ঢাকা   বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না : তাই ময়দানে নেমে পড়েছে সরাসরি বিজেপি

Daily Inqilab মোবায়েদুর রহমান

০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

সর্বশেষ অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে, বিপ্লব উদ্ভূত ইউনূস সরকারকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়ার যে কাজটি এতদিন দিল্লি থেকে হাসিনা এবং বাংলাদেশে তার ছদ্মবেশী এজেন্টরা করে আসছিল সেটি প্রথমে কিছুটা বুদবুদের সৃষ্টি করলেও সেটা সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। অদূর ভবিষ্যতে হাসিনা এবং বাংলাদেশে তার চেলাচামুন্ডারা যে এই সরকারকে ফেলতে পারবে না সেটি দিল্লির হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার বিলক্ষণ বুঝে গেছে। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ভালো করে ভিজিট করে আমি বুঝতে পেরেছি যে, শুধুমাত্র হাসিনার ওপর বিজেপি সরকার বিশেষ করে তাদের প্যারেন্ট সংগঠন আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ) নির্ভর করলে কোনো লাভ হবে না। এখন তারা বুঝতে পেরেছে যে, ভারতকে খেলার মাঠে সরাসরি না নামালে বাংলাদেশকে আবার কব্জা করা যাবে না। তারা ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ইসকন থেকে বহিষ্কারের নাটক সাজিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মাঠে নামিয়েছিল। ইসকন ১৯৬৬ সালে জন্ম থেকেই একটি ঘাতক ও সন্ত্রাসী সংগঠন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশের চট্টগ্রামে কিছুটা হৈচৈ ফেললেও বড় ধরনের আঘাত হানতে পারেনি। তবে তারা ভেবেছিল যে, দুই একজন বাংলাদেশি মুসলমানকে হত্যা করতে পারলে তার চেইন রিঅ্যাকশন হিসেবে মুসলমানরাও হিন্দুদের ওপর পাল্টা আঘাত করবে। ফলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হবে। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ওঁৎ পেতে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং তার ভারতীয় জেমস বন্ড নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। 
এই পরিকল্পনা নিয়ে দিনে দুপুরে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করার পর তারা বুঝতে পারে যে, পরিস্থিতি ব্যাকফায়ার করেছে। (কোনো কোনো গণমাধ্যমে কুপিয়ে হত্যার পরিবর্তে বলা হয় যে, সাইফুল ইসলামকে আরো নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ‘নৃশংসভাবে’ হত্যার পরিবর্তে ব্যবহৃত শব্দটি আমরা উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম)। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ জনগণের সেন্টিমেন্ট ভারতের বিরুদ্ধে চলে যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে যে প্রবল ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি হয়েছে সেটি বাংলাদেশের বিগত ৫৪ বছর তো বটেই, পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরেও দেখা যায়নি। এটি আঁচ করতে পেরেই ভারত প্রধান খেলোয়াড়ের ভূমিকায় মাঠে নেমেছে।
বাংলাদেশের মানুষ বিপন্ন বিস্ময়ে লক্ষ করছেন যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস নামক একজন সাধুবেশী দুর্বৃত্তের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ মোদি সরকার এবং দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি কোমর বেঁধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অধিকাংশ গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিষ ছড়াচ্ছে। তাদের মুখে যা আসে তাই বলে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী এই মর্মে হুমকি দিয়েছিলেন যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দিলে বাংলাদেশকে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে। তারা প্রথমে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলার সীমান্ত সিল করে দেবেন। অর্থাৎ দুই বাংলার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে। অতঃপর ভারত থেকে যে সমস্ত পরিষেবা বাংলাদেশে আসে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। অতঃপর পশ্চিমবঙ্গ অবরোধ করা হবে।
শুভেন্দু অধিকারীর পরের স্তরের নেতারা হুমকি দেন যে, ভারত থেকে বাংলাদেশে পিঁয়াজ, ডাল, কাঁচামরিচ, মসলা ইত্যাদি পাঠানো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা আরো হুমকি দেন যে, রবিবার ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত শহর পেট্রাপোলে বিজেপির উদ্যোগে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার সন্ধ্যার পর ভারতের ৪/৫টি দৈনিক পত্রিকা পড়লাম। কিন্তু সেখানে পেট্রাপোল বর্ডারে কোনো সভার খবর দেখতে পেলাম না। বলা হয়েছিল যে, ঐ সভায় শুধুমাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিই উত্থাপিত হবে না, বরং গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সরকার পতনের পর যে হিন্দু নির্যাতন (এটি ভারতীয় বয়ান) শুরু হয়েছে এবং যেটি আজও চলছে, সেটি বন্ধ না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। 
॥দুই॥শুভেন্দু অধিকারীর আল্টিমেটামের পর ৫ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। সীমান্ত বন্ধ হয় নাই, পিঁয়াজ-মরিচসহ অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করাও বন্ধ হয়নি। হবে কীভাবে? বাংলাদেশকে এসব হুমকি দিয়ে লাভ নাই। ভারত যদি মনে করে থাকে যে, বাংলাদেশের সাথে ব্যাবসা-বাণিজ্য বন্ধ করলে শুধুমাত্র বাংলাদেশই ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাহলে তারা দারুণ ভুল করছে। বাংলাদেশ ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি ডেসটিনেশন। অর্থাৎ ভারত পৃথিবীজুড়ে যা রপ্তানি করে তার এক চতুর্থাংশ করে বাংলাদেশে। এখান থেকে তারা বৈধ পথে রপ্তানি করে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া অবৈধ পথে অর্থাৎ চোরাচালানের মাধ্যমে রপ্তানি করে বৈধ পথের রপ্তানির দ্বিগুণ।
বাংলাদেশে বৈধ ভিসা ছাড়া অন্তত ৫ লক্ষ (মতান্তরে ১০ লক্ষ) ভারতীয় চাকরি করে। তারা তাদের আয় ভারতে পাঠিয়ে দেয়। ভারত যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করে তাহলে তাদের এই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। 
আমরা উদ্বেগ নয়, স্তম্ভিত বিস্ময়ে লক্ষ করছি যে, পশ্চিমবঙ্গের রিপাবলিক বাংলা, দি ওয়ালসহ একাধিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্ররোচিত করছে। অবাক ব্যাপার হলো, ইন্ডিয়া টুডে নামক মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত পত্রিকাও এই বাংলাদেশ বিরোধী ব্যান্ড ওয়াগনে শামিল হয়েছ। এদের উস্কানিমূলক কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ আমার কম্পিউটারে ডাউনলোড করা আছে। এরা এই মর্মে উস্কানি দিচ্ছে যে, ওদের কথিত ভিত্তিহীন হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে ভারত সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এই সামরিক ব্যবস্থার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং এই চারটি জেলাকে হয় ভারতের সাথে যুক্ত করা, না হয় স্বাধীন করে দেওয়া। 
শুভেন্দু অধিকারী আরো হুমকি দিয়েছেন যে, ভারতে কোনো বাংলাদেশির চিকিৎসা করা হবে না। বাংলাদেশিদের ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। তারা করাচি বা পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তান যাক। অবশ্য তার মতে, পাকিস্তানিদের সাথে তার ভাষায় ইউনূস ইতোমধ্যেই দোস্তি করেছেন। বাংলাদেশিদের ভারতে যেতে বারণ করার প্রয়োজন নাই। অতি সম্প্রতি কলকাতা গিয়েছিল আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় দম্পতি। তারা ফিরে এসে বলেছে যে, কলকাতা নিউ মার্কেট বলতে গেলে ফাঁকা। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তাকে বলেছেন যে, কলকাতা নিউ মার্কেটের ৭০ শতাংশ খরিদ্দারই বাংলাদেশের। এখন পলিটিক্সের কারণে আমাদের ব্যবসা মার খাচ্ছে।
কলকাতার অন্তত দুইটি চ্যানেলে জোরে সোরে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে সৈন্য পাঠিয়ে দাও এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম দখল করো। ওদের এইসব বয়ানে আমি অবাক হয়ে যাই। এটা ১৯৭১ সাল নয়। এটা ২০২৪ সাল। বাংলাদেশে সৈন্য পাঠিয়ে দেওয়া ছেলের হাতের মোয়া নয়। অথবা ডাল ভাতও নয়। তাদের মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশের দিকে কালো থাবা বিস্তার করলে তৎক্ষণাৎ ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেক বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমাংশ এবং পশ্চিম বাংলাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই বিচ্ছিন্নতার কাজে বাংলাদেশের বন্ধুর অভাব হবে না। ভারতই বরং তখন বন্ধুহীন হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যেই নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা আর ভারতের বন্ধু নাই। ঐদিকে চীনের মতো উদীয়মান পরাশক্তি এবং পাকিস্তানের মতো সামরিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র ভারতের চরম বৈরী। এসব কথা আমরা বলতাম না, যদি না চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মতো একজন অজনপ্রিয় মানুষকে নিয়ে ভারত এই হম্বি তম্বি না করতো। 
তার চেয়েও বড় কথা এই যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস হিন্দু হলেও তিনি তো ভারতের নাগরিক নন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তাকে নিয়ে এত লম্ফ ঝম্প কেন? সেটি কি নেহায়েত হিন্দু বলে? তাহলে তো বাংলাদেশ দাবি করতে পারে যে, ভারতের ২০ কোটিরও বেশি মুসলমানদের ওপর যে অকথ্য জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম নির্যাতন করে অপর দেশের সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে নাক গলানোকে বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দ্বিচারিতা বলে সঠিকভাবেই আখ্যায়িত করেছেন। 
আমরা আরো ভেবে বিস্মিত হই যে, ভারতের মতো এত বড় দেশের কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমন সব বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন, বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নাই। বাংলাদেশের ওপর তাদের পার্লামেন্ট অর্থাৎ লোকসভায় ডিবেট হয়েছে। তাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একদিন ভারতীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শংকর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে স্পেশাল মিটিং করেছেন। তার পরদিন লোকসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শংকর বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত কঠোর নজরদারি করছে।
ভারতের আরো একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। শেখ হাসিনার মাফিয়া স্বৈরাচার ভারতকে বহুমুখী করিডোর দিয়েছে। এর ফলে উত্তর পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যের সাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বা আগরতলার দূরত্ব ১৬০০ কিলোমিটার থেকে ৫০০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। এছাড়া ভারতের পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলে পণ্য বা মানুষ পরিবহনের সময় ও খরচ ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। যদি ভারত বাড়াবাড়ি করে তাহলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আওয়াজ তুলবেন, ভারতকে দেওয়া সব রকম করিডোর অর্থাৎ স্থল, রেল ও নৌ করিডোর অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হোক। আরো আওয়াজ উঠবে, অনুপ চেটিয়াসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী নেতৃবৃন্দকে হাসিনা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশের নাগরিক হাসিনার বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিচারের জন্য অবিলম্বে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হোক। 
॥তিন॥ভারত তিঁলকে তাল করেই যাচ্ছে। বিজেপি সহ আরো কয়েকটি বিজেপির অনুসারী দল আওয়াজ তুলেছে যে, অবিলম্বে ভারতে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করা হোক। ইতোমধ্যেই কলকাতার জেএন রায় নামক হাসপাতাল ঘোষণা করেছে যে, তারা আর বাংলাদেশীদের কোনো চিকিৎসা করবে না। অবশ্য রবিবারের দৈনিক ইনকিলাবে বলা হয়েছে যে, এ পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়নি। কলকাতার অপর একটি টিভি চ্যানেলে গত শনিবার রাতে একটি ভিডিও ফুটেজ বারবার সম্প্রচার করা হয়েছে। ঐ ফুটেজে দেখানো হয়েছে যে, বাংলাদেশের বুয়েটের ছাত্ররা ভারতীয় পতাকা পদদলিত করেছে। বাংলাদেশের আইটি বিশেষজ্ঞরা তৎক্ষণাৎ সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বলেছে যে, এটি একটি বানানো ফুটেজ। ভিডিও এডিটিংয়ের মাধ্যমে এটি দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতীয় জনগণকে উত্তেজিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে।
ব্যর্থ প্রচেষ্টা এজন্য বললাম যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী শুক্র ও শনিবার পরপর দুই দিন বলেছেন যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ভারতও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সাথে কথা বলতে হলে সেটি করবে ভরতের কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের প্রাদেশিক সরকার বা রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে করণীয় কিছু নাই। পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণেরও এব্যাপারে কোনো কিছু করার নাই। 
॥চার॥শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি করেছেন। এটি কোনো প্রোপাগান্ডা নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার এই বিবৃতি ছাপা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম বলে কথিত কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাতেও তার বিবৃতি ছাপা হয়েছে। ঐদিকে যখন এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কোপানো হচ্ছিল তখন হত্যাকারীদের সমর্থনে জড়ো হওয়া কয়েক শত মানুষ উচ্চকণ্ঠে যে শ্লোগান দিয়েছে, তার দুটি শ্লোগান হলো, ‘জয় শ্রীরাম’ এবং ‘জয় শেখ হাসিনা’। 
ওরা বলে যে বাংলাদেশের বুয়েটে নাকি ভারতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। আসলে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের জুড়ি নাই। আমরা নয়, ওরাই কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে অভিযান করেছে এবং বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে সেটি পুড়িয়েছে। এছাড়াও ওরা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বড় সাইজের কয়েকটি কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। বাংলাদেশ অবশ্য এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। 
এসব ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। এখন ভারতকেই বেছে নিতে হবে যে, তারা বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চায়, নাকি শত্রুতা? বাংলাদেশ দুই রকম পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো এই যে, ইউনূস সরকারকে ভারতের ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। এসব মিনমিনে ভাষা, যেটাকে বলা হয় Diplomatic Jargon,  অর্থাৎ কূটনৈতিক পরিভাষা তাদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়, যারা সিনসিয়ার এবং অন্যকে সম্মান করতে জানে। আমরা ভারতের সাথে সার্বভৌম সমতায় বিশ্বাস করি। আমি ইংরেজি ভাষায় বলতে চাই, Gone are the days of Sheikh Hasina. . এখন এসেছে তরুণদের যুগ। এই তরুণরা মাথা নোয়াতে জানে না।
Email: [email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ডেঙ্গু থেকে মুক্তি চাই
ভারতের ষড়যন্ত্রে কোনো কাজ হবে না
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে ইসকন-বিজেপি খেল দেখাতে চাইছে
ভারতের উস্কানির ফাঁদে পা দেয়া যাবে না
পোশাক শিল্পে স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ