ঢাকা   বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্রলীগের অপকর্মের লাগাম টেনে ধরতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৯ এএম

২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আবরার ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে সেখানে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায়ই বুয়েট ক্যাম্পাসে আসে এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায়। গত বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা দলবলে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কর্মকা- চালায়। এর প্রতিবাদে গত শুক্রবার বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। তারা পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করে। দাবি আদায়ে গতকাল এবং আজকের পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষাণা দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, রাত সাড়ে ১০ টার পর নিরাপত্তার কারণে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই। অথচ বুধবার রাত একটার দিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে। বুয়েটের নীতিমালা অনুযায়ী, এখানে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ। সেখানে রাতের আঁধারে একটি বড় ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক সমাগম ও বহিরাগতদের আগমন কিভাবে ঘটে? এর দায় বুয়েট প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।

সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর ধরে ছাত্রলীগের অপকর্ম চলে আসছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের অপকর্ম ও নিপীড়ন, নির্যাতনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাদের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন অসহায় কিংবা প্রশ্রয় দেয়, তোয়াজ করে চলে। যখন কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটে তখন শুধু টনক নড়ে। ঢাকা, জাহাঙ্গীর নগর চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে ছাত্রলীগের অপকর্মের ঘটনা ঘটে না। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি হলের মধ্যে টর্চার সেলসহ হেন কোনো অপকর্ম নেই, যাতে ছাত্রলীগ জড়িত নেই। এখন এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, ছাত্রলীগ মানেই সাধারণ মানুষের কাছে ‘ত্রাস’। বাস্তবিকই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের কথাই যেন শিরোধার্য হয়ে উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয় নিয়ে পড়াশোনা করছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, সমাজের সর্বত্র ছাত্রলীগের অপকর্ম ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগ শুনলেই মানুষ আঁতকে উঠে। যারা ছাত্রলীগ করে তারা শত অপরাধ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার মতো একটি অপসংস্কৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন যেন অলিখিতভাবে ছাত্রলীগের দ্বারা পরিচালিত হয়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হিম্মত কর্তৃপক্ষের নেই। বুয়েটে আবরার হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের যে নৃশংসতার পরিচয় পাওয়া গেছে, তা সংগঠনটির ভাবমর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণœ করেছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে সহিংসতাসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার ঘটনা লজ্জারও বটে। সর্বশেষ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহবধূকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা গণধর্ষণের ঘটনা সংগঠনটিকে আরও কালিমালিপ্ত করেছে। এসব ঘটনার পরও ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো ধরনের সংশোধনের আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুনেরও ধার ধারে না। বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও অনেকটা জবরদস্তিমূলকভাবে সেখানে প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু করার পাঁয়তারা করছে। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে এবং করছে। তাদের মন থেকে ছাত্রলীগের হাতে আবরার হত্যাকা-ের ঘটনা মুছে যায়নি। ফলে তারা বুয়েটে শুধু ছাত্রলীগ নয়, সবধরনের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।

বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশ কর্তৃপক্ষের অগোচরে হয়েছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। একটি ক্যাম্পাসে গভীর রাতে দলবলে লোকজন প্রবেশ করবে, আর কর্তৃপক্ষ তা জানবে না, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এতে নিশ্চয়ই বুয়েট কর্তৃপক্ষের প্রশ্রয় রয়েছে এবং এর দায় ভিসি ও প্রশাসন এড়াতে পারে না। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামলাতে ভিসি দাবি মানার বিষয়ে যতই আশ্বস্ত করুন না কেন, তা আগুন ধরিয়ে দিয়ে নিভানোর মতো হয়ে গেছে। বুয়েট অশান্ত হয়ে উঠার ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীন দলের অধীনস্থ সংগঠন। এ সংগঠনের বেপরোয়া আচরণ ও কর্মকা-ে বিরক্ত হয়ে একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অভিভাবকত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে তাকে ফিরিয়ে এনেছে। ধারণা করা হয়েছিল, ছাত্রলীগ নিজেকে পরিশুদ্ধ করে অপকর্ম থেকে দূরে থাকবে। দেখা যাচ্ছে, তা করেনি, বরং দিন দিন অপকর্ম বেড়েই চলেছে। ছাত্রলীগের এই অপকর্মের লাগাম টেনে ধরা দল হিসেবে যেমন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব, তেমনি সরকারেরও ছাত্রলীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ছাত্রলীগেরও বুঝতে হবে সংগঠনটির অতীত ঐতিহ্য ও ইতিহাস তার অপকর্মের কারণে ঢেকে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে ছাত্রলীগ একটি অপকর্মের সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে
কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত
আরও

আরও পড়ুন

লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা

লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা

খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু

খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি

আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার

আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার

অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী

অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী

পার্লামেন্টে ক্ষমা

পার্লামেন্টে ক্ষমা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!

লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার

লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার

মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার

মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার

সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক

সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক

গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই

গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই

সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির

সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির

স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।

স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন

জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার

জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার

ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি

ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি

বিতর্ক পরিহার করতে হবে

বিতর্ক পরিহার করতে হবে

ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না

ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না

নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা

নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা