জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থানের বিকল্প নেই

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ১০টি চুক্তি-সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২টি চুক্তি, ৫টি নতুন সমঝোতা ও ৩টি চুক্তির নবায়ন। এসব চুক্তি-সমঝোতায় বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হয়েছে, তা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এসব চুক্তির ফলে ভারতেরই শতভাগ স্বার্থ হাসিল হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি। এতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর নিয়ে কি করা উচিৎ ছিল, তা নিয়ে কথা বলেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতের সাথে চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছে। শুধু বিএনপিই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এসব চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা একে ‘গোলামীর চুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। গত বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অকপটে বলেছিলেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি, তা সে সারাজীবন মনে রাখবে।’ এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এ পর্যন্ত ভারতের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তাতে ভারতই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। অবশ্য দেশ বিক্রি প্রসঙ্গে ভারত সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা কখনো দেশ বিক্রি করে না।’

দুই.
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত দেড় দশকে ভারতের সাথে যত চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে, তাতে ভারতের স্বার্থই শতভাগ রক্ষিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও অভিমত ব্যক্ত করেছে। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। ট্রানজিটের নামে করিডোর, সড়ক, রেল, সমুদ্র ও নৌবন্দর ব্যবহার করতে দেয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একচেটিয়া সুযোগসহ ভারত যা চেয়েছে এবং আবদার করেছে, তার সবই সরকার বিনাবাক্যে দিয়েছে। সড়ক ও বন্দর দিয়ে মালামাল আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে যে মাশুল ধরা হয়েছে, তা নামমাত্র। আন্তর্জাতিক মানের মাশুল নির্ধারণ করা হয়নি। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করলে, সে সময় এক মন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের কাছ থেকে মাশুল চাওয়া লজ্জার বিষয়। অর্থাৎ বিনামাশুলেই ভারতকে সড়ক ও বন্দর ব্যবহার করতে দিলে ভালো হতো। অথচ ভারতের ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের ক্ষতি এবং তা মেরামতে যে খরচ হবে, তা মাশুলের চেয়ে অনেক বেশি। সড়ক ও বন্দর ব্যবহারকে শুরুতে আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি বলা হলেও পরবর্তীতে দেখা যায়, তা শুধু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি অঙ্গরাজ্যের সাথে যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। একে কানেক্টিভিটি না বলে বিশেষজ্ঞরা ‘করিডোর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত থেকে ভারতেই যাতায়াতের একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে শুধু ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ এবং শতভাগ লাভ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, কানেক্টিভিটির নামে দেশের মানুষের সাথে একধরনের কপটতা বা চালাকি করা হয়েছে। দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব চুক্তি করার আগে বা পরে জাতীয় সংসদে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। চুক্তিগুলো নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মতামত নেয়া হয়নি। জনগণকেও কোনো কিছু জানানো হয়নি। এই গোপন করার প্রবণতার মধ্যেই যে, বৈষম্য এবং ভারতের শতভাগ স্বার্থ রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারের মনোভাব এমন যে, চুক্তির পর আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক, তাতে কিছু যায় আসে না। কিছুদিন এ নিয়ে হইচই হবে, তারপর থেমে যাবে। এসব চুক্তির মাধ্যমে দেশের কোনো লাভ না হলেও লাভ হয়েছে ভারত ও আমাদের ক্ষমতাসীন দলের। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে ক্ষমতায় থাকার শতভাগ সমর্থন ও গ্যারান্টি পেয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত নির্বাচনের আগে বলেন, ভারতকে অনুরোধ করেছি, যাতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সহায়তা করে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ভারত একতরফাভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। গত নির্বাচনের পর ভারত এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা খোলাখুলিভাবেই তা বলেছেন। ফলে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার নিমিত্তে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ ক্ষমতাসীনদল তার সব স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। এর বিনিময়ে ভারত তার স্বার্থ আদায় করবে এটাই স্বাভাবিক। দেখা যাচ্ছে, সে যা চাইছে সরকার তাই দিয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে কিছু পাচ্ছে না। বাংলাদেশের চাহিদা তিস্তার চুক্তি বাস্তবায়ন এবং অভিন্ন নদ-নদীর পানির হিস্যা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বন্টন। ভারত তা দিতে নারাজ। নানা অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে। আবার বাংলাদেশের পানি সমস্যা সমাধানের জন্য নেয়া প্রকল্প গঙ্গা ব্যারেজ ও তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ ভারত সরাসরি আপত্তি জানানোয় স্থগিত হয়ে গেছে। চীন ১০০ কোটি ডলারে তিস্তা প্রকল্প নির্মাণে আগ্রহী হলেও ভারত নানাভাবে তা আটকানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, সীমান্তে বিএসএফ প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশীদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে। এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এ নিয়ে আমাদের সরকারও কোনো টুঁ শব্দ করছে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারত নির্ভরশীল করে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারকে ভারতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ভারতপন্থী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভারত থেকে আমদানির কৌশল নিয়েছে। সরকারও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে দাম কমানোর অজুহাত দেখিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করছে। বাংলাদেশে লাখ লাখ ভারতীয় বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত। বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারি দেশ। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ সবদিক দিয়ে ভারতের যা প্রয়োজন, তা সরকার বিনাবাক্যে দিচ্ছে এবং ভারত তা আদায় করে নিচ্ছে। এসব নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করলে, সরকার আগ বাড়িয়ে ভারতের পক্ষ হয়ে জবাব দেয়। গত ২৮ জুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ভারতের সেবাদাস বানানোর চক্রান্ত চলছে। তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকদের মত হচ্ছে, যে নিজেই অন্যের সেবাদাসে পরিণত হয়, তাকে নতুন করে সেবাদাসে পরিণত করার কিছু নেই।

তিন,
বাংলাদেশের সাথে যে দশটি এমওইউ ও চুক্তি হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, তাতে ভারতের স্বার্থই বেশি। এতে দেশের স্বার্থ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সমঝোতা ও চুক্তিগুলো হচ্ছে, ১. বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ। ২. ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গ্রিন পার্টনারশিপ। ৩. সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি। ৪. স্বাস্থ্য ও ওষুধসংক্রান্ত পুরোনো সমঝোতা নবায়ন। ৫. ভারতের ইন-¯েপস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা। ৬. দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা। ৭. সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা। ৮. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি, বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন। ৯. মৎস্য¤পদের উন্নয়নে বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন। ১০. কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতায় ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন-ইন্ডিয়া এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা। এসব সমঝোতা ও চুক্তির দিকে তাকালে বুঝতে অসুবিধা হয় না, তা ভারতেরই শতভাগ অনুকূলে এবং তার আধিপত্য থাকবে। আমরা যদি ডিজিটাল পার্টনারশিপের কথা ধরি, তাহলে এর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতেই থাকবে। আমাদের ডিজিটাল প্রক্রিয়া উন্নত করার সাথে রাষ্ট্রীয় অনেক গোপন তথ্য ও নীতি ভারতের পক্ষে জানা সহজ হয়ে যাবে। সমস্যা হলে তারই দ্বারস্থ হতে হবে। এই পার্টনারশিপের মাধ্যমে ভারত যে, প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই রাখবে, তা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ভারতের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন সমুদ্র সম্পদ আহরণে ‘ব্লু ইকোনোমি’র ওপর জোর দিয়েছে। তারা স্থল সম্পদ ক্রমেই ফুরিয়ে আসায় সমুদ্র সম্পদ আহরনের দিকে ছুটছে। মৎস্য, তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদে ভরপুর সমুদ্রে তারা নেমেছে। বলা হয়ে থাকে, আগামীর অর্থনীতি হবে সমুদ্রভিত্তিক। শুধু অর্থনীতিই নয়, সমুদ্র এখন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরাশক্তিগুলো সমুদ্র দখলে নেয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। ভারতের সাথে চুক্তির মাধ্যমে আমাদের সমুদ্রসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ উন্মুক্ত হবে। এর মাধ্যমে সে তার ইচ্ছামতো কার্যক্রম চালাতে পারবে। পাশাপাশি তার শত্রু দেশগুলোর উপরও নজরদারি করতে পারবে। রেল যোগাযোগ নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছে, তাকে কানেক্টিভিটি বলা হচ্ছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা একে ভারতের সাথে ভারতের যোগাযোগের করিডোর হিসেবেই দেখছেন। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এর সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ইউরোপের দেশগুলোতেও এ ধরনের কানেক্টিভিটি রয়েছে। এ ধরনের কথা দেশের মানুষকে বোকা ভাবার শামিল। কারণ, দেশের মানুষ জানে, ইউরোপের রেল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া হয়। এটা আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি। এক দেশ থেকে অন্যদেশের উপর দিয়ে সেই দেশে যাওয়ার করিডোর বা ব্যবস্থা নয়। অন্যদিকে, সামরিক সহযোগিতার যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে ভারত কী সহযোগিতা দেবে, তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। এতদিন, সামরিক খাতে বেশিরভাগ সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অন্যান্য দেশের মাধ্যমেই বেশি হয়েছে। অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও সরঞ্জামাদি সরবরাহের দিক থেকে চীন এগিয়ে। এখন ভারত সেখানে সমঝোতার মাধ্যমে পাকাপাকিভাবে ঢুকবে। অর্থাৎ এসব চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সবকিছুতেই তার প্রবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। আধিপত্যবাদী একটি দেশের সাথে যদি তার অনুকূলে এত সমঝোতা ও চুক্তি হয় তাহলে, আমাদের অবস্থান কোথায়, তা বুঝতে বাকি থাকে না। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়, আমাদের এই পররাষ্ট্র নীতির ভারসাম্য বলে কিছু থাকছে না। একটি দেশকে সবদিক থেকে প্রাধান্য ও সুযোগ দিয়ে আমাদের দেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা যে বিরোধিতা করছে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার কথা বলছে, তা কি এমনি এমনি করছে, বা না বুঝে বলছে?

চার.
দেশের মানুষ ভালোভাবেই জানে, ভারতের সাথে চুক্তি মানেই তাতে তার আধিপত্য থাকবে। অতীতের সবচুক্তিতেই ভারতের আধিপত্য দেখা গেছে। এমনকি, চুক্তিতে যা আছে, তার বাইরে গিয়েও ভারত তা বাস্তবায়ন করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। চুক্তিতে শুরুতে সড়ক পথে যে মাশুলের কথা বলা হয়েছে, ভারতের কথায় তা অনেক কমিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একটি দেশের সরকার যদি আধিপত্যবাদী কোনো দেশের প্রতি শতভাগ ঝুঁকে থাকে, তাহলে সে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক। এমনিতেই ভারতের ক্ষমতাসীনদলের নেতা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক নেতারা আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আসছে। ‘একাত্তুরেই বাংলাদেশ দখল করে নেয়া উচিৎ ছিল’ এমন মন্তব্যও করেছে। ভারতের নেতা ও ব্যক্তিদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে করা মন্তব্যের কোনো ধরনের প্রতিবাদ সরকার করেনি। কেন করেনি, তার উত্তর সকলেরই জানা। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশকে নিয়ে চীনের বিপুল আগ্রহ রয়েছে। চীন এখন বাংলাদেশের প্রধানতম বাণিজ্যিক অংশীদার। অন্যদিকে, ভারতের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ চীন। ফলে বাংলাদেশের সাথে সব সেক্টরে চুক্তি ও সমঝোতা করে ভারত প্রকারন্তরে ‘চীন ঠেকাও’ নীতি এবং নিজের পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার ভারতকে সবদিক দিয়ে তুষ্ট রেখে চীনের সাথে শুধু ‘ক্রেতা-গ্রাহক’ সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি অবলম্বন করেছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, দেশের মানুষ চায়, ভারতের সাথে যেসব স্বার্থবিরোধী চুক্তি হয়েছে এবং তা নিয়ে প্রধান বিরোধীদলসহ অন্যান্য দল যে বিরোধিতা করছে, তাদের রাজনীতির মূল ফোকাস এতেই নিবদ্ধ থাকুক। এ নিয়েই তাদের রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে হবে। কিছুদিন এ নিয়ে কথা বলে বা লিপ সার্ভিস দিয়ে থেমে গেলে হবে না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের জোরালো ভূমিকা এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া দেশবাসী প্রত্যাশা করে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লিডেন র‌্যাঙ্কিংয়ে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ইরান

লিডেন র‌্যাঙ্কিংয়ে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ইরান

কসবায় বিদ্যুৎস্পর্শে ক্রেন চালক ও সহযোগির মৃত্যু

কসবায় বিদ্যুৎস্পর্শে ক্রেন চালক ও সহযোগির মৃত্যু

মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিজরি সন : প্রেসিডেন্ট

মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিজরি সন : প্রেসিডেন্ট

সাংবাদিকদের সকল মিথ্যা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর

সাংবাদিকদের সকল মিথ্যা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর

নেত্রকোনার পূর্বধলায় ৬০ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক

নেত্রকোনার পূর্বধলায় ৬০ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক

প্রতিবেশীদের কাছে প্রযুক্তিগত-প্রকৌশ পরিষেবা রপ্তানি বাড়িয়েছে ইরান

প্রতিবেশীদের কাছে প্রযুক্তিগত-প্রকৌশ পরিষেবা রপ্তানি বাড়িয়েছে ইরান

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ২২ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য হলেন আর স্যাম কার্লিং

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ২২ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য হলেন আর স্যাম কার্লিং

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

দেশের বাজারে বেড়েছে  স্বর্ণের দাম

দেশের বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হবে : বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী

মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হবে : বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে : পরিবেশমন্ত্রী

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে : পরিবেশমন্ত্রী

বিতির নামাজে কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা দেওয়া প্রসঙ্গে।

বিতির নামাজে কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা দেওয়া প্রসঙ্গে।

চাল আমদানি নয় ভবিষ্যতে আমরা রপ্তানি করবো : খাদ্যমন্ত্রী

চাল আমদানি নয় ভবিষ্যতে আমরা রপ্তানি করবো : খাদ্যমন্ত্রী

দ: কোরিয়া বাংলাদেশে ‘দক্ষ কর্মী’ গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা দিবে

দ: কোরিয়া বাংলাদেশে ‘দক্ষ কর্মী’ গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা দিবে

দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার: রেলমন্ত্রী

দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার: রেলমন্ত্রী

বেপজা পরিদর্শন চীনা টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদলের

বেপজা পরিদর্শন চীনা টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদলের

জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে

জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে

এক দফা দাবিতে চলবে কোটা সংস্কার আন্দোলন, কর্মসূচি ঘোষণা

এক দফা দাবিতে চলবে কোটা সংস্কার আন্দোলন, কর্মসূচি ঘোষণা