আইকনিক লিডার ড. মুহাম্মদ ইউনূস
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তিনি বিদেশ সফরে গিয়েছেন। তাঁর এই সফরটি যে অবিস্মরণীয় হবে এবং ইতিহাস সৃষ্টি করবে, তা আগে থেকেই অনুমান করা গিয়েছে। কারণ, নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূস বিগত কয়েক দশক ধরে তার কর্ম ও দর্শণ দিয়ে বিশ্বের সব দেশের কাছে এক অনুকরণীয়, অনুসরণীয় ও শ্রদ্ধার ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। বিশ্বে এ যাবত অনেকে নোবেল পুরস্কার পেলেও তাঁর মতো এমন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে আর কাউকে দেখা যায়নি। তিনি বিশ্বের যে দেশেই গিয়েছেন, সম্মানিত ও আদরণীয় হয়েছেন। তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে দেশগুলোও গৌরব বোধ করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর যোগ দেয়ার পর যে অভুতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জনগণ তো বটেই বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করেছে। সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্বের চোখ তার উপরই নিবদ্ধ হয়েছে। এই বিরল ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন চিরায়ত প্রথা ভেঙে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাঁকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে জড়িয়ে ধরেন। এ দৃশ্য এর আগে বিশ্ব কখনো দেখেনি। এর মাধ্যমে বিশ্ব জানল, ড. ইউনূস শুধু একজন নোবেল লরিয়েটই নন, তিনি একজন ‘আইকনিক লিডার’ এবং ‘গ্লোবাল পার্সোনালিটি’। বিশ্বে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর নজিরবিহীন বৈঠকের পর জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে আসা বিশ্বের অনেক দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁর সাথে দেখা করেছেন কিংবা বৈঠক করেছেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ সাইড লাইনে সকলের সাথে দেখা-সাক্ষাতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন। সকলেই তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার কথা ব্যক্ত করেছেন। অনেকে তাঁর সাথে ছবি তোলার জন্য অধীর অপেক্ষায় থেকেছেন। তিনি বিশ্বের কাছে কতটা বরণীয়, এর মাধ্যমে পুরো বিশ্ব দেখেছে। আমাদের দেশের জন্য এ এক অনন্য গৌরব ও মর্যাদার বিষয়। নিশ্চিতভাবেই দেশের মানুষ তাঁর মতো এমন একজন ব্যক্তিত্বকে সরকার প্রধান হিসেবে পেয়ে গর্বিত।
যেকোনো দেশের জন্য একজন সুশাসক আল্লাহর রহমত স্বরূপ। পবিত্র কুরআনে একাধিক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি যাকে ইচ্ছা তাকে সম্মান দেই, যাকে ইচ্ছা তাকে সম্মান দেই না।’ এই সম্মান বহুভাবে আল্লাহ দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে, দেশ ও জাতি পরিচালনার জন্য যাঁকে আল্লাহ নিয়োজিত করেন, তিনি আল্লাহরই প্রতিনিধি হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করেন এবং এটা তাঁর জন্য যেমন বিরল সম্মান, তেমনি পরীক্ষা স্বরূপ। আল্লাহর তরফ থেকে এই ক্ষমতাপ্রাপ্তি কেউ অপব্যবহার করেন, কেউ সুশাসনের মাধ্যমে সদ্ব্যবহার করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিকৃষ্টতম শাসক হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে তার প্রজাদের প্রতি কঠোর ও অন্যায়মূলক নীতি অবলম্বন করে।’ তার নজির হচ্ছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মহান আল্লাহ একজন সুশাসক হিসেবে বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন। দেশের মানুষ তা উপলব্ধি করতে পারছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন দার্শণিক, দূরদর্শী, দৃঢ়চেতা এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ব্যক্তিত্ব। প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকে তিনি প্রতি পদক্ষেপে তাঁর নিদর্শন রেখে চলেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই যেভাবে বিশ্বের পরাশক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন, তা নজিরবিহীন। এর মূল কারণ হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একজন ব্যক্তি কীভাবে ভাল এবং মন্দের পার্থক্য গড়ে দেন, তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত তিনি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশকে সবদিক থেকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে পালিয়েছেন। এই ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েই ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে এসেছেন। দেশ পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা যেভাবে অর্থপাচার, দুর্নীতি, লুটপাট, দুঃশাসন এবং দেশকে ঋণের মহাসগরে ডুবিয়ে গেছেন, তা উদ্ধারের কঠিনতম দায়িত্ব ড. ইউনূস নিয়েছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ইউরোপের ধনী দেশ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ইউএসএইডসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অর্থের ঢালি নিয়ে হাজির হয়েছে। অত্যন্ত অল্প সময়ে এ পর্যন্ত ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহযোগিতার নিশ্চয়তা তারা দিয়েছে। এ সহযোগিতা যে ক্রমেই বাড়বে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। আশা করা যায়, প্রতিশ্রুত সহযোগিতা এ বছরের মধ্যেই পাওয়া শুরু হবে। এর ফলে ফোকলা হয়ে যাওয়া দেশের অর্থনীতির ভা-ার যেমন পূর্ণ হতে শুরু করবে, তেমনি গতিশীলও হবে। তবে পতিত শেখ হাসিনা ও তার প্রভু মোদির ষড়যন্ত্রের শঙ্কাও রয়েছে। আমরা দেখেছি, যাত্রার শুরু থেকেই তারা কিভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা তাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে রয়েছে। বেসামরিক প্রশাসন থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। সামরিক প্রশাসনেও এক ধরনের দ্বিধা-জড়তা রয়েছে। পুলিশ ট্রমা থেকে বের হতে পারছে না। ঘাপটি মেরে থাকা শেখ হাসিনার চেলাচামুন্ডারা সবক্ষেত্রে কাজের গতি শ্লথ করে দিতে তৎপর। হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্র যে থেমে নেই তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের ‘ক্লিন্টন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফাঁক গলে জাহিদ রোহান রাজিন এক আওয়ামী লীগারের মঞ্চে উঠে যাওয়া। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয়না, শেখ হাসিনা-মোদি কতটা তৎপর। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের সকল উপদেষ্টাকে সচেতন থাকতে হবে। উপদেষ্টাদের কিছু কিছু ভুল ও কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তবে ভুল যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতি পদক্ষেপে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশ যে এক সমৃদ্ধ ও উন্নতীর নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছে, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। বিশ্বে তিনি শুধু একজন ‘ফিলোসোফার’ই নন, ক্যারিশমাটিক লিডারে পরিণত হয়েছেন। তাঁর মতো একজন নেতার ওপর দেশের দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার অর্থ স্বর্ণ দুয়ার খুলে যাওয়া। ইতোমধ্যে তা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে। দেশের মানমর্যাদা, সম্মান এবং অর্থনীতিকে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা যেভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তা আবার পুনরুদ্ধার ও গতিশীল হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং সাহায্য সংস্থাগুলোর আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসাকে ক্যাপিটালাইজ করে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আসছে, তা সততা ও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে। এ ব্যাপারে দক্ষ ম্যানেজমেন্টের বিকল্প নেই। ম্যানেজম্যান্ট দক্ষ না হলে, যোগ্য না হলে, সংস্কার ও নতুন দেশ গঠনের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এখন দেশজুড়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হবে। উৎপাদন, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্ম প্রচেষ্টাকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী
দ. আফ্রিকাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে পাকিস্তান
পাকিস্তানে তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র হামলা, নিহত ১৬ সেনা
বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ঝিকরগাছায় মোটরসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ১, আহত ১৫
হিলিতে বিএনপির উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের খসড়া তালিকা প্রকাশ
বদলগাছীতে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার পেছনে প্লেয়ার ও রেগুলেটরদের দায় আছে: অর্থ উপদেষ্টা
সা'দ অনুসারী কতৃক হত্যা-তান্ডবের বিচার দাবীতে কটিয়াদীতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
এক সময় কোরআন ও হাদিসের আলোকে কথা বলা দুরহ ছিল: অতিরিক্ত আইজিপি খোন্দকার রফিকুল
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত, বৃষ্টি ও শীতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের দখলে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি
মাহফিল থেকে ফেরার পথে ফুলগাজীতে বাস উল্টে আহত ২১
একমাস ধরে চলছে সড়কের গাছ কর্তন, জানেনা প্রশাসন
যানবাহন চালনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে : খুবি উপাচার্য
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদী গ্রেপ্তার
কিশোরগঞ্জ হাওরের অলওয়েদার সড়কের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে: ফাওজুল কবির খান
মোংলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
এবিসির প্রতিবেদন: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়