সীমান্তে বিএসএফ’র বর্বরতা বন্ধ করতে হবে
১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ভারতের সাথে অন্তত ৭টি দেশের স্থল সীমান্ত থাকলেও বিএসএফ’র বাড়াবাড়ি শুধু বাংলাদেশের সাথে। গত দেড় দশক ধরে তারা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতার দাবি করে এসেছে। এ সময়ে বিএসএফ গুলি করে ৬ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। অন্যদিকে চীন ও পাকিস্তানের সাথে চিরবৈরীতা ও হাজার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত থাকলেও সেসব সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে মানুষ মারার সাহস দেখাতে পারে না। ভারতীয় সেবাদাস হাসিনা সরকারের ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্তে বিএসএফের নির্বিচার হত্যাকা-ের প্রতিবাদ ও প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বাংলাদেশের বন্ধুত্ব এবং বিজিবির সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের বিপরীতে বিএসএফ বাংলাদেশকে শুধুই লাশ উপহার দিয়েছে। আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে ভারতের আধিপত্য, অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ভারসাম্যহীনতা এবং শেখ হাসিনার মতো বশংবদ সরকার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও হত্যাকা- বন্ধে ভারতীয়রা তাদের কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে গেলেও বিএসএফের হত্যাকা- থেমে নেই। শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তবে নিজ নাগরিক হত্যার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন আর নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে না। বিজিবিকেও যথাযথ জবাব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার পর তার লাশ বিএসএফ তুলে নিয়ে গেছে বলে খবর বেরিয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে ভারতের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন সীমান্তে বিএসএফের বাড়াবাড়িতে বিজিবিকে পিঠ দেখাতে বারণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত দেড় দশকের মধ্যে এই প্রথম বাংলাদেশ সরকারের কোনো দায়িত্বশীল মন্ত্রী সীমান্ত হত্যা ও বিএসএফের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের জানান দিলেন। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আরেক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার হাতে অর্পণ করা হলেও বিএসএফের সীমান্ত হত্যা বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত নীতি একই আছে। বিএসএফের গুলিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের বাসিন্দা কামাল হোসেন নিহতের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে নোট পাঠিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা একপাক্ষিক আধিপত্য ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব পুরোপুরি পাল্টে দিতে শুধুমাত্র গতানুগতিক প্রতিবাদ লিপি প্রেরণই যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত অবস্থানের প্রতিফলন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবির ভূমিকার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠতে পারে। সীমান্তে বিএসএফের অনুপ্রবেশ, গুলি করে লাশ তুলে নেয়া এবং পণ্যের চোরাচালান বন্ধে বিজিবিকে কঠোরভাবে পেশাদারি ভূমিকা পালন করতে হবে। শান্তি ও সৌহার্দ্যের বার্তা নিয়ে অতীতে বিজিবি সীমান্তে বিএসএফের সাথে ফুল ও মিষ্টি বিতরণের পরও তাদের আগ্রাসী ভূমিকার পরিবর্তন দেখা যায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন বুধবার ঢাকায় কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক খুনের প্রতিবাদে ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, ঠিক তখন দুর্গাপূজা উপলক্ষে আখাউড়া সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের কাছে মিষ্টান্ন পাঠিয়েছে বিজিবি। কিন্তু ভারত বা বিএসএফ কি এই সৌহার্দ্যরে মূল্য দিতে জানে? বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চীন-পাকিস্তানের মতো বৈরীতা বা সংঘাত না থাকলেও বিএসএফের হিং¯্র-বেপরোয়া আচরণের কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক ও রক্তক্ষয়ী সীমান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানির লাশ এই সীমান্তের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তের বছর আগে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানি খাতুন কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে সীমানা পার হওয়ার সময় বিএসএফ তার বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এরপর লাশটি দীর্ঘ সময় ধরে কাঁটাতারে ঝুঁলে থাকে। যা বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। এবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজপথের দেয়ালে আঁকা শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতিতেও ফেলানির লাশ মূর্ত হয়ে উঠতে দেখা গেছে। একইভাবে উঠে এসেছে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের খুনিদের হাতে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মুখাবয়ব। বাংলাদেশে একটি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পরও ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা এবং বিএসএফের বেপরোয়া আচরণ বদলায়নি। চাঞ্চল্যকর ফেলানি হত্যার বিচার এখনো হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ১ সেপ্টেম্বর মৌলবীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা যাওয়ার সময় ১৩ বছরের কিশোরি স্বর্ণা দাস বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। স্বর্ণাদাস তার মায়ের সাথে ত্রিপুরায় যাচ্ছিল সেখানে অবস্থানরত তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। ফেলানি তার পিতার সাথে কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরার পথে, আর স্বর্ণাদাস ত্রিপুরায় যাওয়ার পথে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেই আন্তঃসীমান্ত চোরাচালান, অবৈধ অভিভাবসন সমস্যা ইত্যাদি আছে। বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও এভাবে নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি করার নজির নেই। ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ অভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে আটক ও বিচারের মুখোমুখী করা যেতে পারে। তা না করে যেমন খুশি গুলি করে লাশ গুম করার মতো অমানবিক কর্মকা- চলতে পারে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একটি গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার। ভারতীয় আধিপত্য ও আগ্রাসন বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি, নেবে না। সীমান্তে বিএসএফের বেপরোয়া গুলিবর্ষণ ও হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে জনগণ সরকারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন