ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২১ কার্তিক ১৪৩১

উপদেষ্টাদের কাজের হিসাব নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তির আর তিন দিন বাকী। কোনো সরকারের জন্য তিন মাস সময় এমন কিছু নয়। তবে কোনো নতুন সরকারের প্রথম তিন মাস সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের গতি-প্রকৃতি, নীতি, কর্মসম্পাদনের দক্ষতা-অদক্ষতা ইত্যাদি এই সময়কালেই স্পষ্ট বুঝা যায়। বলা যায়, মর্নিং শোজ দ্য ডে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর গণআস্থা যেমন অনেক বেশি, তেমনি সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যশাও অনেক বেশি। তিক্ত হলেও বলতে হচ্ছে, সরকার এ সময় অনেক ভালো কাজ করলেও গণপ্রত্যাশা বাস্তবায়নে যথেষ্ট ঘাটতি বা ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে। অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ উপদেষ্টা যোগ্যতা ও সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেননি। ৮৪ বছর বয়সী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণ্যের জোশ ও উদ্দীপনা নিয়ে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তার উপদেষ্টাদের অধিকাংশই তার ধারেকাছেও যেতে পারছেন না। কেউ কেউ বয়োভারে ন্যুব্জ ও অথর্ব। কেউ কেউ হলিডে মুডে আছেন। তারা সময় উপভোগ করছেন যেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্মুখেরা কটাক্ষ করে ‘এনজিওগ্রাম’ সরকার বলেন। উপদেষ্টাদের অনেকে এনজিও ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আসা বলেই এমন কটাক্ষ করা হয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, উপদেষ্টাদের একাংশ সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিতে যতটা আগ্রহী, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ততটাই নিরুৎসাহী। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, তিন মাসে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। স্বৈরাচারের নির্বিচার দলীয়করণ ও অপব্যবহারে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান দুটি শেষ গেছে। এদের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। তারা সরকারকে পরিকল্পিতভাবে অসহযোগিতা করছে। এটা কারো অজানা নেই। সরকারও জানে। অথচ এই সময়ে জঞ্জাল পরিষ্কার করে প্রসাশন ও পুলিশকে গতিশীল ও কার্যকর করা যায়নি। জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের ব্যর্থতা ও অকর্মন্যতা কীভাবে ঢাকবেন? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বদল হয়েছে। নতুন যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন; তিনি ভালোভাবে কথাই বলতে পারেন না। অর্থ উপদেষ্টা যোগ্য ব্যক্তি, ভেঙ্গেপড়া ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে গতি আনতে তিনি সমর্থ হয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি। বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসেনি। মূল্যস্ফীতি অপ্রতিরোধ্য। শিক্ষামন্ত্রী বয়সের কারণে নাকি অফিসই ঠিকমত করতে পারেন না। যোগাযোগ, সড়ক-সেতু এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা কার্যত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ এখন যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। আইন, বিচার, সংসদ, সংস্কৃতি ও প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই নিজেকে বিতর্কিত করে ফেলেছেন। পরিবেশ উপদেষ্টা পরিবেশের বাইরে যেতে পারছেন না। বাকী উপদেষ্টাদের কারো কারো খোঁজ-খবর একবারেই মেলে না। উপদেষ্টা পরিষদে দু’জন তরুণ উপদেষ্টা রয়েছেন। তাদের অভিজ্ঞতা কম হলেও কাজের দিক দিয়ে অনন্য নজির ও পারঙ্গমতা প্রদর্শন করছেন।

গণঅভ্যুত্থান বা গণবিপ্লবের পর যে সরকার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়, সেই সরকারকে বিপ্লবী সরকার বলে অভিহিত করা হয়। নজিরবিহীন গণউৎক্ষেপের ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এটাও বিপ্লবী সরকার বটে। তবে বাস্তবে বিপ্লবী চরিত্র এই সরকারের মধ্য দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। অভ্যুত্থান বা বিপ্লব পরবর্তী সরকারের কোনো কাজের শেষ থাকে না। রাষ্ট্রকে রাষ্ট্র হিসাবে সংগঠন করা এবং রাষ্ট্রের বিবিধ প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও কার্যক্ষম করার সঙ্গে জনপ্রত্যাশা পূরণ করা তার অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে পড়ে। এ জন্য সব দিক দিয়ে চৌকস, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সরকার গঠিত হওয়া উচিৎ। তা এমন একটা টিমের সরকার হতে হবে, যার মধ্যে বিপ্লবের চেতনা ও মর্মবাণী সদা জাগ্রত থাকবে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, অন্তর্বর্তী সরকার সেই ধরনের ও নেচারের সরকার হয়ে উঠতে পারেনি। অনেকেরই এই অভিমত যে, উপদেষ্টা মণ্ডলীর একাংশের গণআন্দোলন বা অভ্যুত্থানে কোনো ভূমিকা ছিল না; অংশগ্রহণ ছিল না। সমর্থন কতটা ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তদুপরি কারো কারো বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের পক্ষে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে। এ রকম একটি হ য ব র ল টিমের সরকারের পক্ষে বিপ্লব ও জনতার আকাক্সক্ষা কতটা পূরণ করতে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। উপদেষ্টাদের বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে উজ্জীবিত হতে হবে, তারুণ্যের দৃঢ়তা নিয়ে নিরলস কর্মসম্পাদনে ব্রতী হতে হবে, এটাই জনগণ আশা করে। যারা এটা করতে পারবেন না, তাদের স্বেচ্ছায় দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত।

দেশের সার্বিক অবস্থা ভালো, এমন দাবি করা যাবে না। অবস্থা বরং দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। অন্ধকারের আবছায়া চারদিকে। পতিত স্বৈরাচার ও তার অন্ধ মদদদাতা ভারতের মোদি সরকার এই সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহত চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের মধ্যেও এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা চক্রান্তকারীদেরই সহায়তা করছে। সরকার এসব মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে তার সফলতা ও দুর্বলতা দুই-ই আছে। দেশের অর্থনীতি, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যÑ কোনোটি ঠিকমত চলছে না। বিনিয়োগ নেই; দেশি-বিদেশি উভয় ক্ষেত্রে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মানুষের জীবনযাপন ইতোমধ্যেই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। যাতায়াত ও নাগরিকনিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। শুরুতে সরকারের প্রতি মানুষের যে আস্থা, বিশ্বাস দেখা গিয়েছিল, তা এর মধ্যেই অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। শুরুতে সরকার যদি ব্যর্থতার দিকেই এগিয়ে যায়, তবে সরকারের ভবিষ্যৎ যাবে। জনগণেরও যাবে। বিপ্লবের ফসল এই সরকার ব্যর্থ হোক, তা একেবারেই কারো কাম্য নয়। সরকার ব্যর্থ হলে, বিপ্লব ব্যর্থ হবে, দেশ ব্যর্থ হবে। জাহেলিয়াতের অন্ধকার নেমে আসবে। তাই দেশের সর্ববিধ সুরক্ষায় সরকারের যেমন সতর্ক-সচেতন ও কর্মশীল হতে হবে, তেমনি রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও শক্তির সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও কর্মব্যবস্থাপনার জন্য সরকারকে তার তিন মাসের কার্যক্রমের হিসাব-নিকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে উপদেষ্টারা এই তিন মাসে কে কী করেছেন, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের পারফরমেন্সের মূল্যায়ন খুবই জরুরি। পারফরমেন্স কারো যদি ভালো না হয়, তা হলে তার ব্যাপারে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে নতুন উপদেষ্টা নেয়া যেতে পারে। যে কোনো মূল্যে এই সরকারকে কার্যকর ও সফল হতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মার্কিন নির্বাচন বুঝতে যে ১২টি বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে

মার্কিন নির্বাচন বুঝতে যে ১২টি বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয় প্রার্থী লড়ছেন মার্কিন নির্বাচনে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয় প্রার্থী লড়ছেন মার্কিন নির্বাচনে

নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল জানা যাবে কখন?

নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল জানা যাবে কখন?

রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট কার্যক্রম শুরু

রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট কার্যক্রম শুরু

নিরাপত্তা তথ্য ফাঁসের দায়ে নেতানিয়াহু’র শীর্ষ চার কর্মকর্তা গ্রেফতার

নিরাপত্তা তথ্য ফাঁসের দায়ে নেতানিয়াহু’র শীর্ষ চার কর্মকর্তা গ্রেফতার

ডাস্টবিনে মিলল মানুষের খণ্ডিত পা

ডাস্টবিনে মিলল মানুষের খণ্ডিত পা

যশোরে স্কুল ছাত্রীর হাত পা ও মুখ বাধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার

যশোরে স্কুল ছাত্রীর হাত পা ও মুখ বাধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার

জাল ফেললেই ওঠছে প্রচুর ইলিশ

জাল ফেললেই ওঠছে প্রচুর ইলিশ

ট্রাম্প না কমলা, কে পাবেন মুসলিম ভোট?

ট্রাম্প না কমলা, কে পাবেন মুসলিম ভোট?

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন ‘অস্থিতিশীল উপস্থিতি’: ইরান

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন ‘অস্থিতিশীল উপস্থিতি’: ইরান

‘গণপিটুনিতে’ সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ভাগনে নিহত

‘গণপিটুনিতে’ সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ভাগনে নিহত

বিকেলে সিদ্ধান্ত এলপি গ্যাসের দাম কমবে না বাড়বে

বিকেলে সিদ্ধান্ত এলপি গ্যাসের দাম কমবে না বাড়বে

ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল

ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল

বেরোবিতে ফের ছয় যুগল আটক

বেরোবিতে ফের ছয় যুগল আটক

রাত পোহালে ৫ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

রাত পোহালে ৫ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ফের গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত

ফের গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত

পঞ্চগড়ে যুবদলের কর্মীসভায় ককটেল বিস্ফোরণ

পঞ্চগড়ে যুবদলের কর্মীসভায় ককটেল বিস্ফোরণ

যশোরে আলাদা অভিযানে মাদক দ্রব্যসহ ৪ জন আটক

যশোরে আলাদা অভিযানে মাদক দ্রব্যসহ ৪ জন আটক

শাকিব-পূজার প্রেমের গুঞ্জনে মুখ খুললো পূজা চেরি

শাকিব-পূজার প্রেমের গুঞ্জনে মুখ খুললো পূজা চেরি

নেইমার ছিটকে গেলেন আবারও

নেইমার ছিটকে গেলেন আবারও