প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়ন করতে হবে
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম
![](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024April/sompadiyiyo-20240402211034.jpg)
প্রাকৃতি সৌন্দর্য ও শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের টাইগারপাস-সিআরবি সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ করতে সড়কের শতবর্ষী গাছপালা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংসের আয়োজনের বিরুদ্ধে নগরবাসি রুখে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র এমন সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মেনে নিতে পারছে না। চট্টগ্রামে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গত বছর প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেও এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামা করার জন্য প্রয়োজনীয় সংযোগ সড়ক বা র্যাম্প নির্মাণ শেষ না হওয়ায় এটি এখনো বাণিজ্যিকভাবে চালু করা যায়নি। কয়েকদফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এ সময়ে তা শেষ করা নিয়ে নতুন জটিলতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পিত ১৪টি র্যাম্পের মধ্যে দুটি পড়েছে টাইগারপাস সড়কে। সিডিএ’র অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের খড়গে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো ধ্বংসের মুখে পড়েছে। কয়েক বছর আগে সিআরবি’র উদ্যানে হাসপাতালের ভবন নির্মাণের সময়ও নাগরিক সমাজের বাঁধার সম্মুখীন হয়। দুইপাশে পাহাড়, প্রচুর শতবর্ষী বৃক্ষ এবং নান্দনিক সৌন্দর্যমন্ডিত টাইগার পাস-সিআরবি সড়কের মোহনীয়তা চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ।
টাইগারপাস সড়কটি চট্টগ্রামের আইকনিক স্থান ও স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। ঊনবিংশ শতকে স্থাপিত বৃটিশ বেঙ্গল রেলওয়ের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবন সিআরবি’কে ঘিরে বিশাল পার্ক ও সিরিষ গাছের সারির নিচে এখনো চট্টগ্রামের মানুষ পুরনো শহরের সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ায়। একে চট্টগ্রামের ফুসফুস বলেও আখ্যায়িত করা হয়। শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও নান্দনিক সৌন্দর্যের পুরনো উৎসগুলোকে উপড়ে ফেলে যে উন্নয়নের তৎপরতা চলছে, তা আমাদের একেকটি শহরকে কার্যত পরিত্যক্ত ও বসবাসের অযোগ্য জনপদে পরিনত করতে শুরু করেছে। মোঘল ও বৃটিশ আমলের পরিকল্পিত, নদ-নদী ও খাল দ্বারা সুশোভিত এক সময়ের ঢাকা নগরী এখন বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিনত হয়েছে। দেশের রাজধানী শহরকে বসবাস ও চলাচলের অযোগ্য রেখে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সামনে এগিয়ে নেয়া কার্যত সম্ভব নয়। একইভাবে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন, বৃহত্তম বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে ক্রমাগত পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে রেখে এর টেকসই ও বাস্তবিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা এবং পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করে সিডিএ যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
অপরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রণহীন উন্নয়ন ও সম্প্রসারনের নামে গত ৫০ বছরে ঢাকার অসংখ্য খাল, পুকুর, জলাভূমি হারিয়ে গেছে। অনেক উদ্যান ও মাঠ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গাসহ শহরের চারপাশের চারটি নদীর উপর দখলবাজি ও দূষণের কারণে ঢাকা নগরী তার প্রধান সম্পদ, ঐতিহ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তা বলয় হারিয়ে একটি কংক্রিটের জঙ্গলে পরিনত হয়েছে। একইভাবে পাহাড়-নদী, সমুদ্র বেষ্টিত চট্টগ্রামের অধিকাংশ পাহাড় ইতিমধ্যে সিডিএ’র তথাকথিত উন্নয়নের খড়গের নিচে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদীও ইতিমধ্যে দখল-দূষণে মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় ও হুমকির মুখে রয়েছে। টাগারপাস সড়কের শতবর্ষী গাছগুলো মানুষের মমতার বন্ধনে এখনো টিকে আছে। অর্থ থাকলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলেও অর্থ দিয়ে শতবর্ষী বৃক্ষের বাগান কিংবা টাইগারপাস-সিআরবির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। একেকটি শহর-জনপদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও লোকায়ত বৈশিষ্ট্য একেক রকম। গত পঞ্চাশ বছরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় ও বৃক্ষ কেটে কেটে চট্টগ্রামের সাধারণ বৈশিষ্ট্য, সৌন্দর্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট করে ফেলা হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তাও এখন হুমকির মুখে রয়েছে। শহরে অস্বাভাবিক পানিবদ্ধতা, বাতাসে ধূলিকণার অস্বাভাবিক মাত্রা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে শহরের পরিবেশগত নিরাপত্তার দিকটিকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম আকর্ষণ টাইগারপাস-সিআরবি সড়কের নিরাপত্তা, নান্দনিকতা, ঐতিহ্য ও পরিবেশগত ভারসাম্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প যারা ডিজাইন করে তাদের এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে, কিভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদ অক্ষুণœ রেখে উন্নয়ন করা যায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
![জাপানে রেকর্ড বৃষ্টিপাত, সরিয়ে নেওয়া হলো হাজারো মানুষকে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727085854.jpg)
জাপানে রেকর্ড বৃষ্টিপাত, সরিয়ে নেওয়া হলো হাজারো মানুষকে
জন্মভূমির বিপক্ষে মুরের ফিফটি, মাডান্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
![ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/4634-20240727032845.jpg)
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড
![পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও
![বেতাগী দরবারে ওরশ আজ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
বেতাগী দরবারে ওরশ আজ
![সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা
![কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে
![নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/5-20240726212443.jpg)
নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি
![বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726212448.jpg)
বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ
![শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726212737.jpg)
শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী
![মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213356.jpg)
মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড
![গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213707.jpg)
গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা
![নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213859.jpg)
নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ
![তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726222840.jpg)
তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’
![মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726214708.jpg)
মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
![সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি
![কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি
![কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/2-20240726211751.jpg)
কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে
![ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/1-20240726212504.jpg)
ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ
![দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/3-20240726211927.jpg)
দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা