ঢাকা   বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে ইসকন-বিজেপি খেল দেখাতে চাইছে

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশে দুষ্টু ভূতের উৎপাত চলছেই। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরী করে তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ঘাড় মটকে দিতে চায়। গত ১৬ বছরে এ জাতির ঘাড়ের উপর চেপে বসা ছদ্মবেশি হিন্দুবাদের ভূত এখন শর্ষে, মরিচ পোড়ার ঝাঁঝে, ছেঁড়া জুতা কামড়ে পালানোর আগে সবকিছু তছনছ, উলটপালট করে দিয়ে গেছে। ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া প্রতি বিপ্লবের কারসাজি ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে একের পর এক ব্যর্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা বয়ান গলা চড়াতে চড়াতে এখন উন্মাদের মতো আচরণ শুরু করেছে। ইসকনের গোয়েন্দাবৃত্তি ও বিতর্কিত কর্মকা- নিয়ে আলাপটা নতুন নয়। আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন এবং পিনাকী ভট্টাচার্যরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের কর্মকা- নিয়ে তথ্যবহুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন। তাদের সম্পর্কে আমাদের ছাত্র-জনতা ও সচেতন মানুষের কনসেপশন যথেষ্ট পরিষ্কার বলেই শত অপপ্রচার-প্রোপাগান্ডায়ও মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে না। ভারতের ‘গোদি মিডিয়া’ ও ‘মলম বিক্রেতা’ সাংবাদিকদের বাকোয়াজ লাফলাফি এখন সাধারণ নেটিজেনদের কাছে বিনোদনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ভাঙ্গা ঢোলের তালে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারি বাংলাদেশ সীমান্ত অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। তাদের তর্জন-গর্জনকে ভয় পাওয়া দূরের কথা, পাত্তা দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে যে ধরণের নিরীক্ষা, যোগাযোগ ও সমঝোতা থাকার কথা, ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকরা তা থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে। প্রতিবেশী ও পররাষ্ট্র রীতির প্রশ্নে তাদের ঘোষিত নীতি এবং বাস্তব চর্চার মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়না। প্রায় সব আঞ্চলিক-আর্ন্তজাতিক পরাশক্তি যেখানে অপেক্ষাকৃত বড় শক্তির মোকাবেলায় নিজেদের সামর্থ্য বৃদ্ধির প্রয়োজনে দুর্বল প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি ও সমঝোতার পথ বেছে নিতে দেখা যায়, সেখানে ভারত যেন এক ভয়ঙ্কর ব্যতিক্রম। বৃহৎ প্রতিবেশী চীন কিংবা এক সময়ের অংশীদার পাকিস্তানের সাথে ভারতের বৈরীতার পেছনে বড় ধরণের কোনো নিরাপত্তা কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়না। পাকিস্তান কখনোই ভারতের নিরাপত্তা হুমকি নয়। চীনের সাথে ভারতের শত শত বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অটুট রয়েছে। অতীতমুখী ও হিন্দুত্ববাদী গোড়ামিপূর্ণ রাজনৈতিক ধারণা আঁকড়ে থেকেই ভারতীয় শাসকরা তার আঞ্চলিক অংশীদারদের বৈরী প্রতিপক্ষে পরিনত করেছে। চীন-পাকিস্তানের কথা বাদ দিলেও নিকটতম প্রতিবেশী বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভূটান, মালদ্বীপকে নিজেদের আস্থায় রাখতে না পারলেও এক সময় ইসলামোফোবিক এজেন্ডায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করে ভারতের বশংবদ পুতুল শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে ১৬ বছর ধরে একদিকে বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতার গলাবাজি করেছে, অন্যদিকে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা, পানি আগ্রাসন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের বানানা রিপাবলিক সাজিয়ে একতরফা ফায়দা লুটেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই লুন্ঠন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ধসে যাওয়ার পর ভারতীয় শাসকশ্রেণীর যেন মতিভ্রম ঘটেছে।

গত ১৬ বছর এবং তার আগের ৩৬ বছর মিলে স্বাধীনতাত্তোর অর্ধ শতাব্দীর বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্য, সহাবস্থান, সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতীয়রা বাংলাদেশকে কখনোই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে দিতে চায়নি। শেখ মুজিবের একদলীয় স্বৈরাচারি হয়ে ওঠা, জিয়াউর রহমান হত্যাকা-ের পর শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মদতে ৯ বছর ধরে এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসন চালিয়ে যাওয়া এবং নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর দেশে একটি জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সফল হওয়ার বিপরীতে রাজনৈতিক বিতন্ডা, নির্বাচিত সরকারকে একদিনের জন্যও শান্তিতে থাকতে না দেয়ার বার্তা এবং পরবর্তী দেড় দশক ধরে রাজিনীতিতে ভয়ঙ্কর সব ঘটনা-দুর্ঘটনার টালমাটাল অবস্থার পেছনে ভারতের নেপথ্য ভূমিকা ছাড়া সম্ভব ছিল না। ভারতীয় গোয়েন্দা তৎপরতা, মিডিয়া ও সাংষ্কৃতিক ইনস্টলেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে জাতীয় স্বার্থ ও রাজনৈতিক প্রশ্নে স্পষ্টভাবে বিভক্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি, হানাহানি ও নির্মূলের রাজনীতি উস্কে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে জনবিচ্ছিন্ন ভারতপন্থী পাপেট রাজনৈতিক শক্তির হাতে তুলে দিয়ে তা লুটেপুটে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমান অর্থ পাচার হয়েছে, তার বেশিরভাগের বেনিফিশিয়ারি হয়েছে ভারত। সুইফ্ট কোড হ্যাক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি থেকে শুরু করে প্রকাশিত-অপ্রকাশিত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে লুণ্ঠিত অর্থের বেশিরভাগই ভারতে চলে গেছে বলে অনুমান করা যায়। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আড়াই মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নিয়ে বড় ধরণের ঘাপলা দেখা দিলেও সরকারের চাপে তা গণমাধ্যমে জোরালোভাবে উঠে আসেনি। মে মাসের ১৪ তারিখে নর্থইস্ট নিউজ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘আর ইন্ডিয়ান হ্যাকার্স বিহাইন্ড দিস মান্থ’স বাংলাদেশ ব্যাংক হেইস্ট ইনভলভিং বিলিয়নস?’ এই শিরোনামের মানে দাঁড়াচ্ছে, ‘এ মাসে সংঘটিত বাংলাদেশ ব্যাংকের শত শত বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরির সাথে কি ভারতীয় হ্যাকাররা জড়িত?’ বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের রিজার্ভ চুরি এবং চাঞ্চল্যকর ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনাগুলোর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরী কিংবা সাইবার নিরাপত্তায় নিয়োজিত ভারতীয় আইটি প্রতিষ্ঠানের যোগসুত্র ধামাচাপা দেয়া হলেও বিদেশি সংস্থা ও আদালত সেসব ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদেরকেই অভিযুক্ত করেছে। সে সব অভিযোগের খন্ডন কিংবা প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের কোনো তাগিদ ভারতের পুতুল সরকারের মধ্যে দেখা যায়নি। বশংবদ পুতুল শেখ পরিবার শাসিত বাংলাদেশ তাদের জন্য ছিল সোনার ডিম পাড়া হাঁস। এ দেশের দেড় কোটি মানুষ প্রবাস থেকে যে পরিমান রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দেশের তৈরী পোশাক খাতের রফতানিকারক উদ্যোক্তারা যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছেন, তার অর্ধেকই নানাভাবে ভারতে পাচার হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে কিংবা আইনগত ব্যবস্থা নিতে না পারেন, সে জন্য রাবার স্ট্যাম্প সংসদে দায়মুক্তির আইন পাস করিয়ে নিয়েছিল। এসব নিয়ে দেশের কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা নাগরিক সমাজের কথা বলার কণ্ঠকে রুদ্ধ করার অবিশ্বাস্য সব নিবর্তনমূলক তৎপরতা চালিয়েছিল স্বৈরাচারি সরকার।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে নয়, একই সঙ্গে হাসিনার মাফিয়া চক্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধেও। এ দেশের মানুষ লাখো প্রাণের বিনিময়ে একাত্তরে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুরুর আয়োজনকে যারা ভন্ডুল করেছিল চব্বিশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তাদের বিরুদ্ধেই চরম বার্তা। বাংলাদেশ তার কোনো প্রতিবেশীর সাথে বৈরীতা চায় না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়। এ নীতি ভুল না সঠিক সে বিকর্ত আলাদা প্রসঙ্গ। ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত নতুন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ভারতকে প্রথমেই যে বার্তা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। তিনি বলেছেন, ভারত যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, মিয়ানমারসহ পুরো অঞ্চলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। তিনি একজন প্রাজ্ঞ, দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব, তার প্রজ্ঞা ও বিশ্ববীক্ষা বিশ্বের অগ্রসর সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল। বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন একজন সাধারণ মানুষও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে বাংলাদেশে ভারতীয়দের নীল নকশা ও ষড়যন্ত্র সক্ষম। সেখানে প্রফেসর ইউনূসের তথ্যের ভান্ডার ও প্রজ্ঞা আরো অনেক গভীর ও বিস্তৃত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ভারতীয় ডিপ স্টেট ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে একটি গণবিরোধী দানবীয় শক্তিকে পুতুলের মতো ব্যবহার করেছে। সে সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের অনাস্থা ও ক্ষোভের বিষয়টি তাদের অজানা নয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে সে দেশে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি এ দেশের সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলো ভালোভাবে নেবে না, এটা জেনেও তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চেয়ে শেখ পরিবারকে দাবার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে। গত চার মাসে তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুতুল সরকারের সময়ও তারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হুমকি, বিদ্বেষ ও আক্রমণাত্মক কথা বলা অব্যাহত রেখেছিল। সেসব হুমকি তাদের জাতীয় আধিপত্যবাদী নীতিরই অংশ। বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্য টিকিয়ে রাখার মূল টুল হচ্ছে, এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন-নির্যাতনের একটি কাল্পনিক বয়ান সৃষ্টি করে সরকারকে চাপে রেখে অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা। গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ভয় দেখিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা কিংবা পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে পুর্নবাসিত করার ধারাবাহিক বহুমাত্রিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা এখন বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ কিংবা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে বাংলাদেশকে ডিস্ট্যাবিলাইজ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে।

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠঅ এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসণের মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশে সফ্ট ইনভেনশন প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিল। বাংলাদেশে ভারতের সফ্ট ইনভেনশন নিয়ে সেখানে এক ধরণের জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠেছিল, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অত্যন্ত লাভজনক কলোনি বাংলাদেশ হাতছাড়া হওয়ার পর এখন তা পুনরুদ্ধারে সামরিক হস্তক্ষেপের সুপারিশ করছে। বিজেপি’র সাথে অন্যসব বিষয়ে রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও জাতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মত মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও এখন বিজেপির বাংলাদেশবিরোধী আগ্রাসী নীতিকে সমর্থন করতে দেখা যাচ্ছে। এটি আসলে ভারতের হিন্দুত্ববাদী পপুলিস্ট রাজনীতির প্রতি মগজধোলাই প্রাপ্ত সাধারণ মানুষের সমর্থন ও আগ্রহের ফল। এ কারণেই বাংলাদেশের উপর আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে বিজেপি, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। একই সমান্তরালে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদীদের লালিত পালিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ও ইসকনের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত ও জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। একদিকে আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের পক্ষে ভারতে সাম্প্রদায়িক ঐক্য অন্যদিকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ছাত্র-জনতার রক্তের মূল্য অটুট রাখতে বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য এ দেশে বারবার রক্ত ঝরানোর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এই ঐক্য এবার যেকোনো আগ্রাসী শক্তির হাত ভেঙ্গে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা সমন্নোত রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ভারতীয় পুতুল ক্রীড়নক শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ১৬ বছরের শোষণÑনিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি প্রাথমিক বিজয় অর্জনে সক্ষম হলেও এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধক্ষেত্রে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। ওরা শুধু শক্তি ও আধিপত্য বোঝে, শান্তি ও সমঝোতা বোঝে না। ওরা পাকিস্তানকে কাবু করতে পারেনি। ওরা চীনের সাথে বারবার মার খাচ্ছে। বাংলাদেশ সব সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রাখলেও তারা বাংলাদেশকে বন্ধু নয়, বশংবদ করে রাখতে চায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ইন্ধন দিয়ে আর সফল হওয়া যাবে না। বাবরি মসজিদ, জ্ঞানবাপ্পি মসজিদের ধারাবাহিকতায় ভারতে রাষ্ট্রীয় মদতে একের পর এক মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানানোর জিগির তোলা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে উত্তর প্রদেশের সামভালে একটি মসজিদ ভাঙ্গা নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনায় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে অন্তত ৪ জন মুসলমান হত্যার শিকার হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে গত চারমাসে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কিংবা পুলিশের হাতে একজন হিন্দু নিহত হওয়ার মত ঘটনা না থাকলেও হিন্দুত্ববাদী গোদি মিডিয়া বাংলাদেশে হিন্দু নিধনের শতভাগ মিথ্যা প্রপাগান্ডার উপর ভর করে সীমান্তে রোডমার্চ, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও আন্তর্জাতিক পিস কিপার মোতায়েনের মত গাজাখোরি হুমকি দিয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক জেনোসাইড ওয়াচ ভারতে মুসলিম গণহত্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে মুসলমানদের হত্যা করা হলেও ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল, মুসলিম উম্মাহ কিংবা জাতিসংঘের এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় আমরা যেভাবে ফিলিস্তিনের পতাকাকে উচ্চে তুলে ধরেছি, ভারতের নাগপাশমুক্ত, বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশকে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতা সম্পর্কে অবশ্যই কথা বলতে হবে। আমরা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য গড়ে তুলেছি তা নস্যাৎ করে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। এ দেশের হিন্দু এবং এক সময়ের আওয়ামী সমর্থক ও নেতাকর্মীরা তা বুঝতে না পারলে, হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে তারা এবার দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের অনিবার্য প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব চলছে, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ডেঙ্গু থেকে মুক্তি চাই
ভারতের ষড়যন্ত্রে কোনো কাজ হবে না
ভারতের উস্কানির ফাঁদে পা দেয়া যাবে না
পোশাক শিল্পে স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে
শেখ হাসিনাকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না : তাই ময়দানে নেমে পড়েছে সরাসরি বিজেপি
আরও

আরও পড়ুন

কোটালীপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

কোটালীপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

সাটু‌রিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার

সাটু‌রিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার