তালাক বাড়ছে কেন
০১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম
দেশে তালাক বাড়ছে। গ্রামে যেমন, তেমন শহরে। শহরের চেয়ে গ্রামে তালাকের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক ২০২৩-এর ফলাফলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে তালাকের সংখ্যা ১১, আর শহরে ৯। তথ্যাদি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে তালাকের হার বেড়েছিল। ২০২০ সালে প্রতি ১০ হাজারে যেখানে ৭টি ও ২০২১ সালে ৮টি সেখানে ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছিল ১৫টিতে। ২০২৩ সালে এ হার কমেছে; প্রতি ১০ হাজারে ১১টি। শুধু তালাক নয়, বিয়ের সংখ্যাও শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে বিয়ের সংখ্যা ১০৮, শহরে ১২০। তবে সার্বিকভাবে হার কিছুটা কমেছে। এখানে বিশেষভাবে বলা আবশ্যক, বিবাহ ও তালাকের পরিসংখ্যান থেকে সমাজ ও সামাজিক পরিস্থিতির একটি চিত্র উঠে আসে। তালাক বৃদ্ধি, বিশেষত গ্রামে, অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তেমনি বিবাহ বৃদ্ধিও যদি তা বাল্যবিবাহ হয়। গ্রামে বাল্যবিবাহের সংখ্যাও বেশি। যখন কম বয়সী একটি মেয়ের দুয়েকটি সন্তান নিয়ে তালাক হয়ে যায়, তখন তার দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা ও অনিশ্চয়তার শেষ থাকে না। দ্বিতীয় বিবাহ যেমন তার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে, তেমনি বাবা-মার কাছেও অনেক সময় আশ্রয় জোটে না কিংবা তাদের আশ্রয় দেয়ার মতো অবস্থা থাকে না। এহেন পরিস্থিতিতে তালাকপ্রাপ্তা ও তার সন্তান-সন্ততির কী দুঃসহ অবস্থা দাঁড়ায়, সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তালাকের কারণ প্রধানত দারিদ্র্য বা পারিবারিক ব্যয়বহনের অক্ষমতা। পারিপারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা ইত্যাদিও তালাকের জন্য দায়ী। অভাব-দারিদ্র্য পারিবারিক অশান্তির প্রধান কারণ। আর পারিবারিক অশান্তি তালাকের সবচেয়ে বড় কারণ। পারিবারিক অশান্তি বা কলহ-বিবাদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর শারীরিক নির্যাতনের মূলে। অভাব-দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও যৌন অক্ষমতার কারণ। দেখা গেছে, দেশের যেসব এলাকায় অভাব-দারিদ্র্য বেশি, সেসব এলাকায় তালাকের হার বেশি। এছাড়া বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেও তালাক হতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নৈতিক অবক্ষয় বেড়ে যাওয়ায় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তালাকের প্রধান কারণ যেমন দারিদ্র্য, তেমনি বাল্যবিবাহেরও প্রধান কারণ দারিদ্র্য। এইসঙ্গে নিরাপত্তাহীনতাও। গ্রামের দরিদ্র বাবা-মার সন্তান লালন-পালনের সক্ষমতা স্বাভাবিককারণেই কম। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর সামর্থ্যও তাদের নেই বললে চলে। এমতাবস্থায়, মেয়ে সন্তান একটু বড় হলেই তাদের প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় বিয়ে দেয়ার। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে যাই থাক, সেটার তোয়াক্কা তারা করে না। ওই আইনে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। অথচ দায়গ্রস্ত বাবা-মা তার আগেই মেয়ের বিয়ে দেয়। অনেক সময় বেশি বয়সী বর ও দ্বিজবরের কাছেও। এ ধরনের বাবা-মা অন্য একটি কারণেও সব সময় বিচলিত ও উৎকণ্ঠায় থাকে। মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। মেয়েদের জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, জবরদস্তি ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ইজ্জত-সম্মান রক্ষার তাকিদে তারা কিছুমাত্র সুযোগ পেলেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে স্বস্তি লাভ করে। প্রসঙ্গত বলা জরুরি, দেশে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা অনেক বেড়ে গেছে। বিনিয়োগ নেই। বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। অথচ কর্মপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। বেকারত্ব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কর্ম থাকলে আয়-রোজগার থাকে। আয়-রোজগার থাকলে ক্রয়ক্ষমতা থাকে। করোনাকালে মানুষের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। বহু মানুষ চাকরি হারায়। আয়-রোজগারের উপায় হারায়। পরবর্তীকালে এ অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে যেমন বিপর্যস্ত করে দিয়েছে, তেমনি অনেক দেশের অর্থনীতিকেও বেসামাল করে দিয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনীতি নানাদিকে ক্ষতির শিকার হয়েছে। পণ্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আর্থিক টানাটানি ও উচ্চমূল্যস্ফতি বিত্তহীনদের তো বটেই নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তকেও পথে বসিয়ে দিয়েছে। পবিত্র মাহে রমজানে সরকার পণ্যমূল্যবৃদ্ধি রোখার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষায় শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে যথেচ্ছ মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
মানুষের এহেন অসহায় ও নিরূপায় অবস্থা সরকারকে কমই বিচলিত করে। সরকারের মন্ত্রীদের বরং সুবচন দিতে দেখা যায়, মানুষ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভালো আছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তাদের মতে, মানুষ যে না খেয়ে মরছে না, এটাই তাদের ভালো থাকার প্রমাণ। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় এটা প্রতীয়মান হয়েছে, দেশে দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধি এবং ক্রয়ক্ষমতা এতটাই কমেছে যে, মানুষ প্রয়োজনীয় পণ্যাদি কেনা কমিয়ে দিয়েছে, খাদ্যখানাও কমিয়েছে। ফলে পুষ্টিহীনতা সীমার বাইরে চলে গেছে, রোগব্যাধি বেড়েছে। সরকার অবশ্য এসব স্বীকার করতে নারাজ। সরকার আগের ঢোলই বাজিয়ে চলেছে। দেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে, উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানির নিচ দিয়ে নির্মিত সড়ক ইত্যাদি তার সাক্ষী। সরকারকে কে বুঝাবে, এ ধরনের স্ট্রাকচারাল উন্নয়ন প্রকৃত উন্নয়ন নয়। দেশবাসীর জীবনমানের উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন, যা এখনো দূরের বাদ্য। তালাক, বাল্যবিবাহ, কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থপাচার, মাদক কারবার এবং সামাজিক আরো নানা অনাচার ও অনিরাপত্তা দেশ ও জাতিকে যে বিপর্যয়কর অবস্থায় নিক্ষেপ করেছে, তা থেকে উদ্ধার পাওয়া কঠিন। তবে উদ্ধারের বিকল্প নেই। সরকারকে স্ট্রাকচারাল উন্নয়নের ধুয়া ছেড়ে মানুষের নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক ও সুষম সামাজিক উন্নয়ন কীভাবে হয়, সেটা নির্ণয় ও নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে
ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না
নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা