ঢাকা   রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২২ আশ্বিন ১৪৩১

চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলনে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ এএম

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে গত শনিবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে সমাবেশ করেছে আন্দোলনকারীরা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর মোতাবেক, বেলা দেড়টা নাগাদ সেখানে শত শত মানুষ জমায়েত হয়। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীসাধারণ অশেষ ভোগান্তির শিকার হয়। আন্দোলনকারীরা অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করে দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানায়। অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিটি গঠন করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। দাবি মেনে নেয়ার নিশ্চয়তা দিলে তারা আন্দোলন-কর্মসূচি থামাবে, না হলে চলবে বলে জানিয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত মে মাসের দিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন সূচিত হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, পতিত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্ররোচনায় এ আন্দোলন সংগঠিত হয়। পরে সরকারি তরফে বলা হয়, এটা নীতি নির্ধারণী বিষয়। প্রধানমন্ত্রীই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পাঠানো হয়েছে। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রীর বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছরই থাকবে। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের এক মন্ত্রীর প্ররোচিত দাবি, যা ওই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রত্যাখ্যাত, তা নতুন করে শাহবাগে দাখিল হলো কীভাবে, সেটাই প্রশ্ন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পতিত স্বৈরাচারের মদদেই এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। ধিকৃত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা আন্দোলনের মূল হোতা। সাধারণ শিক্ষার্থী বা চাকরি প্রত্যাশীদের তারাই সংগঠিত করেছে, প্রতারিত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী এ ব্যাপারে ইতিবাচক। সরকারের পক্ষে আলাপ-আলোচনার প্রস্তাব তার প্রমাণ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা আলাপ-আলোচনার আগেই দাবি মেনে নেয়ার নিশ্চয়তা চায়। এ থেকে বুঝা যায়, দাবির যৌক্তিক পরিণতি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য নয়। তাদের লক্ষ্য অন্য কিছু। সরকারকে বিব্রত ও বিপদে ফেলাই তাদের উদ্দেশ্য।

পতিত স্বৈরাচারের এদেশীয় ও বিদেশীয় চরেরা শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেবার জন্য নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। হঠাৎ দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের যে ঢেউ উঠেছে, তার পেছনে তাদের হাত সক্রিয় রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে কত রকমের দাবি-দাওয়া ও আন্দোলন যে চলছে, তার ইয়ত্তা নেই। এর মধ্যে আনসাররা দাবি-দাওয়ার নামে বিদ্রোহ সংঘটনের উদ্যোগ নিয়েছিল, যা ছাত্র-জনতা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অসিলা করে শাহবাগে সমবেশ-বিক্ষোভ হয়েছিল কয়েকদিন। আপনা আপনিই সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এদেশের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ এ চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়। এর মধ্যেই আবার শাহবাগ হিন্দুদের সমাবেশ হয়েছে ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ যে মিথ্যা এবং সামান্য যা কিছু হয়েছে, তা যে রাজনৈতিক কারণে হয়েছে, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণ হিন্দুরা বলতে গেলে কোথাও পীড়ন ও ক্ষতির শিকার হয়নি। দেশের জনগণ ও সরকার সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতার ও দায়িত্বসচেতন। অবশ্যই সরকারের তরফে ক্ষতি ও বিচারের দিকটি দেখা হবে। এজন্য সরকারকে সময় দিতে হবে। তা না দিয়ে ফের একই ইস্যুতে সমাবেশ-বিক্ষোভ উদ্দেশ্যমূলক সন্দেহ নেই। এরকম নানাভাবে সরকারের দায়িত্বপালন বাধাগ্রস্ত করা কিংবা কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার দাবি-দাওয়া ও আন্দোলন-সংগ্রামের নামে গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে অবস্থান, সমাবেশ, বিক্ষোভ কিংবা রাস্তাঘাট অবরোধ না করার কথা বলেছে। অনুরোধ করেছে, যার যা দাবি-দাওয়া, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে পেশ করতে। সরকার তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে, এ আশ্বাসও দিয়েছে। তারপরও দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের বহর বাড়ছে কেন? এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পতিত স্বৈরাচারের চর-অনুচর-দোসররা থেমে নেই। তাদের কঠোর হাতে দমন করার বিকল্প নেই।

‘৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র নামে যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার আন্দোলন করছে, তাদের মধ্যে কতজন শিক্ষার্থী আর কতজন শিক্ষার্থী নয়, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আনসারদের মধ্যে যখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ থাকে, সংখ্যালঘুদের সমাবেশে যখন সংখ্যালঘু নয়, এমন ছাত্রলীগ-যুবলীগ থাকে, গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যেও তারা থাকে, তখন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার আন্দোলন যারা করছে তাদের মধ্যেও থাকতে পারে। আরও প্রমাণ, এ আন্দোলন পতিত স্বৈরাচারের আমলে শুরু হয়েছিল। নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছর থাকাটাই অধিকতর যুক্তিসংগত। একজন শিক্ষার্থী তার সর্বোচ্চ লেখাপড়া শেষ করতে পারে ২২ বছর বয়সে। তারপরে তার হাতে থাকে ৮ বছর। এই ৮ বছর সরকারি চাকরি খোঁজার ও পাওয়ার জন্য যথেষ্ট। যাদের এই ৮ বছরে সরকারি চাকরি হয় না, তাদের আরো ৫ বছরে হবে, তার নিশ্চয়তা কী? শরীরবিজ্ঞান অনুযায়ী, ২৫ বছর পর্যন্ত মানুষের উত্থানের সময়। ২৫-এর পরে অবনতিকাল। ৩৫ বছরে তো মানুষ প্রায় বুড়ো হয়ে যায়। এ সময় কী তার কাজ করার পূর্ণ সক্ষমতা থাকে? পূর্ণ যুবকত্ব ২০ থেকে ২৫ বছরেই আসে। এসময় কেউ চাকরি বা কাজ পেলে সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা বা কর্মক্ষমতা উজাড় করে দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর হলেও অনেক যুবক চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। তাদের জীবন-যৌবন সবকিছুই ধোঁয়াশায় নিমজ্জিত হবে। দেশে যুবশক্তি কয়েক কোটি। তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ বেকার। তাদের প্রত্যেকের কর্মসংস্থান জরুরি। এই বিবেচনা সামনে রেখে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৃদ্ধি আবশ্যক এবং জরুরি। তাই, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ালেই কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান হবে না। আন্দোলনে যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী শামিল হয়েছে, তাদের এটা ভালো করে বুঝতে হবে। এও বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেশনজট মারাত্মকরূপে বিদ্যমান। সেশনজট না থাকলে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ পরীক্ষায় ২২ বছরে উত্তীর্ণ হতে পারে। সেশনজট কমানোর ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা দাবি জানাতে পারে, সেটা অধিকতর ন্যায্য ও যৌক্তিক। যেহেতু এ আন্দোলনের পেছনে সরকারকে বিপাকে ফেলার বা ব্যতিব্যস্ত করার অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে প্রতীয়মান, কাজেই সরকারকে এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বরিশালের ‘শাপলা বিল’ ভ্রমনে চীনা পর্যটক

বরিশালের ‘শাপলা বিল’ ভ্রমনে চীনা পর্যটক

মধ্যপ্রাচ্যে কত সেনা মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র?মধ্যপ্রাচ্যে কত সেনা মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র?

মধ্যপ্রাচ্যে কত সেনা মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র?মধ্যপ্রাচ্যে কত সেনা মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র?

তারেক রহমানের সব মামলা আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে : কায়সার কামাল

তারেক রহমানের সব মামলা আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে : কায়সার কামাল

২১ বছরের সম্পর্ক, হঠাৎ একদিন ব্রেকআপের কথা জানান রীতেশ

২১ বছরের সম্পর্ক, হঠাৎ একদিন ব্রেকআপের কথা জানান রীতেশ

জনপ্রিয় র‍্যাপারের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

জনপ্রিয় র‍্যাপারের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

কলাপাড়ায় নানির সাথে ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল সাংবাদিক পুত্র।

কলাপাড়ায় নানির সাথে ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল সাংবাদিক পুত্র।

নরওয়ে-সুইডেনসহ ৩ দেশের কূটনৈতিকদের সাথে বিএনপির বৈঠক

নরওয়ে-সুইডেনসহ ৩ দেশের কূটনৈতিকদের সাথে বিএনপির বৈঠক

ডিভোর্সের শুনানি চলাকালে বউকে কাঁধে নিয়ে পালানোর চেষ্টা স্বামীর

ডিভোর্সের শুনানি চলাকালে বউকে কাঁধে নিয়ে পালানোর চেষ্টা স্বামীর

মুন্সীগঞ্জে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন

মুন্সীগঞ্জে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন

‘ইসলামপন্থীদের ফাঁদে ফেলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে’

‘ইসলামপন্থীদের ফাঁদে ফেলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে’

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম হামলা: নেতানিয়াহু

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম হামলা: নেতানিয়াহু

সিলেটের ১২ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় ক্রীম সহ একটি প্রাইভেটকার আটক : পুলিশের মামলা

সিলেটের ১২ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় ক্রীম সহ একটি প্রাইভেটকার আটক : পুলিশের মামলা

উত্তাল পাকিস্তান ইমরান খানের মুক্তির দাবি

উত্তাল পাকিস্তান ইমরান খানের মুক্তির দাবি

আনারসের পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন শৌখিন পণ্য

আনারসের পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন শৌখিন পণ্য

গাজা যুদ্ধের বছর পূর্তিতে বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ

গাজা যুদ্ধের বছর পূর্তিতে বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ

এমিরেটস এয়ারলাইন্সে ব্যবহার করা যাবে না পেজার ও ওয়াকিটকি!

এমিরেটস এয়ারলাইন্সে ব্যবহার করা যাবে না পেজার ও ওয়াকিটকি!

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানে বিক্ষোভ

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানে বিক্ষোভ

বাজার সিন্ডিকেটবাজদের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর হুঁশিয়ারি

বাজার সিন্ডিকেটবাজদের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর হুঁশিয়ারি

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ইতিহাস! বিনা খরচে জন্মাল টেস্ট টিউব বেবি

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ইতিহাস! বিনা খরচে জন্মাল টেস্ট টিউব বেবি