বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে
১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষ কষ্টের জীবনযাপন করছে। এর অবসান হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, তারা প্রান্তিক পর্যায়ের দিকে ধাবিত। বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী এতটাই বিপাকে রয়েছে যে, তাদের কোনোরকমে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। পণ্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমল থেকে। সে সময় উসিলা হিসেবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যবৃদ্ধিসহ ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে সিন্ডিকেটের কথা। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে শেখ হাসিনারই অনুগত ব্যবসায়ীরা, যারা তাকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীও অসহায় হয়ে বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙা সহজ নয়। এ থেকে বোঝা যায়, এই সিন্ডিকেটের প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল এবং সে কারণে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। সাধারণ মানুষের আশা ছিল, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ায় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। দেখা যাচ্ছে, এ কাজটি সরকার এখনো করতে পারেনি। বরং সিন্ডিকেটবাজি আগের মতোই বহাল আছে।
গতকাল দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বহাল থাকা সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইনকিলাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেট অক্ষত রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে দেশের বড় বড় কর্পোরেট শিল্প প্রতিষ্ঠান জড়িত, যারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিল। তারা এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করতে শেখ হাসিনার নির্দেশে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে চলেছে, যাতে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বলার অপেক্ষা রাখে না, শেখ হাসিনার সময় এই সিন্ডিকেট জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তারা যাতে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করতে না পারে এবং কীভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। সিন্ডিকেটের কারসাজির পাশাপাশি জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলাদির ক্ষতির বিষয়টিও জড়িত। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। উত্তরাঞ্চল এখনো বন্যা কবলিত। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে পণ্যের সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। তবে এই ক্ষয়ক্ষতি সাময়িক হলেও তা কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না। কৃষকরা নবদ্যোমে দ্রুত ফসল ফলিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়। সমস্যা হয়ে রয়েছে, সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রমূলক কারসাজি। এটা এখন স্পষ্ট, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে। তারা শেখ হাসিনার হয়ে সরকারের ভাবমর্যাদা বিনষ্টে তৎপর। তাদের অপতৎপরতা এতটাই বিস্তৃত যে, মানুষ যে শাক-সবজি দিয়ে খাবার খাবে, সেই সক্ষমতাও কমিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে অসহনীয় কষ্টের দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, জনগাণের জীবনযাপন সহজ করতে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দুই মাসেও তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি, বরং আরও বেড়েছে। অথচ উচিৎ ছিল, প্রধান উপদেষ্টার এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে সকল উপদেষ্টার উদ্যোগ নেয়া। উল্টো বিগত আওয়ামী সরকারের মতো কোনো কোনো উপদেষ্টা জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করছেন, যা অনাকাক্সিক্ষত এবং দায়িত্ব পালনে তাদের অপারগতার প্রকাশ। যেখানে ছাত্র-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মসনদ তছনছ করে দিয়ে তাকে দেশছাড়া করেছে, সেখানে দায়িত্বরত উপদেষ্টারা কেন ফ্যাসিস্টের অনুসারি বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? কেন তারা বিপ্লবী চেতনায় নিজেদের উজ্জীবিত করতে পারছেন না? তাদের মনে রাখা উচিৎ, এ সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসল এবং জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। বিপ্লবের যে প্রত্যাশা, তা তাদেরকেই পূরণ করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ফেলে দিতে শুরু থেকেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার প্রভু মোদির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে, সেটা সকলেরই জানা। তারা তাদের দোসরদের দিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন-বিশৃঙ্খলা করে সরকারকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়তার সাথে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেল করে সফল হয়েছে। তবে তাদের দোসর ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট এখনো দমিত হয়নি। এ সিন্ডিকেট জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। তারা মানুষের মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রটিকে সংকুচিত করে ফেলেছে। মানুষকে কষ্ট দিয়ে তার দায় সরকারের ওপর চাপাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সকল উপদেষ্টাকে তা উপলব্ধি করে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনা যায়, তার ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে সিন্ডিকেট ভাঙা ও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। এই সিন্ডিকেট দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা অবমাননার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
সিংগাইরে দুধর্ষ ডাকাতি, ১০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট
সালথায় ঘরের চালা কেটে শিশুকে জিম্মি করে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নব বিমানসেনা দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকওয়াজ অনুষ্ঠিত
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে টার্নার প্রাইজ বিজয়ী স্কটিশ শিল্পী জাসলিন কাউর
সোনাহাট স্থলবন্দরে কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্ধ, সংবাদ সম্মেলন করে ২ গ্রুপের নতুন কমিটি গঠনের দাবি
নোয়াখালীর গুলিবিদ্ধ আরমানের চিকিৎসা খরচ নিয়ে বিপাকে পরিবার
লিয়ামের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ছেড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন লিয়াম পেইনের প্রেমিকা
ভিয়েতনামে বন্ধ হলো জনপ্রিয় শপিং অ্যাপ টেমু
১৫ বছরে রিজার্ভ থেকে উধাও ২৪ বিলিয়ন ডলার : গভর্নর
পাকিস্থানী নাগরিকের 'ক্ষমতায়' সম্পত্তি নিয়ে বিপাকে কসবার অসহায় নারী
নরসিংদীতে আন্ত:কলেজ খেলাধুলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগীতা শুরু
ভারতীয় শাড়ি আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন রিজভী
বাংলাদেশ নিয়ে কেউ মিথ্যাচার করলে মানুষ তার উচিত জবাব দিবে: কর্নেল অলি
হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সহ সভাপতি গ্রেপ্তার
৫ আগস্ট বিজয়উল্লাসে হাসিনা বাহিনীর নির্মমতার আরেক উদাহরণ শিশু জাবিরের হত্যা
শিবালয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ উদ্বোধন
অভ্যুত্থানে পর প্রথম বিজয় দিবস : কুচকাওয়াজ নয়, হবে ‘বিজয় মেলা’
যুক্তরাজ্যে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে নতুন ওষুধ ‘মাউনজারো’ অনুমোদন পেতে যাচ্ছে
ভারতের অপকর্ম, অপপ্রচার বন্ধে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ