ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২ আশ্বিন ১৪৩১

ফ্যাসিবাদের ধারক-বাহক মিডিয়া সংস্কার করা জরুরি

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তার দল আওয়ামী লীগ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, খুন, গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকা-, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সর্বশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘গণহত্যা’ চালিয়ে এখন গণধিকৃত একটি দলে পরিণত হয়েছে। আগেই অনুমান করা হয়েছিল, কোনো সময় যদি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়, তখন দেশের একমাত্র বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপিকেই দেখা যাবে। বাস্তবেও হয়েছে তাই। অথচ দলটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য কী না করা হয়েছে। একজন সাধারণ মানুষও জানে, হাসিনামুক্ত দেশে যখনই জাতীয় নির্বাচন হোক না কেন, বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার চিরকাল থাকবে না। রাজনৈতিক দলই দেশ পরিচালনা করবে। সেই সম্ভাব্য দল বিএনপি। জরিপ না করেও চোখবন্ধ করে বলে দেয়া যায়, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় যাবে। তবে বিএনপি যাতে ক্ষমতায় যেতে না পারে, সেজন্য এখন থেকেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্র চোখে দেখা যায় না, তবে আলামত দেখে বোঝা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু আলামত দেখা গেছে। যেমন, ভারতের সেবাদাস কিংবা তথাকথিত সুশীল হিসেবে পরিচিত হাতেগোনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান (এসব প্রতিষ্ঠানের নাম সাধারণ মানুষ জানে না) ইতোমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের দোসর হয়ে তা প্রচার করছে ভারত ও হাসিনার রেখে যাওয়া দালাল মিডিয়া। তারা জরিপের নামে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে দেখাতে চাচ্ছে, বিএনপি’র প্রতি মানুষের জনসমর্থন অতি নি¤œ। কৌশল হিসেবে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি ধরে বিএনপির জনপ্রিয়তা নাই এমন একটি বয়ান তুলে ধরছে। খুবই স্বাভাবিক বিষয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এগিয়ে থাকবে। আবার এটাও সত্য, একসময় সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাকে চলে যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্য উপদেষ্টারাও শুরু থেকে এ কথা বলে আসছেন। ফলে যে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনে বিএনপিরই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ বাস্তবতা ভারত ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর কিছু ব্যক্তি, বিশেষ করে তার দালাল মিডিয়া তা কিছুতেই মানতে পারছে না। তারা কীভাবে বিএনপিকে হেয় করা যায়, টেনে ধরা যায়, তার ক্ষমতায় যাওয়ার পথে কাঁটা বিছিয়ে দেয়া যায়, এখন থেকেই সে অপচেষ্টা শুরু করেছে। তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে দেশ যে বিভৎস ও ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল, তা তুলে ধরছে না। বরং তা এড়িয়ে এখন বিএনপি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করেছে। তারা শেখ হাসিনার শাসনামলের গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, খুন, গুম, বিচারহীনতা, বিচারবর্হিভূত হত্যাকা-, বিনাভোটের নির্বাচন, মানুষের ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ, দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দেয়া, অর্থপাচার, এন্তার দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে সাধারণ মানুষের মতামত তুলে ধরার কোনো ধরনের জরিপ কিংবা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে মানুষ খুশি কিনা, এ নিয়েও কোনো জরিপ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। এসব পাশ কাটিয়ে অতি কৌশলে তারা বিএনপিকে টার্গেট করেছে। কোনো অঘটন ঘটলেই যেমন ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার দায় বিএনপির উপর চাপিয়ে দিত, ‘এসকেপ গোটে’ পরিনত করত এবং তার দোসর মিডিয়াও সমস্বরে তা প্রচার করত, এখন সেসব মিডিয়া চাতুরতার মাধ্যমে বিএনপিকে হেয় করার মিশন নিয়ে নেমেছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, এটা যেন তারা ভাবতেই পারছে না। এ চিন্তায় যেন তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভারত ও হাসিনার দাসে পরিণত হওয়া তথাকথিত সুশীল ব্যক্তি ও অখ্যাত ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান অন্তর্জ্বালা মেটানোর জন্য বাস্তবতা বিবর্জিত জরিপ করে বিএনপির জনপ্রিয়তা কম দেখিয়ে সান্ত¦না পাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা হাসিনার কথিত ‘আমি ক্ষমতায় থাকতে না পারি, বিএনপি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে’ এ নীতি বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি কি তাদের কোনো ক্ষতি করেছে? তাদের বাড়াভাতে কি ছাই দিয়েছে? জনগণের ভোটে তাদের প্রভু ভারতের দালাল আওয়ামী লীগ যে নিকট ভবিষ্যত তো বটেই দূর ভবিষ্যতেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এ বাস্তবতা মানতে পারছে না কেন? তাহলে তারা কি চায়? কাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়?

দুই.
যেসব ভুয়া ও ভিত্তিহীন প্রতিষ্ঠান জরিপ করছে এবং তা ভারত ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সেবায় আত্মনিবেদিত পত্রিকা ও মিডিয়া প্রকাশ করছে, তারা কোনো কালেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক তা চায়নি। আমরা ওয়ান ইলেভেনের সময় দেখেছি, একটি তথাকথিত প্রগতিশীল বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক কীভাবে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়নে কাজ করেছিল। বাংলা দৈনিকটির সম্পাদক স্বয়ং প্রথম পাতায় এ নিয়ে বিশাল মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু দলছুট নেতাদের নিয়ে সংস্কারের নামে আলাদাভাবে দল গঠনে উৎসাহিত করেছিলেন। দেশকে বিরাজনীতিকরণের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রচলিত রয়েছে, সে সময় ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এ দুটি পত্রিকা অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। মূলত এ দুটি পত্রিকা নিজেদের নিরপেক্ষ বা সুশীল সমাজের ধারক-বাহকের মুখোশ পরে এখনো ভারতেরই এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে। তাদের সাথে এখন শেখ হাসিনার সৃষ্ট দালাল পত্রপত্রিকা ও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল যুক্ত হয়েছে। ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে যেন তাদের মাথায় ‘বাজ’ পড়েছে। দিশাহারা হয়ে গেছে। শুধু তাদের মাথায় ‘বাজ’ পড়েনি, তাদের প্রভু ভারতের মাথায়ও পড়েছে। ভারতের আচরণ এখন এমন হয়ে পড়েছে, যেন হাসিনার পতনে বাংলাদেশে তার পতন হয়েছে। হাসিনামিডিয়া ও ভারত তা কিছুতেই মানতে পারছে না। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে সেটাই সে প্রমাণ করেছে এবং গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, মোদির কোলে বসে থাকা ভারতের মিডিয়া যাকে ‘গোদি মিডিয়া’ বলা হয়, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যালঘু হিন্দুদের অত্যাচার-নির্যাতন, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনাকে পুঁজি করে একের পর এক মিথ্যা ও উসকানিমূলক সংবাদ প্রকাশ করেছে এবং করছে। এসব সংবাদ যে মিথ্যা, তা বিবিসি বাংলা ও ‘ফ্যাক্ট চেক’ প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশে ‘হাসিনামিডিয়া’ হিসেবে পরিচিত পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলো হাসিনার পতনে যেন ‘হতভম্ব’ হয়ে পড়েছে। তাদের আচরণে বোঝা যায়, তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে বিমর্ষ, বিমূঢ় এবং একধরনের ট্রমার মধ্যে রয়েছে। তা থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারছে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাজার মানুষের বেশি শহীদ হওয়া এবং ২০ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়ে পঙ্গু ও অন্ধ হয়ে যাওয়া তাদের বিবেককে স্পর্শ করছে না। এখানে তাদের মানবিকতা অন্ধ ও বধির হয়ে রয়েছে। তা নাহলে, ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থান যাকে ‘স্প্রিং রেইন’ বা ‘বর্ষা বসন্ত’ বলা হয়, তা নিয়ে তারা নীরব কেন? এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’কে কেন ‘গ্লোরিফাই’ করছে না? বলা বাহুল্য, যেসব দেশে বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, সেসব দেশের কোনো কোনোটিতে প্রতিবিপ্লব হয়েছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর এ ধরনের প্রতিবিপ্লব, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রশাসন, আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার নামে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দিয়ে সচিবালয়ে আন্দোলন, পুলিশের আন্দোলন ও কাজে যোগদান না করা, জুডিশিয়ারি ক্যু, ১৫ আগস্ট ঢাকায় পতিত আওয়ামী লীগের ১০ লাখ লোক জড়ো করে সরকার পতনের চক্রান্ত, আনসার বিদ্রোহ, হিন্দুদের নিরাপত্তার নামে আন্দোলন এবং সর্বশেষ পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সংঘাত-সংঘর্ষ বাঁধিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার প্রভু ভারতের যৌথ প্রযোজনায় হয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। শুধু না জানার ভান করে বসে আছে হাসিনামিডিয়া ও তথাকথিত সুশীল সমাজের মুখপাত্র বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক। এসব ঘটনার নেপথ্যের ষড়যন্ত্র কি ও কারা জড়িত, তা তারা তুলে ধরছে না। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে দুই ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা (যা অবশ্যই নিন্দনীয়) অতি ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশ করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে দেখাতে চেয়েছে, দেখো, হাসিনাকে ফেলে দিয়ে কি ভুল করেছ! হাসিনার পতনের ঘন্টা দুয়েক আগে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যে এক ভিডিও বার্তায় দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমার পরিবার তো চলেই যাচ্ছে। এরপর আপনারা দেখবেন, কী অবস্থা হয়। জয়ের এই কথারই যেন প্রতিফলন ঘটছে একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনার মধ্য দিয়ে। এসব ঘটনা হাসিনামিডিয়া ফলাও করে প্রচার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলের শত শত নৃশংস খুন, গুম, অবিচার-অন্যায়, অত্যাচার-নির্যাতন, দুর্নীতি ঢেকে দিচ্ছে।

তিন.
বিএনপি বরাবরই স্বৈরাচার হাসিনার সৃষ্ট মিডিয়া সন্ত্রাস ও মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়ে আসছে। পান থেকে চুন খসলেই যেমন হাসিনা তার দায় বিএনপির উপর চাপিয়ে দিত, তেমনি তার দোসর মিডিয়াও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করত। হাসিনা যেমন বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন, তার মিডিয়াও তার সাথে সুর মেলাত। টক শোতে তার চাটুকাররা বিএনপির পি-ি চটকাত। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হেন কোনো অপচেষ্টা নেই, যা করেননি। তারপরও পারেননি। কেন পারেননি? কারা বিএনপির ঢাল ও রক্ষাকবচ হয়েছিল? তারা হচ্ছে, দলটির নিবেদিত নেতাকর্মী ও জনগণ। বিএনপির মূল শক্তি এখানেই। তা নাহলে, বহু আগেই হাসিনার যাঁতাকলে পড়ে দলটির অস্তিত্ব বিলোপ হয়ে যেত। দলটির নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে জীবন দিয়ে, সীমাহীন নিপীড়ন-নির্যাতন সয়ে বিএনপিকে আগলে রেখেছে। শত শত মামলা মাথায় নিয়ে, গ্রেফতার হয়ে, জেলে গিয়ে, আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংসার তুচ্ছ করে, জীবিকার জন্য রিকশা চালিয়ে, বনে-জঙ্গলে-ফুটপাতে জীবনযাপন করেও তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার কাছে মাথানত করেনি। আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীনতাকে তারা মন ও মননে ধারন করে আপসহীন হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে তাদের এই আত্মত্যাগের কথা হাসিনামিডিয়া তুলে ধরেনি ও ধরছে না। হাসিনামুক্ত নতুন বাংলাদেশে তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা দূরে থাক, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুলিশের গুলিতে যে তরুণ প্রজন্ম শহীদ হয়েছে, তাদের আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরছে না। বরং এসব দালাল মিডিয়ায় বহালতবিয়তে থাকা দালাল সাংবাদিকরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ম্লান করার নানা অপকৌশল অবলম্বন করেছে। মিডিয়ায় এখন কোনো গোয়েন্দা তৎপরতা নেই, সরকারের চাপের অজুহাত নেই, বাকস্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা নেই, তারপরও হাসিনা ও ভারতের দালাল সাংবাদিকরা যেন মূঢ় হয়ে আছে। কেন? কারণ, তারা তীর্তের কাকের মতো সুযোগের অপেক্ষায় আছে, যাতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়। তারা সুকৌশলে অন্তর্বর্তী সরকারও বিএনপিকে টার্গেট করেছে। একদিকে, ষড়যন্ত্রমূলক বিভিন্ন ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করা, অন্যদিকে বিএনপির জনপ্রিয়তায় ধস নামাতে নানা নেতিবাচক ঘটনা তুলে ধরছে। তারাও ভালো করে জানে, যখনই নির্বাচন হোক, বিএনপিই বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। তাই এখন থেকেই বিএনপির ইমেজ নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এতে কি তারা সফল হবে? হবে না। কারণ, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সাড়ে ১৫ বছরেও বিএনপিকে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়ে সফল হয়নি। বরং তারাই ধ্বংস হয়ে গেছে।

চার.
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও তার গড়া সাড়ে ১৫ বছরের প্রশাসন ও মিডিয়া রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনকে স্বৈরাচারের ভূত তাড়াতে দিনরাত পরিশ্রম করেও কূল পাচ্ছে না। পুরোপুরি সফল হতে সময় লাগবে। এজন্য সময় দিতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এজন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। তবে ভারতের দালাল হাসিনামিডিয়া এখনও অক্ষত রয়ে গেছে। এ মিডিয়ার সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত এসব মিডিয়ায় দায়িত্বরত সাংবাদিকরা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যাকে সমর্থন দিয়ে গেছে। আন্দোলন দমাতে হাসিনা সরকারকে আরও কঠোর এবং গণহত্যাকে আরও সম্প্রসারিত করতে ক্রমাগত পরামর্শ দিয়ে গেছে। ৫ আগস্টের পর তারা সুর বদলালেও তাদের মানসিকতায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার মাইন্ডসেট রয়ে গেছে। তারা অতি কৌশলে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরছে। কাজেই সংস্কারের মাধ্যমে এসব মিডিয়ায় কর্মরত ভারত ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগী তাবেদারদের মুক্ত করার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে। এক্ষেত্রে মুক্ত গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার কিছু নেই। এখানে ফ্যাসিবাদী সাংবাদিকতামুক্তর বিষয় জড়িত। ইতোমধ্যে প্রকৃত সাংবাদিকদের তরফ থেকে হাসিনামিডিয়া সংস্কারের দাবি তোলা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা ইতোমধ্যে মিডিয়া সংস্কার এবং আগামী সপ্তাহে গণমাধ্যম কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। যেসব গণমাধ্যকর্মী ফ্যাসিবাদের পক্ষে ছিল, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই সংস্কারের মাধ্যমে মিডিয়াকে ফ্যাসিবাদী সাংবাদিকতামুক্ত করা যাবে বলে আশা করা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রশাসন ও মিডিয়ায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রেতাত্মারা থেকে গেলে এক সময় তারা স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে তুলবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে বিএনপিসহ সচেতন মহলকে দৃঢ় থাকতে হবে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নেইমারক নিয়ে দুঃসবাদ দিলেন হিলাল কোচ

নেইমারক নিয়ে দুঃসবাদ দিলেন হিলাল কোচ

২১ দিনের যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র-ইইউসহ ১১ দেশ

২১ দিনের যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র-ইইউসহ ১১ দেশ

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে পরমাণু নীতিতে বদল আনছে রাশিয়া

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে পরমাণু নীতিতে বদল আনছে রাশিয়া

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মাসদার হোসেনের সাক্ষাত

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মাসদার হোসেনের সাক্ষাত

দেশে শতভাগ নবায়যোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি

দেশে শতভাগ নবায়যোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি

গণমানুষের কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ : শফিকুর রহমান

গণমানুষের কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ : শফিকুর রহমান

সাবেক প্রক্টর গোলাম রাব্বানী, জয় লেখক রাব্বানী সাদ্দামসহ ছাত্রলীগের ৬৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

সাবেক প্রক্টর গোলাম রাব্বানী, জয় লেখক রাব্বানী সাদ্দামসহ ছাত্রলীগের ৬৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে: ড. ইউনূস

তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে: ড. ইউনূস

সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত কেন?

সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত কেন?

জাতিসংঘে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তুলে ধরছেন ড. ইউনূস

জাতিসংঘে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তুলে ধরছেন ড. ইউনূস

ভারতে ধর্মীয় উৎসবের সময় পানিতে ডুবে ৪৬ জনের সলিল সমাধি

ভারতে ধর্মীয় উৎসবের সময় পানিতে ডুবে ৪৬ জনের সলিল সমাধি

মহারাষ্ট্রের হিন্দু পুরোহিত রামগিরি মহারাজ ও বিজেপির নিতেশ রানেকে গ্রেফতার দাবীতে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

মহারাষ্ট্রের হিন্দু পুরোহিত রামগিরি মহারাজ ও বিজেপির নিতেশ রানেকে গ্রেফতার দাবীতে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

দুর্বল ব্যাংকগুলো ধার পাচ্ছে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা

দুর্বল ব্যাংকগুলো ধার পাচ্ছে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা

জাবিতে সপ্তাহব্যাপী নাট্যপার্বণ শুরু শনিবার

জাবিতে সপ্তাহব্যাপী নাট্যপার্বণ শুরু শনিবার

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন

পবিপ্রবিতে নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম

পবিপ্রবিতে নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম

গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

প্রথমবার তাইওয়ান প্রণালীতে জাপানের যুদ্ধজাহাজ

প্রথমবার তাইওয়ান প্রণালীতে জাপানের যুদ্ধজাহাজ

চীনে রাশিয়ার গোপন যুদ্ধ ড্রোন প্রকল্প চালু

চীনে রাশিয়ার গোপন যুদ্ধ ড্রোন প্রকল্প চালু