অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
কয়েক সপ্তাহের আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্টের বিজয় ও হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকার মূলত ছাত্র-জনতার ত্যাগের ফসল। ইতিমধ্যে সরকার তিনমাস পেরিয়ে গেলেও আন্দোলনে আহত হাজার হাজার ছাত্র-জনতা উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা না পেয়ে হাসপাতালের বেড থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ-অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। এটা পুরো জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ও লজ্জাজনক বিষয়। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে ভেতর থেকে ফোঁকলা ও দেউলিয়া করে দিয়েছিল। পতনের দিন পর্যন্ত তাদের লুন্ঠনের ধারা অব্যাহত ছিল। যে ছাত্র-জনতা অমূল্য জীবন ও রক্তের বিনিময়ে দেশটাকে স্বাধীন করলেন, লুটপাট, গুম-খুনের দু:শাসন থেকে জাতিকে মুক্তি দিলেন, সে সব শহীদ এবং হাজার হাজার আহত, পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণের সম্মুখীন ব্যক্তিদের পরিবারগুলো রাষ্ট্রের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান, গুরুত্ব ও সহায়তা পাওয়ার কথা থাকলেও আদতে তারা যে অবহেলা-অবজ্ঞার শিকার হয়েছেন, তা অমার্জনীয়। পুরো জাতির জন্য এটা এক লজ্জাজনক বাস্তবতা। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে ছাত্রলীগের হেলমেট লীগ, পুলিশ-বিজিবি ও র্যাবের গুলিতে আহতদের অনেকে এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনন সফল না হলে তাদের বেশিরভাগই হয়তো চিকিৎসা বঞ্চিত হয়েই নানা জটিলতায় মারা যেতেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে আহতদের এমন অবহেলা ও সুচিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ার বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। বিতর্কিত লোকদের অর্ন্তবর্তী সরকারে অন্তর্ভুক্তি এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় জনমনে প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে, এই সরকারের উপর ড.মুহাম্মদ ইউনূসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কিনা। ছাত্র সমন্বয়ক এবং সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একটি পক্ষ ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এর সবই অমূলক নয়। দেশের বিরুদ্ধে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র-জনতাকে এখনো পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের রাজপথে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় তাদের মধ্যে ঐক্য, স্বচ্ছতা ও সমন্বয় সুদৃঢ় রাখতে হবে।
আন্দোলনে আহত, গুলিবিদ্ধ ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসা নিশ্চিতসহ সব খরচ বহন করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এটি সকলের আন্তরিক প্রত্যাশাও বটে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ, শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি ও আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অর্ন্তবর্তী সরকার শপথ গ্রহণের পর শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান, মর্যাদা এবং আহতদের চিকিৎসাসহ সর্বাত্মক সহায়তার প্রতিশ্রতি মাত্র তিনমাসের মধ্যেই ভুলে যাবে এবং আহতরা সুচিকিৎসার দাবিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে, এমনটা কেউ ভাবতেও পারিনি। জুলাই-আগস্টের শহীদ ও আহত সৈনিকরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, মুক্তির দিশারি। তারা অবহেলা-বঞ্চনার শিকারে পরিনত হলে জাতির গর্ব করার আর কিছুই থাকে না। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি সরকারের অবহেলা, সুচিকিৎসা ও সহায়তা বঞ্চিত হয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নামার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ডা. জাহেদুর রহমান বুধবার মধ্যরাতে প্রচারিত একটি কমেন্টারি ভিডিওর শিরোনাম বা থাম্বনেলে লিখেছেন, ‘আমরা অসভ্য, অকৃতজ্ঞ, আমাদের ক্ষমা নেই’। সরকারে নতুন নতুন উপদেষ্টা যুক্ত হচ্ছেন, তাদের অনেকেরই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে কোনো রকম অংশগ্রহণ নেই। যে ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশে তারা উচ্চ রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাসহ সম্মানজনক উপদেষ্টা পদ ভোগ করছেন, তারা যদি সেই বিপ্লবে আহত সৈনিকদের প্রতি সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বেখেয়াল হয়ে তাদেরকে বঞ্চনার শিকার হতে বাধ্য করেন, এর চেয়ে বড় পরিতাপের বিষয় আর কিছু নেই। ঘোষিত অনুদানের সামান্য এক লাখ টাকা পেতেও আহতদের ধরনা দিতে হবে কেন?
স্বৈরাচারের পতনের পর গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের তিনমাসে অনেক যৌক্তিক প্রত্যাশাই পুরণ হয়নি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট ভাঙ্গার মত জরুরি উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ব্যর্থতার পেছনে যে সব যুক্তি দেখানো হচ্ছে, তা হয়তো মেনে নেয়া যায়। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে হতাহতদের যথাযথ সম্মান, মর্যাদা এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিতে না পারার কোনো কারণ নেই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাসহ প্রাসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিষয় নয়। এটি সামগ্রিকভাবে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়। বুধবার পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আহতদের দেখতে গিয়ে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন, তা অপ্রত্যাশিত হলেও অস্বাভাবিক নয়। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি সারাহ কুকসহ কয়েকজন বিদেশি অতিথিকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে কার্যত পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। হুইল চেয়ারে, স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল থেকে আন্দোলনে আহত শত শত রোগী ৫-৬ ঘন্টা ধরে রাস্তা অবরোধের মধ্যে অর্ন্তবর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা সেখানে গিয়ে দাবি-দাওয়া পুরণের বিষয়ে আশ্বস্ত করার পর তারা হাসপাতালের বেডে ফিরে যায়। আহতরা সাংবাদিকদের কাছে যে সব বৈষম্য ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন, তা পুরো জাতির জন্য দু:খজনক। ১৬ বছর ধরে বঞ্চনার শিকার অনেক মানুষকে দাবি আদায়ের জন্য গত ৩ মাসে রাজপথে নেমে আসতে দেখা গেছে। এদের বেশিরভাগই এসেছে অর্ন্তবর্তী সরকারকে চাপে ফেলে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে। কিন্তু জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বীর যোদ্ধাদেরও সুচিকিৎসার মত মৌলিক ও অনিবার্য দাবি আদায়ে হাসপাতালের সয্যা ছেড়ে রাজপথে নেমে আসতে হলো! এমনটা কারো কাছে ন্যুনতম প্রত্যাশিত নয়। এর মধ্য দিয়ে দেশে যেমন সরকার সাধারণ মানুষের আস্থার সংকটে পড়তে পারে, পাশাপাশি বিদেশেও এই সরকারের ভাবমর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়বে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের পরিবারগুলোর প্রাপ্য সম্মান ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে যে দৈন্য ও গাফিলতি দেখা যাচ্ছে, তা অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত। ছাত্র-জনতার অবদান ও জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট অর্ন্তবর্তী সরকার কতটুকু ধারণ করছে, এর মধ্য দিয়েই তা প্রতিয়মান হচ্ছে। যে কেনো মূল্যে দ্রুততম সময়ে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ
ধামরাইয়ে দুই ইটভাটাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, ব্যাটারি কারখানার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন