কেন এত খোদায়ী আজাব-অভিশাপ
০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
মানব ইতিহাসের এমন কোনো যুগ অতিবাহিত হয়নি, যাতে আল্লাহর আজাব অভিশাপ অবতীর্ণ হয়নি এবং নানা প্রকার প্রাকৃতকি দুর্যোগ ও বালা-মুসিবতের কবলে পততি হয়ে বিভিন্ন জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। তুফান, সামুদ্রিক প্লাবন, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, দাবানল, বহু রকমের রোগবালাই প্রভৃতি আপদ-বিপদ মানব জাতির ওপর সকল যুগেই আপতিত হয়েছে। আল্লাহর এ পরীক্ষা হতে কোনো জাতি নিস্তার লাভ করতে পারেনি। ফলে অনেক জাতিকেই ধ্বংস প্রাপ্ত হতে হয়েছে। পবিত্র কোরআনে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বভিন্নি জাতির ধ্বংসের বিবরণ উল্লেখ করছেন। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে আল্লাহর নাফরমানী ও জগতের বুকে অন্যায়-অবিচার এবং জুলুম নির্যাতনের রাজত্ব কায়েম করা। প্রাচীন জাতিসমূহের ইতিহাস পাঠ করলে তাই জানা যায়। এ অধঃপতনের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেছেন: (হে লোক সকল) তোমাদের ওপর বালা-মুসিবত যা কিছু নাজেল হয়ে থাকে, তা তোমাদেরই কর্মফলের দরুন। আল্লাহ তোমাদের অনেকের পাপ মার্জনা করে থাকেন (সূরা-শুরা)। বস্তুত নিশ্চয় আল্লাহতাআলা কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরাই অবস্থার পরিবর্তন না ঘটায় (সূরা-রাদ)। সুতরাং এটা প্রমাণিত, মানবতার উন্নতি অগ্রগতি এবং অধঃপতন ও সর্বনাশের মূলেও রয়েছে মানুষের আমল বা কৃতকর্ম। মানুষ সৎপথে থাকতে চাইলে আল্লাহ তাকে সেজন্য সাহায্য করেন এবং বিপথে পরিচালিত হতে চাইলে তাও তার এখতিয়ারভুক্ত।
হযরত রাসূলে করিম (সা.) কেয়ামতের যে সকল পূর্ব লক্ষণের কথা বলেছেন, সেগুলির প্রতি লক্ষ করলে মুসলমান সমাজের বর্তমান অবস্থা সম্যকরূপে উপলব্ধি করা যেতে পারে। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, হুজুর (সা.) বলেছেন, যখন লোকে গনিমতের (যুদ্ধলব্ধ) মালকে আল্লাহর দয়ার দানস্বরূপ নিজস্ব মাল বলে গণ্য করবে, গচ্ছিত মালের খেয়ানত করতে থাকবে, জাকাত আদায় করাকে কর্জ পরিশোধ বলে মনে করবে, দীনের শিক্ষাকে বৈষয়িক উপকারের জন্য শিখবে, পুরুষগণ নিজেদের স্ত্রীগণের আদেশ মেনে চলবে, লোকে মাতার আদেশ অমান্য করে চলবে, বন্ধু-বান্ধবদের নৈকট্য লাভ ও তাদের সম্মান বেশি করতে থাকবে, পিতাকে দূর সম্পর্কীয় ব্যক্তি বলে মনে করবে, মসজিদসমূহে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আত্মকলহ হতে থাকবে। ফাসেক বা পাপাসক্ত এবং হীন ও নিকৃষ্ট ব্যক্তিগণ জাত ও সম্পদে নেতৃত্ব দান করবে, কোনো মানুষের সম্মান কেবল তার ভয়ে এবং তার অন্যায়-অবিচার হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য করা হবে, গায়িকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাদ্যযন্ত্রের প্রাচুর্য দেখা দেবে, মদ্য পান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে, পরবর্তী লোকেরা তাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি অভিশাপ দিতে থাকবে (অর্থাৎ তাদেরকে বোকা মনে করবে)। তখন তুমি অগ্নিবর্ণ ঝড়-তুফানের, প্রচণ্ড ভূমিকম্পের, জমিন বিধ্বস্ত হওয়ার, আসমান হতে পাথর বর্ষণের, সুরত (আকার) পরিবর্তনের এবং হাড় ভাঙানোর ন্যায় বহু অনল প্রবাহ লক্ষণের অপেক্ষা করো। (তিরমিজি)।
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, একদা হযরত নবী করীম (সা.) কিছু বর্ণনা করছিলেন- এমন সময় একজন লোক এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কেয়ামত কবে সংঘটিত হবে? হুজুর বললেন, যখন লোক গচ্ছিত ধন আত্মসাৎ করবে।’ সে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘গচ্ছিত ধন আত্মসাৎ করার অর্থ কী?’ হুজুর (সা.) বললেন, ‘যখন অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে শাসন কার্য দেওয়া হবে, তখন তুমি কেয়ামতের প্রতীক্ষা করতে পারো।’ অন্যত্র হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘ঐ সময় খুব দূরে নয়, যখন প্রকৃত ধর্ম শিক্ষা উঠিয়ে নেয়া হবে। সেই সময় ফেতনা-ফাসাদ, অনিষ্ট ও বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি প্রকাশ পাবে এবং রক্তপাত ও খুন-খারাবীর অধিক্য দেখা দেবে।’ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, যে জাতি খেয়ানতে লিপ্ত হয়ে পড়ে, আল্লাহ তাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করে দেন, যে জাতি ব্যভিচার (জেনা) আরম্ভ করে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। যে জাতি ওজন ও মাপে কম দেয়, তাদের রেজেক (উপার্জন) হ্রাস করে দেওয়া হয়। যে জাতি সত্যের বিরুদ্ধে রায় দান করে, তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড-রক্তপাত বেড়ে যায় এবং যে জাতি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাদেরকে শত্রুর অধীনস্ত করা হয়। (মোয়াত্তা মালেক)।
হযরত উসমান (রা.) বলতেন, তোমাদের মধ্যে এমন এক সময় আসবে, যখন ইমাম বা শাসকগণ তোমাদের রক্ষক হওয়ার পরিবর্তে কেবল তহসীলদার (কর আদায়কারী) হিসাবে গণ্য হবে। তখন লজ্জা-শরম, আমানত এবং ওয়াদাকারী বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষের কুকর্ম ও পাপ কার্যের ফলে নানা প্রকার আসমানী বালা-মুসিবত অবতীর্ণ হয়ে থাকে এবং কেয়ামতের পূর্বে সেগুলি অধিক পরিমাণে দেখা দেবে বলে নবী করিম (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। লোক যখন প্রকৃত মোমেন মুসলমান, পরহেজগার, আল্লাহর ফরমাবরদার, এবাদত-বন্দেগিরত, খোদাভীরু, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, দাতা, রোজাদার, কুসংস্কারমুক্ত এবং যাবতীয় ধর্মীয় অনুশাসন মান্য করে চলবে, তখন আল্লাহর মহিমা (রহমত) বর্ষিত হতে থাকবে এবং জগতে শান্তি বিরাজ করবে। আর তাদের মধ্যে উল্লেখিত গুণাবলীর অবর্তমানে যদি তারা কাফের, মোশরেক, ফাসেক, পাপী, ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, চোর, ডাকু, অত্যাচারী, অহংকারী, অভিশপ্ত, অজ্ঞ, ধোঁকাবাজ, বিদ্রোহী, মিথ্যাবাদী এবং হত্যাকারী প্রভৃতি রূপে জীবনযাপন করে, তবে আল্লাহর করুণা ও মহিমার সকল দ্বার রুদ্ধ হয়ে যায় এবং জগতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা, অশান্তি এবং জান-মালের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে পড়ে। পবিত্র কোরআনের ভাষায়: ‘জাহারাল ফাসাদু ফিল বাররে ওয়াল বাহরে, বিমা কাছাবাত আইদিয়ান্নাসে।’ অর্থাৎ জলে-স্থলে ফ্যাসাদ ভরপুর হয়ে গেছে, লোকের কৃতকর্মে ফলে। জাতীয় অধঃপতনে এর চেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত আর কিছু হতে পারে না।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বিভিন্ন স্থানে ঘোষণা করেছেন যে, মানুষ তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে, সৎ ও ভালো কাজ করলে তার উপকার, প্রতিদান বা তার সুফল লাভ করবে। অসৎ-মন্দ কাজ করলে তারও শাস্তি বা কুফল ভোগ করবে। মানুষের কর্মফলের দুই দিকই রয়েছে। আখেরাত বা পরকালের তা তো রয়েছেই। এই দুনিয়াতে ও জীবদ্দশায় এই কর্মফল ভোগ করতে হবে- এটাই সৃষ্টিকর্তার চিরন্তন বিধান। কেননা আল্লাহতাআলা মানুষের জন্য ভাল-মন্দ দুটো দিকই নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং উভয় কর্মের পরিণতি কী হতে পারে, তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। মানুষ সৎ, সঠিক পথের অনুসারী হবে, নাকি গুমরাহী, বিপথগামী হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা, এখতিয়ার তাকে দান করা হয়েছে। যদিও আল্লাহর ইলমে রয়েছে মানুষ কোন পথ অনুসরণ করবে। এখানে মানুষ তার ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করবে, তার জ্ঞান-বুদ্ধি বিবেচনার সঠিক ব্যবহার করবে, নাকি ক্ষমতাজ্ঞানের অপব্যবহার করবে, সেটা তার অধিকারভুক্ত, এক্ষেত্রে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, মানুষ তার কৃতকর্মে জন্য নিজেরাই দায়ী হবে। যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
যারা অসৎ কর্ম করে তারা পাপী। তাদের পাপাচারের কারণে বিভিন্ন বালা-মুসিবত বিপদাপদে পতিত হয়ে থাকে। তাদের জন্য এই বিপদাপদ আজাব শাস্তি হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে- এতে তারা পেরেশান হয়, বিচলিত হয়, পক্ষান্তরে আল্লাহর নেকবান্দাদের উপর কোন বালা-মুসিবত আসলে, তারা তাতে বিচলিত হয় না। আল্লাহর পক্ষ হতে কোনো আজমায়েশ বা পরীক্ষা মনে করে এবং ধৈর্যসহ তা বরণ করে নেয়। তারা বলে- আমরা নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করব।
আল্লাহতালা মানুষকে তার প্রাপ্য কর্মের শাস্তি দুনিয়াতে নগদও দিয়ে থাকেন। এজন্য কেউ কেউ বলেছেন যে, একটি পাপকর্ম সম্পন্ন করার পর মানুষ অপর একটি পাপ কর্মে লিপ্ত হয়। অনুরূপভাবে একটি সৎকর্ম অপর একটি সৎ কর্মের দিকে আকৃষ্ট করে। একটি হাদীস হতে একথাও জানা যায় যে, কোনো ব্যক্তির গায়ে কোনো আঁচড় লাগলে অথবা কোনো শিরা ধড়ফড় করলে কিংবা পা পিছলিয়ে পড়লে সবই তার পাপ কর্মের কারণে ঘটে থাকে। আর একথাও ঠিক যে, আল্লাহ প্রত্যেক পাপের শাস্তি দেন না, অধিকাংশ পাপেরই তিনি শাস্তি প্রদান করেন না। কেননা প্রত্যেক পাপের শাস্তি প্রদান করা হলে পাপিষ্ঠ মানুষের পদে পদে বিপদ হতো। তাই ক্ষমাশীল আল্লাহতালা অনেক পাপেরই শাস্তি প্রদান করেন না, বরং ক্ষমা করে দেন। তাই বলে মানুষ পাপাচারে লিপ্ত থাকবে, এরূপ অনুমতিও প্রদান করা হয়নি। সুতরাং মানুষের পাপকর্ম হতে সর্বদা বিরত থাকাই উচিত।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
র্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবেনা -রাজশাহীতে নূর খান
নওগাঁয় ৩ জনকে পিটিয়ে জখম, আহতদের উদ্ধার করলো পুলিশ
মাদারীপুরে গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির
দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাঁধা
দুবাই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীর অ্যাওয়ার্ড লাভ
'বরবাদ' সিনেমা শতকোটির গন্ডি পেরিয়ে যাবে! কি বললেন শাকিব?
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাস চাপায় মা ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত
দোয়ারাবাজারে ভারতেীয় সীমান্তে ৩০০ বস্তা রশুন আটক করেছে টাস্কফোর্স
রাজশাহীতে নেসকোর ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানারকম হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ
শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
যুবদলের উদ্যোগে ৩১ দফা অবহিতকরণে আলোচনা সভা
এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন
বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা
ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ
দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত
গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সিলেট-তামাবিল চার লেন উন্নতিকরণে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ
১০ বছর আগে উধাও মালয়েশিয়া বিমানের নতুন করে খোঁজ শুরু
৯/১১-র ধাঁচে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, বন্ধ বিমানবন্দর
আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী