বিদ্যুৎ সংকট আর্থ-সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে
০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির মালিকানাধীন কোম্পানির সাথে শেখ হাসিনার অসম বিদ্যুৎচুক্তির খেসারত এখন জনগণকে দিতে হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে হাসিনা রেজিমের শেষ দিকে দেশে বিদ্যুৎ সংকট শুরু হয়েছিল। আর আদানির সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী অসম চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা যাচ্ছিল। এ চুক্তির কারণে বিদ্যুৎ খাতে বছরে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে বাংলাদেশকে। আদানি ইউনিট প্রতি অতিরিক্ত কয়লা ব্যবহার, বিল পরিশোধে বিলম্বের জন্য উচ্চহারের সুদসহ ক্যাপাসিটি চার্জ ধরে অতিরিক্ত হাজার হাজার কোটি টাকা পাওনা দাবি করছে। দেশের মানুষ যখন আদানির সাথে চুক্তি বাতিলের দাবি তুলছে, তখন বকেয়া বিলের অজুহাতে আদানি হঠাৎ করেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে সারাদেশে বিদ্যুতের লোড শেডিংও বেড়ে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগিরা যে যেভাবে পারছে দেশে সংকট ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। একতরফা ও অসম চুক্তির সুযোগ নিয়ে বছরে অতিরিক্ত হাজার হাজার কোটি টাকা বিল আদায় করার মওকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই আদানি গ্রুপ ঝাড়খন্ডের গাড্ডায় অবস্থিত ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ১০০০মেগাওয়াট সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় দেশে বিদ্যুৎ সংকট আরো তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা লোড শেডিং দিয়েও বিদ্যুৎ সরবরাহে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিগত সরকারের সৃষ্ট অর্থ সংকটের কারণে বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারলেও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ইতিবাচক তৎপরতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তবে ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নে অর্ন্তবর্তী সরকার এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। মাফিয়া সরকারের মেগা দুর্নীতি ও অর্থপাচারের প্রভাবে দেশের সবগুলো সেক্টরেই পড়ছে। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রভাব সব সেক্টরে সরাসরি পড়ে থাকে। ক্রমবর্ধমান লোড শেডিংয়ের কারণে একদিকে শিল্পোৎপাদনে যেমন বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে অন্যদিকে ঘরে ঘরে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি প্রভাব সৃষ্টি করে। এক কথায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঘাটতি দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবক হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা যখন দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার কথা শুনছি, তখন বিদ্যুৎ সংকট বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব আশঙ্কা ও দুর্ভাবনা সামনে রেখে আদানি গ্রুপের সাথে সাথে ভারতের সাথে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এস আলম গ্রপের বাঁশখালি পাওয়ার প্লান্ট এবং পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। গত দেড় দশক ধরে দেশের বিদ্যুৎ খাত পরিকল্পিতভাবে মাফিয়াতান্ত্রিক লুটপাটের শিকার হয়েছিল। দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের বড় অংশই এ খাতের মাধ্যমে পাচার হয়ে থাকতে পারে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মাফিয়া সরকারের পতন ঘটলেও তাদের সুবিধাভোগী কর্পোরেট দুর্নীতিবাজরা এখনো নানাভাবে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে চলেছে।
বিদ্যুৎ খাতে এ ধরণের সংকট আকষ্মিক বা অভাবনীয় নয়। পতিত সরকারের সহযোগীরা সরকারের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার কাছ থেকে যে ধরণের জরুরি পদক্ষেপ ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার ছিল তার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। একজন দক্ষ সাবেক আমলা হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে মানুষ আরো বেশি কিছু আশা করে। যদিও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যা নিরসন কোনো একক ব্যক্তির কাজ নয়। অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব একজনের উপর ন্যস্ত হওয়ায় এ ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ ও গুরুত্ব আরোপ করার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়ে উপদেষ্টার উপর চাপ কমাতে অন্য একজন চৌকষ ও তারুণ্যদীপ্ত উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। গতানুগতিক পন্থায় বিদ্যুৎ খাতে খুব শীঘ্রই দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের ঘাটতি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে, যা একটি সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে সরকারের বিরূপ সমালোচনা ও আস্থার সংকট সৃষ্টির অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তদোপরি বিদ্যুতের লোড শেডিং আরো বেড়ে গেলে তা সরকারের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। বিদ্যুৎ খাতের লোকসান কমিয়ে আনতে অতীতের অসম চুক্তিগুলো বাতিল করার আগেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যমান অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ইমেজের কারণে উন্নয়ন সহায়তা ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রথমেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কন্যার নাম প্রকাশ করলেন রণবীর-দীপিকা দম্পতি,দিয়েছেন মিষ্টি ছবি
তুরস্কে বিজয়ী বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজকে অভিনন্দন জানালেন পীর সাহেব চরমোনাই
সিলেট মহানগর ‘বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’র ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন
শেরপুরে তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু
কাঁচা সড়কে জনদুর্ভোগ
দেরি করে ভাত দেওয়ায় হত্যা
গ্রামে প্রবেশের সড়ক নেই
বন্য হাতি হামলা
পলো বাওয়া উৎসব
গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী হাটে ময়লার স্তূপ
কুয়াকাটায় ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরছে
গারো পাহাড়ে কলার আবাদ
সেতুর পনেরো শতাংশ কাজ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
ডেঙ্গুতে ১০ মাসে মৃত্যু ৩০০
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা
স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষু দানকে উৎসাহিত করতে হবে
অনন্য চিন্তক-দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে
শার্শায় আফিল জুট উইভিং ফ্যাক্টরি শ্রমিক নিহত
আফগান সিরিজের বাংলাদেশ দল ঘোষণা,আছে চমক