ভারতীয় চায়ের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে
২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়ে চলেছে। গতবছর ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে প্রায় পৌনে দুইশ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বাংলাদেশের চা চাষি ও উৎপাদকরা। চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। আগামী বছর তা ১৪ কোটি কেজিতে উন্নীত হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে এর চেয়ে অনেক কম চা উৎপাদন করেও এক সময় বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষ চা রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিগণিত ছিল। দেশে চায়ের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে চা উৎপাদন কোটি কোটি কেজি বাড়লেও এখন আর দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা যাচ্ছে না। তবে উৎপাদনে চলমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আবারো চা রফতানির ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। কয়েক বছর আগ পর্যন্ত বিশ্বে চা উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০ম। শতকরা ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে গত বছর বাংলাদেশ চা উৎপাদনে বিশ্বে ৮ম স্থানে উন্নীত হয়েছে বলে জানা যায়। চা শিল্পে এখনো নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও বৈপরীত্য বিদ্যমান। বিশ্বব্যাপী চায়ের চাহিদা ও মূল্য বাড়লেও দেশীয় চা চাষি ও শ্রমিকরা তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চায়ের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনতে হলে, আধুনিক চাষাবাদ ও উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি চা বাগানের উদ্যোক্তা, শ্রমিক ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে সময়োপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে।
পুরনো বৃহদাকার চা বাগানগুলোর পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে এ খাতে একটি দ্রুত বর্ধনশীল প্রবৃদ্ধির ধারা লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে। তবে অন্যান্য কৃষি পণ্য এবং শিল্পের মত বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনায় শিল্পের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে অবৈধ পথে চোরাচালান হয়ে আসা নি¤œ মানের ভারতীয় চা। এ কথা ঠিক যে, চাহিদা পুরণ করতে এখনো আমাদেরকে কিছু পরিমান চা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বৈধ পথে উন্নতমানের চা আমদানির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেই সাথে পুরনো ট্রাডিশন অনুসারে আন্তর্জাতিক অকশনে বাংলাদেশ থেকে কিছু চা ইউরোপের বাজারে রফতানিও হয়। বিশ্বায়িত মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এমন মিশ্র বাণিজ্যিক ব্যবস্থা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে দেশীয় চা শিল্পের উদ্যোক্তা, চাষি ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ভারত থেকে অবৈধ পন্থায় নিম্নমানের চায়ের চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলে সংশ্লিষ্টরা ন্যায্যমূল্য ও মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়ে চা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কা মোকাবিলা এবং চায়ের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনতে হলে নি¤œমানের ভারতীয় চা পাতার অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
ভরা মওসুমে ভারত থেকে নি¤œমানের চাল আমদানির সুযোগ দেয়ার কারণে প্রান্তিক চাষিরা লোকসানি দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় এক সময় অনেক চাষি ধানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এটি একটি বিপজ্জনক বাস্তবতা। একইভাবে বাংলাদেশের পাটের উপর অন্যায্য ভারতীয় এন্টি-ডাম্পিং ব্যবস্থার খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের পাট চাষি ও পাটশিল্পের বিনিয়োগকারীদের। একইভাবে দ্রুত বর্ধনশীল ও সম্ভাবনাময় চা শিল্পও যেন কোনো অশুভ নেপথ্য চক্রান্তকারী চক্রের ফাঁদে না পড়ে, সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিলেটের হবিগঞ্জ, মাধবপুর, চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি নি¤œমানের ভারতীয় চা পাতা বাংলাদেশে ঢুকছে। দেশি-বিদেশি চক্রের যোগসাজশে এসব চাপাতার প্যাকেটজাত করণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় চা শিল্প। কমদামে নি¤œমানের চা বিপণনের মাধ্যমে দেশীয় ভোক্তারাও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিজিবি বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনে অতি সক্রিয় ভ’মিকায় থাকলেও দেশের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিল্প ধ্বংসকারী চোরাচালান বন্ধে তাদের নিস্ক্রিয়তা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণে চায়ের মান ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নি¤œমানের ভারতীয় ডাস্ট চায়ের অনুপ্রবেশ বন্ধে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও তৎপরতা জোরদার করার বিকল্প নেই। সেই সাথে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র চা বাগানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রণোদনা দিতে হবে। সিলেট ও চট্টগ্রামের চা বাগানগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বৃষ্টি নিয়ে যে সুসংবাদ দিলো আবহাওয়া অফিস
কুয়াকাটায় সমুদ্রের তলদেশে কাটা পড়েছে ফাইবার ক্যাবল, বন্ধ দেশের দ্বিতীয় কুয়াকাটা সাবমেরিন ক্যাবল, দেশব্যাপী ইন্টারনেটের ধীরগতি
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে ‘অকাস’
দুমকিতে মাহফিল কমিটি নিয়ে সংঘর্ষ আহত ১৫
বাংলাদেশকে গ্যাস চেম্বার বানিয়েছে সরকার: রিজভী
মহাকাশ স্টেশনে প্রবেশ করেছেন শেনচৌ-১৮ নভোচারীরা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনটি নীতিতে অটল থাকবে চীন
চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে ফসলী জমির ফসল;ক্ষতির তথ্য নেই কৃষি বিভাগে
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে নারী অধ্যাপককে মাটিতে ফেলে যেভাবে হাতকড়া পড়াল মার্কিন পুলিশ
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দমনে মারমুখী যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ
অবৈধ প্রভাব ও হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জুয়েল
আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও পেরুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন সফর করবেন
নিখোঁজের ১ বছর পর বাহরাইন থেকে মিলল থাই মডেলের মৃতদেহ
লোহিতসাগরে ভারতগামী তেলবাহী ট্যাংকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুতিদের
গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শুরু
বেইজিংয়ে শুক্রবার ঐক্য সংলাপে বসছে ফাতাহ-হামাস
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তা বিল বিশ্বকে আরও বিশৃঙ্খল করবে: জনমত জরিপ
ইবতেদায়ী মাদরাসাকে অবহেলিত রেখে দুর্নীতিমুক্ত জাতি গঠন সম্ভব নয়
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের পাল্টা প্রস্তাব বিবেচনা করছে হামাস
আমেরিকার পর এবার ইউরোপে ছড়িয়েছে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন