কর্পোরেট মুনাফাবাজিতে মানুষের ত্রাহিদশা

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন নেই। বেকারত্বের হার বাড়ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা এবং রেমিটেন্স প্রবাহ মন্থর হয়ে পড়লেও বৈদেশিক ঋণের চাপ প্রবল। এমতাবস্থায় ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির ধকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ায় সর্বত্র এর প্রভাব পড়ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য ও নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খাদ্য চাহিদার পুরোটা পুরণ করতে পারছে না। তারা মাছ-গোশতসহ প্রোটিনের চাহিদা পুরণ দূরের কথা তিনবেলা খাদ্য সংস্থানেও হিমশিম খাচ্ছে। একইভাবে সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসার খরচ যোগাতে পারছে না। আয় কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দিশাহীন হয়ে পড়েছে তারা। এর নেপথ্যে রয়েছে বাজারের উপর কতিপয় কর্পোরেট কনজ্যুমার কোম্পানির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। এই নিয়ন্ত্রণ এতটাই প্রবল যে, এ থেকে মুক্তি অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এদের বিরুদ্ধে সরকারও তেমন কিছুই করতে পারছে না।

বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সাধারণভাবে তথাকথিত সিন্ডিকেটের কথা বলা হলেও এটি ইতিমধ্যে একটি হাইপোথেটিক্যাল টার্মে পরিনত হয়েছে। আদতে এর পেছনে কাজ করছে কর্পোরেট বাণিজ্যে প্রতিনিধিত্বশীল কতিপয় বড় কোম্পানি। মুক্ত বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে বিগত ১৫ বছর ধরে এসব কর্পোরেট কোম্পানি দেশের নিত্যপণ্যের বাজারকে যথেচ্ছভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফাবাজি করে চলেছে। নিত্যপণ্যের বল্গাহীন ও অযৌক্তিক উল্লম্ফনে বিক্ষুব্ধ হয়ে কখনো কখনো সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গেলেও সরকারের আমলা-মন্ত্রীদের কণ্ঠে এক ধরনের অসহায়ত্ব দেখা গেছে। বিগত সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তব্যে তেমন এক অসহায়ত্ব ধরা পড়েছিল। প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীদলের নেতা জিএম কাদের বলেছিলেন, প্রমাণ হয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে আরেকটি একতরফা নির্বাচনে সরকারের নবায়ন ঘটলেও কর্পোরেট মুনাফাবাজির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। নির্বাচনের আগে কোনো প্রকার রাখঢাক ছাড়াই দেশের শীর্ষ কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনতে সম্ভাব্য সবকিছু করার প্রত্যয় ঘোষনা করেছিলেন। দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা জম্মেছে যে, সরকার বাজারের নিয়ন্ত্রণ এসব কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।

সরকারের আমলা, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের গুপ্ত ভান্ডার একে একে বেরিয়ে আসছে। তবে কারসাজি করে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে জনগণের পকেট থেকে লুটে নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকার কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের যাঁতাকলে নিস্পেষিত হয়ে লাখ লাখ মধ্যবিত্ত পরিবার ইতিমধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও চাহিদার সাথে বাজারের মূল্যের কোনো সঙ্গতি নেই। চলতি বছর দেশে যে পরিমান আলু উৎপাদিত হয়েছে তা দিয়ে বছরের চাহিদা পুরণ হওয়া সম্ভব। গত বছর এ সময়ের ২৫-৩০ টাকার আলু এখন ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মুক্তবাজার, বিশ্ববাজার ইত্যাদি দোহাই দিয়ে মূল্য বাড়ানো হলেও প্রতিবেশি দেশের কলকাতায় এখন আলুর দাম সর্বোচ্চ ২৫টাকা কেজি। একই অবস্থা চাল, ডাল, পেঁয়াজ-রসুন, তেলÑচিনির ক্ষেত্রেও। প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তাতে ঢাকার একজন রিক্সাওয়ালাও মনে করছে, যে সব ব্যবসায়ীরা এই সরকারকে ক্ষমতায় আনতে কাজ করেছিল, বাজারের লাগাম সরকার তাদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। রিক্সা চালকসহ নি¤œ আয়ের মানুষকেও এখন মূল্যস্ফীতি ও ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে সরকারের অনেক অর্জন রয়েছে। অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বেশকিছু মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। এসব উন্নয়নের সুফল তখনই বোঝা যাবে, যখন প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে, ভোক্তারাও ন্যায্যমূল্যে নিজেদের চাহিদা পুরণ করতে পারবে। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি ও মুনাফাবাজি বন্ধ করতে না পারার কোনো কারণ নেই। বাজারের উপর কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। কতিপয় কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেটের কাছে জনগণের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে সরকারের কঠোর অবস্থান দেখতে চায় দেশের মানুষ।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভূরুঙ্গামারীতে মুরগির বিষ্ঠা বাড়ির সামনে ফেলায় এক নারীকে পিটিয়ে হত‍্যা

ভূরুঙ্গামারীতে মুরগির বিষ্ঠা বাড়ির সামনে ফেলায় এক নারীকে পিটিয়ে হত‍্যা

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৭০ বোতল স্কফ সিরাপ জব্দ

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৭০ বোতল স্কফ সিরাপ জব্দ

ইউরোর সেমিফাইনাল : কবে,কে কার মুখোমুখি?

ইউরোর সেমিফাইনাল : কবে,কে কার মুখোমুখি?

লিডেন র‌্যাঙ্কিংয়ে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ইরান

লিডেন র‌্যাঙ্কিংয়ে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ইরান

কসবায় বিদ্যুৎস্পর্শে ক্রেন চালক ও সহযোগির মৃত্যু

কসবায় বিদ্যুৎস্পর্শে ক্রেন চালক ও সহযোগির মৃত্যু

মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিজরি সন : প্রেসিডেন্ট

মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিজরি সন : প্রেসিডেন্ট

সাংবাদিকদের সকল মিথ্যা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর

সাংবাদিকদের সকল মিথ্যা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর

নেত্রকোনার পূর্বধলায় ৬০ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক

নেত্রকোনার পূর্বধলায় ৬০ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক

প্রতিবেশীদের কাছে প্রযুক্তিগত-প্রকৌশ পরিষেবা রপ্তানি বাড়িয়েছে ইরান

প্রতিবেশীদের কাছে প্রযুক্তিগত-প্রকৌশ পরিষেবা রপ্তানি বাড়িয়েছে ইরান

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ২২ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য হলেন আর স্যাম কার্লিং

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ২২ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য হলেন আর স্যাম কার্লিং

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

দেশের বাজারে বেড়েছে  স্বর্ণের দাম

দেশের বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হবে : বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী

মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হবে : বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে : পরিবেশমন্ত্রী

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে : পরিবেশমন্ত্রী

বিতির নামাজে কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা দেওয়া প্রসঙ্গে।

বিতির নামাজে কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা দেওয়া প্রসঙ্গে।

চাল আমদানি নয় ভবিষ্যতে আমরা রপ্তানি করবো : খাদ্যমন্ত্রী

চাল আমদানি নয় ভবিষ্যতে আমরা রপ্তানি করবো : খাদ্যমন্ত্রী

দ: কোরিয়া বাংলাদেশে ‘দক্ষ কর্মী’ গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা দিবে

দ: কোরিয়া বাংলাদেশে ‘দক্ষ কর্মী’ গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা দিবে

দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার: রেলমন্ত্রী

দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার: রেলমন্ত্রী