ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার শুরু

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়েছে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার। তার বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইবুনালে এ বিচার কাজ শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। শুধু তার বিরুদ্ধেই নয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামী ১৮ নভেম্বর তাদের গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য দুটি আবেদন করেন। শেখ হাসিনা বাদে বাকি ৪৫ আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মণি, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ পলক, সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা, সাবেক বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক ড. জাফর ইকবাল, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, যুবলীগেরর চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার, মনিরুল ইসলাম, প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার ও হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাকর্মকর্তা জিয়াউল হাসান প্রমুখ। তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার নির্দেশদাতা, উসকানিদাতা ও নির্দেশ পালন করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনার দেড় দশকের বেশি শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, শাপলা চত্বর হত্যাকা-, আয়নাঘর, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলা, দুর্নীতি ইত্যাদির পরিসংখ্যানসহ নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। চিফ প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তে গণহত্যার প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লব দমাতে এবং ক্ষমতায় থাকতে দেশের ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালিয়েছেন। এ সময়ে দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং বিশ হাজারের বেশি মানুষকে চিরতরে পঙ্গু ও অন্ধ করা হয়েছে। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহু ছাত্র-জনতা চিকিৎসাধীন এবং কেউ কেউ এখনো মৃত্যুবরণ করছে। এই গণহত্যা চালিয়েও শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মধ্যে তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়। আশ্রয় নিতে হয় তার প্রভু মোদির ভারতে। এখনো তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। সেখানে তার অবস্থানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ভারত তাকে ট্রাভেল পাস দিয়ে রেখেছে এবং গত বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়েছে, তার নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। ভারত কেন তাকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। তাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্তের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য রেখে দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করে দিতে শেখ হাসিনা ও মোদি যৌথভাবে বিভিন্ন আন্দোলন করিয়েছেন। একের পর এক ষড়যন্ত্র করেছেন এবং তা অব্যাহত রেখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার সকল ষড়যন্ত্র অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করেছে এবং করছে। শেখ হাসিনাকে যদি দেশে ফিরিয়ে আনা না যায়, তাহলে দেশের বিরুদ্ধে তার ও মোদির ষড়যন্ত্র যে চলতে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা অত্যন্ত জরুরি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আদালতের নির্দেশে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যা প্রয়োজন, তাই করা হবে। দেশের মানুষও চায়, ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। এক্ষেত্রে, কোনো রকমের শৈথিল্য ও ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারেরও অগ্রাধিকারমূলক প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার দ্রুত বিচার করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ বিচার কাজে অনেক বাধা-বিপত্তি ও গতিহীন করার ষড়যন্ত্র থাকবে। শেখ হাসিনা ও মোদির দোসররা এখনো আদালত ও প্রশাসনসহ সর্বত্র ঘাপটি মেরে রয়েছে। তারা চাইবে যেকোনো উপায়ে বিচারকাজে বাধা সৃষ্টি করতে। ভারত শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে সব ধরনের চক্রান্ত করবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃঢ় ও সচেতন থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের যে বিচার শুরু হয়েছে, তার মধ্যে যাতে কোনো ধরনের ফাঁকফোকর না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে চিফ প্রসিকিউটরসহ তদন্ত কাজে নিয়োজিতদের সতর্ক থাকতে হবে। অতীতে এই ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধপরাধ ও মানবাতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার কার্যক্রম নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল, তা স্মরণে রেখে বিচার কার্যক্রমকে স্বচ্ছ ও প্রশ্নাতীত রাখতে হবে। কেউ যাতে বলতে না পারে, এ বিচার ক্যাঙ্গারু কোর্টে বা ক্যামেরা ট্রায়ালে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই বিচার কাজ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার কথা বলেছেন। এ বিচার কীভাবে হচ্ছে, সে সম্পর্কে যাতে দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক মহল জানতে পারে, এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরাও চাই, আইনের নিরিখে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক। এই বিচার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন
দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিস্ময়কর রেকর্ড
সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতি ঐক্যবদ্ধ
সংস্কার ও জাতির স্বপ্ন
জাতীয় ঐক্য দৃঢ় ও সুসংহত করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে  চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন

চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন