ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে
১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও বিষোদগার করে যাচ্ছেন। তার সাথে সুর মিলিয়ে মোদি সরকার ও ভারতের গণমাধ্যমগুলোও মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ ও গুজব রটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে ক্ষুণœ করছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরপরই মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে বলে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে আসছেন, যা শেখ হাসিনার কথারই প্রতিধ্বনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমরা এক ও অভিন্ন। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরপর একই কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশী। এখানে হিন্দু-মুসলমানসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ও সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। আমরা দেখেছি, ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর কীভাবে দেশের সাধারণ মানুষ, মসজিদের ইমাম, মাদরাসা শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রাত জেগে হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছে। হিন্দুদের সুরক্ষায় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও মোদি ও ভারতের গণমাধ্যমগুলো প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভারতের প্রায় সমস্ত মিডিয়া মিথ্যা সংবাদ ও ভিডিও প্রচার করে ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়েছে। সেসব সংবাদ যে মিথ্যা, তা ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান প্রমাণ করে দিয়েছে। তা সাত্ত্বেও অপপ্রচার থেমে নেই। শেখ হাসিনার সাথে তাল মিরিয়ে মোদি ও ভারতের মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম গত বৃহস্পতিবার বিবিসি হিন্দির সাথে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আমাদের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। এ বিষয়ে ভারতের কিছু বলার দরকার নেই। তিনি আরও বলেছেন, ভারতের গণমাধ্যম আমাদের সরকারকে নিয়ে ভুল সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। ভারতের উচিৎ, এ বিষয়ে একটা সীমা টানা দরকার। আমরা চাই, তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা হোক এবং সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নেও আলোচনা হোক। নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য অত্যন্ত দৃঢ়, যুক্তিযুক্ত এবং সময়োপযোগী। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গণবিপ্লবের স্পিরিট প্রকাশিত হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং তার মন্ত্রণালয় ভারতের মিডিয়া ও মোদি সরকারের অপপ্রচারের যথাযথ জবাব দিতে পারছে না। ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মো. তৌফিক হাসান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ভারতে বসে শেখ হাসিনা যে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছে এবং দিচ্ছে, এটি বাংলাদেশ ভালো চোখে দেখছে না। এ ব্যাপারে সরকার তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি তাকে এ ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত রাখার জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে উত্থাপন করলে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। মুখপাত্র জানান, আমরা সত্যিকার অর্থে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব পাই নাই। বুঝা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের মোলায়েম সুরের বক্তব্য ভারত মোটেও আমলে নিচ্ছে না। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়। কারণ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়কে যেভাবে এবং যে ধরনের শক্তিশালী কূটনৈতিক বক্তব্য ও ভূমিকা রাখা প্রয়োজন, তা রাখতে পারছে না। দায়সারা বক্তব্য দিয়েই খালাস হয়ে যাচ্ছে। ফলে পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কি করছেন? তার ‘স্ট্রং ভয়েস’ নেই কেন? কূটনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, পররাষ্ট্র দফতরের এক্সটারনাল পাবলিসিটি উইং কি করছে? এর কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা, বুঝার কোনো উপায় নেই। এর দায়িত্ব হচ্ছে, বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা তুলে ধরা এবং ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়, এমন প্রচারণার উপযুক্ত জবাব দেয়া। এর মহাপরিচালক বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ উইংয়ে কে আছেন এবং কি করছেন, দেশের মানুষের জানা দরকার। ভারত যেভাবে ‘মাইনরিটি কার্ড’ খেলে যাচ্ছে, তার যথাযথ ও পাল্টা জবাব এই উংয়ের দেয়ার কথা। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন এই উইং অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। এখন এ ধরনের উইং আছে, তা দেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের গণমাধ্যমগুলো, যার অধিকাংশই হাসিনামিডিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল, সেগুলো ভারতের গণমাধ্যমের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। বরং তারা নীরব থেকে যেন ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারকে সমর্থন করছে। এর কারণ হচ্ছে, গণমাধ্যমগুলোতে এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা রয়ে গেছে। তারা মিডিয়ার স্বাধীনতা উপভোগ করলেও দেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার প্রপাগান্ডার কোনো জবাব দিচ্ছে না। তারা সঠিক তথ্য দিয়ে ভারতের মিথ্যা তথ্যের মোকাবেলা করছে না। অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যেভাবে দৃঢ়কণ্ঠে ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, অন্য উপদেষ্টাদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে শোনা যায় না। বরং তাদের কাউকে কাউকে একেক সময়ে একেক কথা বলতে শোনা গেছে। পূজার সময় ভারতে ইলিশ রফতানি নিয়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন কথা বলতে দেখা গেছে। কথা ও কাজে কোনো সমন্বয় নেই। তাদের উচিৎ, এক সুরে, এক ভাষায় কথা বলা।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারকে শুধু অস্বীকারই করছে না, লাগাতার বিদ্বেষপূর্ণ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে মোদি ও ভারতের গণমাধ্যমও সুর মিলাচ্ছে। এ অপপ্রচার বন্ধে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেমন ব্যর্থ হচ্ছে। এটা অদক্ষতা ও হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্র নীতির অনুসরণ ছাড়া কিছু নয়। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। কীভাবে এবং কোন ভাষায় প্রতিবাদ করলে ভারতের অপপ্রচার বন্ধ করা যায়, তার পরিকল্পনা করতে হবে। এক্সটারনাল পালিসিটি উইংকে দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনকেও সোচ্চার হতে হবে। গণমাধ্যমগুলোকেও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করতে হবে। ভারতে কীভাবে মোদির শাসনামলে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন করছে, তা তুলে ধরতে হবে। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও ইসলামী সংগঠনগুলোকেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারত যাতে নাক না গলায় এবং দাদাগিরি বাদ দিয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, শক্ত ভাষায় তাকে এ মেসেজ দিতে হবে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যেভাবে বলেছেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব, এ নিয়ে ভারতের কথা বলার দরকার নেই, এভাবে সবাইকে কথা বলতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তিলক-স্যামসন 'তান্ডবের' পর বোলারদের নৈপুণ্যে ভারতের রেকর্ড জয়
প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর: উপদেষ্টা আসিফ
সিরাজগঞ্জে ডাকাত দলের ৯ সদস্য আটক
বিশ্বব্যাপী ২২ টি দেশে মুক্তি পেল শাকিব খানের 'দরদ'
ইসলামে পাঁঠার গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে।
অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ কি আবশ্যক?
জেন জি’র দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতা
শ্রীলঙ্কার সংসদ নির্বাচনে দিশানায়েকের বামপন্থী জোটের জয়
সংসদের অন্দরে আদিবাসী নৃত্য প্রদর্শন
দিল্লিতে ভয়াবহ বায়ুদূষণ : সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, নির্মাণকাজ স্থগিত
পাপুয়া নিউগিনিতে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প, তবে সুনামির আশঙ্কা নেই
ইসরাইলি হামলায় লেবাননে সাংবাদিকসহ ১৫ জন নিহত
ভ্যাকসিনবিরোধী কেনেডি জুনিয়রকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানালেন ট্রাম্প : সমালোচনার ঝড়
ইউক্রেন যুদ্ধ : উ. কোরিয়ার পদক্ষেপে দ. কোরিয়ার নতুন কৌশল
আত্মঘাতী ড্রোনের উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন কিম
বৈঠকে বসছেন ভারত ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
স্পেনে বৃদ্ধাশ্রমে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের প্রাণহানি
ইরান নিয়ে সুর নরম করতে চান ট্রাম্প?
গাজায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও ভাইরাল
কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে ইরানে জাতিসংঘের পরমাণু প্রধান