জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস
০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আজ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের মুক্তিকামী জনতা এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী একটি পরিবর্তনের প্রত্যাশায় রাস্তায় নেমে এসে ভারতীয় আধিপত্যবাদের অনুগত সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক নতুন গতিপথ নির্ধারণ করেছিল, যা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আকাঙ্খার পরিপুরক। একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে গণতন্ত্র, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তির গ্যারান্টি দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় ক্যাডারদের দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। লাখ লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। এহেন বাস্তবতায় জনপ্রিয়তার তলানিতে নেমে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল গঠন করার পাশাপাশি কয়েকটি সংবাদপত্র রেখে দেশের সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দেন। বিরোধীদল জাসদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম-হত্যা করে পরিস্থিতিকে একটি অনিবার্য গণবিস্ফোরণের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারই প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের একাংশের অংশগ্রহণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে বাকশাল সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদকে ক্ষমতায় বসায়। ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি ভারতীয় আধিপত্যের নাগপাশ ছিন্ন করে এক গতিপথে যাত্রা শুরু করলেও তা নিয়ে বহুমুখী চক্রান্ত- ষড়যন্ত্র সক্রিয় ছিল। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ৩ নভেম্বর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি প্রতিবিপ্লব সংঘটিত হয়। ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও জনপ্রত্যাশা পুরণের যে সুযোগ তৈরী হয়েছিল প্রতিবিপ্লবের লক্ষ্য ছিল তা নস্যাৎ করা। তারই প্রতিক্রিয়ায় জাসদ সমর্থিত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার অতি উৎসাহী সেনা সদস্যরা জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হত্যা এবং খোন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলেও দেশের জনগণ এবং সেনাবাহিনীর সমর্থন জেনারেল জিয়াউর রহমানের পক্ষে থাকায় তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং দেশের নেতৃত্ব তার উপর অর্পিত হয়।
৭ নভেম্বরের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়ন্ত্র নস্যাৎ করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ঘুরে দাড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করে বাংলাদেশ। একটি বিশৃঙ্খল, অরাজক ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশকে সাম্য, সম্প্রীতি ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে একাত্তরের বীর সেনানী জিয়াউর রহমান ধ্রুব তারকার মত আবির্ভুত হন। তবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বশংবদ ও পোষ্যদের ষড়যন্ত্র একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি। জাতির কঠিন সময়ে শক্তহাতে রাষ্ট্রের হাল ধরে জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রোজ্জ্বল করে তুলতে সক্ষম হন। ৭ নভেম্বরে সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিগত প্রায় ১৬ বছর ধরে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখা ফ্যাসিবাদী শক্তি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অত্যাচার নিপীড়নের স্টিমরোলার চালিয়েও দলটির অর্ন্তগত ঐক্য জনসমর্থনে চির ধরাতে পারেনি। রাষ্ট্রশক্তির অন্যায্য ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জনসমর্থনপুষ্ট কোনো রাজনৈতিক আদর্শকে নির্মূল করা যায় না। একইভাবে জাতির প্রত্যাশা ও সংহতির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার অপপ্রয়াস এবার ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৃহত্তর গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ৭ নভেম্বরের জাতীয় তাৎপর্যকে অগ্রাহ্য করে এ দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্মমৃত্যু দিবসগুলোকে জাতীয়ভাবে পালনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন।
শেখ মুজিব সাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতার পালাবদলের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার প্রেক্ষাপটে ১৫ আগস্ট এবং ৭ নভেম্বরের অভ’্যত্থান অনির্বায রূপে দেখা দিয়েছিল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার এবং দেশপ্রেমিক জনতার হাতে কোনো বিকল্প পথ ছিল না। স্বাধীনতা ও বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দিতে ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি ৫ দশক আগে যেমন সক্রিয় ছিল, এখনো তেমনই আছে। শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে ভবিষ্যত রাজনীতির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর মত অতি উৎসাহী নেতাদেরও ভারতে আশ্রয় দিয়ে সীমান্তে বাংলাদেশ বিরোধী সশস্ত্র তৎপরতা চালানোর সুযোগ দিয়েছিল ভারত। শেখ হাসিনার পৈশাচিক দু:শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তাঁর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে গত তিনমাস ধরে বিরতিহীনভাবে ভারত সমর্থিত অভ্যুত্থান বিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চলছেই। দেশ আজ আরেকটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অর্ন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে গুম-খুন-দু:শাসনের হোতাদের রাজনীতিতে পুর্নবাসনের চক্রান্ত চলছে। ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের চেতনা এবং ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চেতনা আজ এক অভিন্ন পথরেখায় মিলিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল। ৭ নভেম্বর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে আবদ্ধ থাকা সমীচিন নয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাথে সম্পৃক্ত, গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ ও সেনাবাহিনীকে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনাকে ধারণ করে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ভ’মিকা পালন করতে হবে। এখনো পতিত স্বৈরাচারের দোসররা প্রশাসনে এবং বিভিন্ন সেক্টরে সক্রিয় রয়েছে। ভারতে পালিয়ে গিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের বাস্তবতা এবং ১৯৭৫ সালের আগস্ট ও নভেম্বরের বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবের ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বিপ্লবের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নই হোক এবারের ৭ নভেম্বরের মূল লক্ষ্য।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আবাসিক হলে ছাত্রদলের পোস্টারিং, মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি
আগামীর বাংলা হবে ইসলামের বাংলা ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কিছু মানবো না
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জেড ফোর্স
যুগস্রষ্টা জিয়াউর রহমান
মার্কিন নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ে ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের অভিনন্দন
সৈনিক-জনতার একতার অঙ্গীকার
তরুণ প্রজন্ম এবং ৭ নভেম্বরের বিপ্লব
৭ নভেম্বর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় গৌরবের প্রতীক
কেশবপুরের ত্রাস টিটু যৌথ বাহিনীর হাতে আটক
সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন
যশোরে বিদেশি পিস্তল-বুলেট ও মাদকসহ আটক ২
জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ
৭ নভেম্বরের তাৎপর্য
ইসরাইলি অর্থনীতির ভবিষ্যত অন্ধকার, বেকারত্ব বেড়েছে
মেলানিয়াকে ফার্স্ট লেডি উল্লেখ করে বউয়ের প্রশংসায় ট্রাম্প
হিমালয় অববাহিকায় দুর্গম অঞ্চলে নতুন গ্রাম গড়ে তুলছে চীন
৭৩% ভোটার মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র হুমকির মুখে
অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে ইংলিশ
যুক্তরাষ্ট্র আরো বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে উঠতে পারে : জয়শঙ্কর
মার্কিন সিনেটে ইতিহাস গড়লেন দুই কৃষ্ণাঙ্গ নারী