সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র

Daily Inqilab ইনকিলাব

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর বিপুল সমর্থন নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দায়িত্ব গ্রহণ করেই এ সরকার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রেখে যাওয়া থেকে দেশকে উদ্ধার এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তাকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করার জন্য পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও মোদির নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অজুহাত, জুডিশিয়ারি ক্যু, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আন্দোলন, আনসার আন্দোলন, পুলিশের অসহযোগিতাসহ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর রোকেয়া প্রাচীসহ কিছু উচ্ছিষ্টভোগীর উসকানিমূলক কথাবার্তা সরকারকে অস্থিতিশীল ও ব্যর্থ করার অপচেষ্টার অংশ ছাড়া কিছু নয়। অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছে। নতুন করে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে মোটর সাইকেল চুরির মতো সামান্য ঘটনাকে পুঁজি করে সংঘাত-সংঘর্ষের মাধ্যমে পাহাড় অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে। এর পেছনেও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সংঘাত ও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গত ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের তিন চাকমা নেতা সুহাস চাকমা, নিরুপমা চাকমা ও রাসিক মোহন চাকমা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তারা উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে নরেন্দ্র মোদি যাতে কোনো সংলাপ ও বৈঠক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন না করে সে আহ্বানও জানিয়েছেন। এ চিঠির মাধ্যমে কার্যত অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান করা হয়েছে।

সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা ও বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই, সকলেই বাংলাদেশী। একই কথা দেশের উপজাতিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে সবসময়ই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চাকমাসহ বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজনকে রাষ্ট্রের সর্বত্র সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তারা সমধিক মর্যাদায় কর্মরত। ইতোমধ্যে উপজাতিদের শিক্ষার হার যেমন বেড়েছে, তেমনি জীবনমানেরও উন্নতি হয়েছে। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় তারা একপ্রকার বেহেশতে রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তারপরও কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় এবং তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রবণতা রয়েছে। এর পেছনে যে ভারতের উসকানি ও ইন্ধন রয়েছে, তা কারো অজানা নেই। অথচ ভারতের মনিপুরে কী হচ্ছে? ভারতে মুসলমানদের স্ট্যাটাস কি? তারা কতটা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে? কিভাবে তারা নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে? কিভাবে মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘর ও ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে? এসব বিষয়ে কি মোদি সরকার আমলে নিয়েছে? নেয়নি, নিচ্ছে না। উল্টো আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে মায়াকান্না করছে। যে চাকমা নেতারা মোদিকে চিঠি দিয়েছেন, তারা কি তা দেখছেন না? যারা পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছে, তাদেরও এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ঘটনাকে পুঁজি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে মোদির বৈঠক ও সংলাপ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন না করার আহ্বান ভয়াবহ উসকানির নামান্তর। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনার পেছনে যে, পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের চক্রান্ত রয়েছে, সেটা পাবর্ত্যবাসীকে বুঝতে হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এক্ষেত্রে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের ব্যর্থতা রয়েছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু করেনি বা করতে পারেনি। পুরো সিভিল প্রশাসনে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এখনো বিভিন্ন জেলায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, হয় তিনি স্বৈরাচারের দোসরদের হয়ে কাজ করছেন, না হয় তার যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। তার নিয়োগকে তারা এখন ভুল বলে মনে করছেন। পর্যবেক্ষকরা উদ্ভুত সংঘাতের ঘটনায় সেনাবাহিনীর ব্যর্থতাও দেখছেন। তাদের যুক্তি, সামান্য ঘটনা এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল কেন? এটা যে পরিকল্পিত, সেটা বোঝা যায়। সেনা গোয়েন্দারা এটা আগে বুঝতে পারল না কেন? কেন আগাম কোনো তথ্য দিতে পারল না? গণঅভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার প্রভু মোদি যে অর্ন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে এবং তা চলমান রাখবে, তা জানা কথা। ইতোমধ্যে তা হয়েছে এবং আগামীতেও হবে তা ধরে নেয়া যায়। এ বিষয় মাথায় রেখেই অন্তর্বর্তী সরকারের সকল উপদেষ্টাকে সতর্ক ও সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের উপজাতি থেকে শুরু করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দল ও সচেতন মহলকেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশকে সমৃদ্ধির মাধ্যমে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আমরা দেখেছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো অকুণ্ঠ সমর্থন ও অভিনন্দন জানিয়েছে। তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে কাজ করতে এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সহযোগিতা করতে মুখিয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে পরাশক্তিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সাহায্য-সহযোগিতার অফুরন্ত ভা-ার নিয়ে হাজির হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএসডিবি, ইউএসএইড, জাইকা, আইএমএফসহ অন্যান্য সংস্থা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা দিচ্ছে। অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। সোনালী দরজা খুলে গেছে। এসব আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহযোগিতা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও মোদির ভাল লাগার কথা নয়। ভারত কখনোই চায় না, বাংলাদেশ বিশ্বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। ফলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি পুরো বিশ্বের একাত্মতা ঘোষণা তার মর্মপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে তো চাইবেই ড. ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যাতে সফল না হয়। এজন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এ সরকারকে সরিয়ে দেয়ার জন্য ‘অল আউট’ চক্রান্তে নেমেছে। এতে যে ভারতের কল্যাণ হবে, তা মনে করার কারণ নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেয়ার আগেই প্যারিস থেকে ভারতের একটি চ্যানেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সরাসরিই বলেছেন, বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে, তার সেভেন সিস্টার্সেও এর প্রভাব পড়বে। তাঁর এই দৃঢ় বক্তব্য থেকেই ভারতের বোঝা উচিৎ, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে সাথে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেই ফায়দা হবে না। তার এটাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জাগ্রত জনতা সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়ার শক্তি ও সামর্থ্য রাখে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে

প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ

মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু

জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি