ঢাকা   শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৬ পৌষ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। গত বৃহস্পতিবার সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এ নির্বাচন কমিশনে অন্য চার সদস্য হচ্ছেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ অবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্মসচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠন উপলক্ষে ৬ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটিতে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নাম প্রস্তাব করে। তারই আলোকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের উপর বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল আস্থা রাখতে চায় বলে ইতোমধ্যে বলেছে। বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠন করে ভোটের দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য বিগত দিনগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাকিদ দিয়ে আসছিল। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপির নেতৃবৃন্দ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এর মাধ্যমে দেশ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার মেয়াদের ১০০ দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়ার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে। দেখা যাচ্ছে, তাঁর ভাষণের কদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আশা করছে, এর মাধ্যমে নির্বাচনী যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে। দেশ নতুন করে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবেশ করবে। দেশের মানুষ দেখেছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিগত সাড়ে ১৫ বছরে কীভাবে একের পর এক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করে দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। ’১৪, ’১৮ এবং ’২৪-এ বিনাভোট, রাতের ভোট, ডামি নির্বাচন করে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য এ ধরনের প্রহসনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করেছে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকের যে তরুণ প্রজন্ম, তারা ভোট কি জিনিস জানে না। তারা ভোট দিতে পারেনি। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার এমন নজির বিশ্বে বিরল। শেখ হাসিনা যে তিনটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল, তার প্রত্যেকটি ছিল তার অনুগত এবং দলদাস। তারা হাসিনার আঙ্গুলি হেলনের বাইরে যেত না। একের পর এক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে এসব নির্বাচন কমিশন দেশকে হাসিনার ফ্যাসিসজমকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছে। মানুষ অবধারিতভাবেই জানত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার অনুগত দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর বিজয়ের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ যাকেই নমিনেশন দিত, সে নিশ্চিতভাবেই পাশ করত। নমিনেশন পাওয়া মানেই তার পাশ নিশ্চিত এবং ভোট ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এভাবে নির্বাচন করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। মূলত এর সূত্রপাত হয়, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে তুলে দেয়া নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মধ্য দিয়ে। এতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার ইচ্ছামতো দলদাস ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দলীয় সরকারের অধীনে প্রহসনের ভোট আয়োজন করে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছিল। গণতন্ত্রকে বিদায় করে দিয়েছিল। দুর্নীতি, খুন, গুম, ন্যায়বিচারহীনতাসহ সীমাহীন অনিয়মের মধ্যে দেশকে নিক্ষেপের দায় শেখ হাসিনা, বিচারপতি খায়রুল হক, তিন নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের মধ্য দিয়ে দেড় দশকের বেশি সময় ধরা চলা দেশের অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও আদালত সংস্কারের কমিশন গঠন করেন। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে কার্যত অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার সূচনা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ প্রশস্ত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার একজন সৎ ও দক্ষ ব্যক্তি। অন্য নিবার্চন কমিশনাররাও তাদের যোগ্যতাবলে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, মানুষ যাতে নিজের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সার্বেচ্চ চেষ্টা করবেন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার চেষ্টা চালাবেন। তার এই সদিচ্ছা বাস্তবায়নে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত প্রয়াসে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশনের উপর এখন অনেক দায়িত্ব। ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ভুয়া ভোটার বাদ দিয়ে একটি সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করে নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বচ্ছ ও দক্ষ সচিবালয়ে পরিণত করতে হবে। এজন্য যে ধরনের সহযোগিতা ও অর্থের প্রয়োজন, অর্থ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তা দ্রুত সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিদায়ের পর যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, তার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তারা যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে তারা দেশের ইতিহাসে ‘হিরো’ হয়ে থাকবেন।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শ্রীলঙ্কায় ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্যের অভিযোগে বৌদ্ধ ভিক্ষু গনানসারার কারাদণ্ড

শ্রীলঙ্কায় ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্যের অভিযোগে বৌদ্ধ ভিক্ষু গনানসারার কারাদণ্ড

ট্রাম্পের ঘুষের মামলায় সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ

ট্রাম্পের ঘুষের মামলায় সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ

সৎ ভাইকে ফাঁসাতে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে হত্যায় অভিযুক্ত বাবার আত্মসমর্পণ

সৎ ভাইকে ফাঁসাতে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে হত্যায় অভিযুক্ত বাবার আত্মসমর্পণ

৭ ডিগ্রীতে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা,বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

৭ ডিগ্রীতে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা,বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি

শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি

সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত : পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ

সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত : পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ

নিকোলাস মাদুরোর তৃতীয় শপথ, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের আশঙ্কা

নিকোলাস মাদুরোর তৃতীয় শপথ, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের আশঙ্কা

সুপার কাপ ফাইনালে বার্সা-রিয়াল মহারণ

সুপার কাপ ফাইনালে বার্সা-রিয়াল মহারণ

কার সাথে সংসার করছেন জয়া?

কার সাথে সংসার করছেন জয়া?

২৪ বিপ্লবের শহীদদের মতো বিডিআরের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

২৪ বিপ্লবের শহীদদের মতো বিডিআরের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

টানা চার ম্যাচে রোনালদোর গোল,নতুন বছর জয় দিয়ে শুরু নাসেরের

টানা চার ম্যাচে রোনালদোর গোল,নতুন বছর জয় দিয়ে শুরু নাসেরের

শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ

শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ

টঙ্গীবাড়ীতে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম

টঙ্গীবাড়ীতে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম

জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন

জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন

চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি

কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান

কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই

টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার

টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার

আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট

আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট