ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ এএম

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জাতির মুক্তির পথ খুলে দিয়েছে। একটি প্রবল স্বৈরাচারি, লুটেরা, খুনি ভারতের তাবেদার সরকারের হাত থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়ে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেয়ার পথ সুগম করেছে। স্বৈরাচারের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলদাস সদস্যদের বন্দুকের সামনে শিক্ষার্থী-জনতা জীবনের মায়া তুচ্ছ করে, রাজপথে রক্ত দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তারা জাতির গর্বিত সন্তান। লুটপাট, সন্ত্রাস ও মাফিয়াতন্ত্রের অস্ত্রধারি লাঠিয়ালদের পরাজিত করেই যুগে যুগে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে ব্রতী হন। গণবিপ্লবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার অপকর্মের সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনো নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। ১৬ বছরের দুর্নীতি-দুঃশাসন, দলবাজি, দখলবাজির জঞ্জাল দুই-তিন মাসের মধ্যে পরিস্কার করা সম্ভব নয়া। এতে সময় লাগবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তায় দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়েছে। ইতোমধ্যে গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল পুর্নগঠন শেষ হয়েছে। শীঘ্রই বিচার শুরু হতে যাচ্ছে বলে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে একটি বিপরীতমুখী প্রবণতাও দেখা গেছে। দেশের কয়েকটি স্থানে আন্দোলনে নাশকতা ও পুলিশ হত্যার মামলায় আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের জড়িত করে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। বিচারহীন কোনো হত্যাকাণ্ড, নাশকতা কিংবা মব জাস্টিস কারো কাম্য নয়। তবে জাতির মুক্তির স্বার্থে প্রবল স্বৈরাচারের খুনি বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো গণআন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার একধরনের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানের সময় নোয়াখালির সোনাইমুরী থানার কনস্টেবল ইব্রাহীম হত্যার মামলায় আন্দোলনের যোদ্ধা যুবক ইমন হোসেনকে গ্রেফতার করে জেলে দেয়ার ঘটনাটি সারাদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আন্দোলনে ইমনের সহযোদ্ধারা তার মুক্তির দাবিতে পথে নেমেছে বলে জানা যায়। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে স্বৈরাচারি সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী ১৯-২০ জুলাই যাত্রাবাড়ি-শনির আখড়ায় আন্দোলনে ছাত্র হত্যার মামলা না করলেও পুলিশ হত্যার অভিযোগে ছাত্রদল নেতাসহ ৬ জনকে আটক করেছিল। স্বৈরাচারের পতন না ঘটলে আন্দোলনকারিদের কী পরিণতি হতো, তা সহজেই অনুমেয়। গত ১৬ বছর ধরে প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনকে বন্দুকের জোরে ঠেকিয়ে দিয়ে, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলা দিয়ে পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতার বাণিজ্য চলেছে। আন্দোলনের সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এবং স্বৈরাচারের দলদাস অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরা ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়ার মুখে কিছু পুলিশও নিহত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পুলিশের অস্ত্রের সামনে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আন্দোলন কখনো সফল হতো না। সঙ্গত কারণেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে যেসব ছাত্র-জনতা মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত ঘটনার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা, গ্রেফতার না করতে এক বিবৃতির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হঠাৎ করেই হয়নি। এটি গত ১৬ বছরের স্বৈরশাসন ও বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর আন্দোলনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা অস্বীকার করা যাবে না। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনো স্বৈরাচারি সরকারের দেয়া ৮০ মামলার খড়গ ঝুলছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এসব মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়েছে। একইভাবে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসও শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে একাধিক মামলার শিকার ও সাজার সম্মুখীন হয়েছেন। গণবিপ্লবে অংশগ্রহণকারী এবং বিগত ১৬ বছরে বিরোধীদলের নেতাকর্মী, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীসহ যারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলার শিকার হয়েছে, তাদের মামলা প্রত্যাহার করা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। প্রায় আড়াই মাস হয়ে গেলেও তারেক রহমানের মামলা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তারেক রহমানের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে সরকারের নির্বাহী আদেশের সুযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারিদের হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেফতারের শিকার হতে দেখা যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এছাড়া দেশের ভেতরে এবং বিদেশে থেকে যেসব সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাও প্রত্যাহার করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন
দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিস্ময়কর রেকর্ড
সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতি ঐক্যবদ্ধ
সংস্কার ও জাতির স্বপ্ন
জাতীয় ঐক্য দৃঢ় ও সুসংহত করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে  চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন