শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে
০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
গতকাল দৈনিক ইনবিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জনা যায়, ব্যাংকের ঋণ আদায়ের জন্য এস আলম, ওরিয়ন, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রতিষ্ঠানসহ ৯টি শিল্প গ্রুপে রিসিভার বসাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের মূল কাজ হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করে তা বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা। ইতোমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্থাবর-অস্থাবর এবং বিদেশে থাকা সম্পত্তির সন্ধানে রিসিভার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং মূল গ্রুপের অন্যান্য সম্পত্তি থেকে পাওনা আদায়ের জন্য অতিরিক্ত পাওনা আদায়ে আইন পদক্ষেপ নিতে পারে জনতা ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে ১৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের জামানত বাবদ সম্পত্তি নিলাম করার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে জনতা ব্যাংক নিলামের জন্য পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর নিলামের তারিখ নির্ধারণ করেছে। বিভিন্ন বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি হওয়া নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে তা চলে আসছে। আমরা দেখেছি, বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময় তার ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাউকে কাউকে ঋণ খেলাপি থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এসব ব্যবসায়ী পুনরায় ভুয়া কাগজপত্রের সম্পত্তি দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে। এক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপ এগিয়ে ছিল। গ্রুপটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। ব্যাংক দখল করে এন্তার লুটপাট ও অর্থপাচারের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরি জাবেদের দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের কথা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে তার বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও ব্যবসা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার করে এসব সম্পদ গড়েছেন। অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং শেখ হাসিনার অনেক মন্ত্রী-এমপি ও তার ঘনিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধেও লুটপাটের মাধ্যমে অর্থপাচারের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর লুটপাট ও অর্থপাচারের অনেক তথ্য এখন বের হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে উন্নয়নের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা লোপাট ও পাচার হয়েছে। গত শনিবার এক সেমিনারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অর্থ পাচার হয়েছে। এ অর্থ পাচার হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সহযোগিতায়। বলা বাহুল্য, এই দুই প্রতিষ্ঠানকে শেখ হাসিনার গোচরের মধ্যেই তার ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে কিছু শিল্প গ্রুপও রয়েছে। তারা ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাট ও অর্থপাচার চালিয়ে খাতগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংক খাতকে সংস্কার করে গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে আহসান এইচ মনসুর অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ। এ উদ্যোগে তেমন গতি দেখা যাচ্ছে না। কেবল কত অর্থপাচার হয়েছে এ হিসাব-নিকাষ চলছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন শিল্প গোষ্ঠীর খেলাপি ঋণ আদায়ে রিসিভার বসানো হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এটা সৎ ও ভালো উদ্যোগ, তবে এতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা ও অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। লোকবল ছাঁটাইসহ বেকারত্ব বাড়তে পারে। কারণ, এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ কর্মরত। যেগুলো রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান, সেগুলোর অর্ডার কমতে পারে। বায়াররা নতুন কর্তৃপক্ষ কিংবা অস্থিতিশীল প্রতিষ্ঠানের সাথে অর্ডার দেয়া থেকে নিরুৎসাহী হতে পারে। যেসব শিল্প গ্রুপের কর্ণধারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিচার হতে পারে। তবে একারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনিশ্চয়তা ও অচলবাস্থা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই উচিৎ হবে না। এগুলো সচল রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলার ব্যবস্থা করতে হবে। সউদী আরবের প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দায়িত্বে আসার পর দেশটির বেশ কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তিকে আটক করেছিলেন। এদের বেশিরভাগই তার নিকট আত্মীয়-সজন ছিলেন। তাদেরকে বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে আটক রেখে সালমান তাদেরকে দিয়ে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে বাধ্য করেছিলেন। এতে সউদী অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়। এখন তারা মুক্ত এবং তারাসহ অন্যরাও নিজ দেশে বিনিয়োগ করেছেন এবং করছেন। প্রিন্স সালমানের এ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছিল। অর্থনীতিতে আটককৃতদের যুক্ত করার এটা তার এক অনন্য কৌশল ছিল। এতে ‘আম-ছালা’ দুটোই রক্ষা হয়েছিল। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে শিল্প গোষ্ঠীকে এভাবে বা অন্য কোনো কৌশলে কাজে লাগানো যায় কিনা, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবা উচিৎ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফোকলা করে যাওয়া অর্থনীতিকে সবল করে তোলার দায়িত্ব এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তেছে। তার মেয়াদ প্রায় তিন মাস হয়ে গেলেও অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর খুব একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময়ে নতুন করে দুর্নীতি বা অর্থপাচার না হলেও অর্থনীতির ভিত্তি শক্ত হয়নি। রিজার্ভ যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায়ই রয়ে গেছে। কোনো উন্নতি হয়নি। ব্যাংকে টাকা নেই। তারল্য ফিরে আসেনি। এ পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন শিল্প গ্রুপকে অস্থিতিশীল করে তুললে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তাদের প্রতিষ্ঠান অচল বা বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নিলামে তুলে হয়ত ব্যাংকের ঋণ উদ্ধার হতে পারে, তবে এর প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানের রফতানি বা বিনিয়োগে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে সামগ্রিক অর্থনীতির কি লাভ হবে, এ বিষয়টিও সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। বরং সরকারের উচিত হবে, ঐসব শিল্প গ্রুপের কর্ণধারদের অনুপস্থিতিতে তাদের আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা। মোদ্দা কথা, শিল্প গ্রুপগুলোর কার্যক্রম চালু রেখে তাদের দিয়ে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে কীভাবে ভূমিকা রাখা যায়, সে পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল অবলম্বন করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আর্জেন্টিনা দলে ফিরলেন মার্টিনেজ
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু
শমী কায়সার গ্রেপ্তার
শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের ৫৬তম প্রতিষ্ঠঅ বাষির্কী উপলক্ষে মিলনমেলা ২০ নভেম্বর
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের স্পন্সর ওয়ালটন
সাভারে অভিযানের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভেজাল শিশু খাদ্য তৈরী কারখানা
সম্মান বজায় রেখে কাজ করুক সেনাবাহিনী প্রত্যাশা সাধারন মানুষের
যশোরবাসীর দুর্ভোগ আর প্রতারণার নাম পদ্মাসেতু রেলপ্রকল্প!
আপনার প্রেমিকা খুব দামি গিফট চান! তাঁকে কী ভাবে সামলে নেবেন?
টেকনাফে ৫০হাজার ইয়াবাসহ মিয়ানমারের নাগরিক আটক।
ফ্যাসিবাদের বিচার এবং পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে
কোনো পরাশক্তি নয়, জনগণের ঐক্যই বাংলাদেশের মূল শক্তি
হৃদয়ে তাঁর নাম লেখা হয়ে আছে
প্রত্যেক বন্দীর জন্য মিলিয়ন ডলার দিতে প্রস্তুত নেতানিয়াহু
অন্তর্বাস পরে হাঁটা সেই ইরানি তরুণী মানসিকভাবে অসুস্থ
মৃত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট
মণিপুরে এবার নাগাদের সাথে সংঘাত মৈতৈদের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার বাংলা ব্যালট পেপার সংযুক্ত
আগাম ভোট দিয়েছেন ৮ কোটির বেশি মানুষ
মার্কিন নির্বাচনের আগে উত্তর কোরিয়ার প্রচুর মিসাইল পরীক্ষা