ারের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ
সুন্দরবনে আগুনের খবর শুনে বনে ছুটে গেলেন ইউএনও তারেক সুলতান
সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চান আমলারা, যা বলছেন নেটিজেনরা
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সামার ২০২৪ সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন
ক্ষমতাসীনদের ইশারায় সারাদেশে লুটপাট হচ্ছে: মোনায়েম মুন্না
মির্জাপুরে তীব্র পানির সংকট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম চারটি স্থানে এমপি শুভর নলকূপ স্থানের উদ্যোগ
ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা
শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ