জাতীয় স্বার্থেই অন্তর্বর্তী সরকারকে অকুণ্ঠ সহযোগিতা দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
বাংলাদেশ তার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর দেশ একটি সাহসী এবং রূপান্তরমূলক যাত্রায় পা রেখেছে। এই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান কেবল একটি আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং ন্যায়বিচার, সমতা এবং গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি জনগণের দীর্ঘকাল ধরে দমিয়ে রাখা আকাক্সক্ষার ফলাফল। পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে দেশ বছরের পর বছর ধরে সিস্টেমিক দুর্নীতি, স্বৈরাচারী শাসন এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছিল, যা জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। বিপ্লব এক নতুন আশার প্রতীক হয়ে উঠেছিল, যেখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ একত্রিত হয়ে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং আইনের শাসনের ভিত্তিতে একটি উন্নত ভবিষ্যতের দাবি জানায়।
এই রূপান্তরকালীন সময়ে, ৮ আগস্ট নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা হয়ে ওঠে। মাইক্রোফিন্যান্সের অগ্রদূত এবং দারিদ্র্য বিমোচনের প্রবক্তা হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ড. ইউনূস কেবল তার দূরদর্শী নেতৃত্বই নয়, বরং সুবিধাবঞ্চিতদের ক্ষমতায়নের প্রতি তার অঙ্গীকারের জন্য নিখুঁত খ্যাতি নিয়ে এই ভূমিকা গ্রহণ করেন। তার বৈশ্বিক অবস্থান এবং মর্যাদা দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আস্থা জাগিয়েছে, যা বাংলাদেশকে এই জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ে নতুন আশাবাদ নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ড. ইউনূস তার দক্ষ উপদেষ্টা দলের সহযোগিতায় পতিত শাসনের রেখে যাওয়া বিশাল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সময় নষ্ট করেননি। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, সিস্টেমিক দুর্নীতি এবং দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাহসিকতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা অর্থনীতি স্থিতিশীল করা, শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে দেশের ভাবমর্যাদা পুননির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এই সরকারের প্রচেষ্টা শুধু শাসন নয়, বরং গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারে একটি সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির প্রতীক।
দেশ যখন টেকসই উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের দিকে তার পথ নির্ধারণ করছে, তখন ড. ইউনূসের নেতৃত্ব জনগণের একটি নতুন শুরু করার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি কয়েক দশকের অ্যাডভোকেসির উপর ভিত্তি করে তার বৈশ্বিক খ্যাতি তাকে এই রূপান্তরমূলক যুগে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অনন্যভাবে উপযুক্ত করে তুলেছে। দূরদর্শী নীতিনির্ধারণ এবং জনগণকে ক্ষমতায়ন করার নীতির সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা আশা, অগ্রগতি এবং সবার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
১. অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন: বাংলাদেশের সমস্যাগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য বিস্তৃত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কঠোর আর্থিক নীতি, ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং স্টার্টআপগুলোকে উন্নতির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করছে এবং বস্ত্র, প্রযুক্তি, এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের সম্ভাবনা তুলে ধরছে। এর পাশাপাশি, সরকার মাইক্রোফিন্যান্স খাতকে নতুন করে উজ্জীবিত করেছে, যা ঐতিহাসিকভাবে লাখ লাখ সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশিকে ক্ষমতায়ন করেছে। লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোকে সাশ্রয়ী ঋণ প্রদান করা হচ্ছে, যা তাদের ছোট ব্যবসা শুরু করতে এবং জীবিকা উন্নত করতে সহায়তা করছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করে না বরং সামাজিক সমতা ও অন্তর্ভুক্তিকেও উৎসাহিত করে।
২. শাসন ব্যবস্থার সংস্কার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটি হলো, পূর্ববর্তী প্রশাসনের রেখে যাওয়া দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার জন্য সংস্কার কার্যক্রম চালানো। শিক্ষা খাতে, পুরনো পাঠ্যক্রমকে আধুনিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য সংস্কার চালু করা হয়েছে এবং সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে, নতুন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা এবং নি¤œ আয়ের পরিবারের জন্য বীমা কভারেজ বাড়ানোর মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন চলছে। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বাড়ানোর জন্য সরকার সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। একটি শক্তিশালী দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালু করা হয়েছে, যেখানে অবৈধ কর্মকা-ে জড়িত ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার চলছে। ডিজিটাল শাসন উদ্যোগগুলো শুরু হয়েছে, যা প্রশাসনিক অদক্ষতা কমিয়ে জনগণের জন্য জনসেবা আরও সহজলভ্য ও ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তুলছে। এই সংস্কারগুলো এমন একটি সরকারের ভিত্তি স্থাপন করছে, যা সততা, দক্ষতা এবং জনগণের সেবায় নিবেদিত।
৩. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন: অগ্রগতির জন্য শান্তি এবং নিরাপত্তা অপরিহার্য জেনে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ক্ষমতায়ন করেছে। অপরাধ দমন এবং সংগঠিত অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক মোকাবিলায় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় সম্পদ এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা দমন, নাশকতা প্রতিরোধ এবং সরকারকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো প্রচেষ্টা মোকাবিলার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা জনসাধারণের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে। জাতীয় পর্যায়ে, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে, যা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিচিত।
৪. আন্তর্জাতিক ভাবমর্যাদা নির্মাণ: অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের প্রবক্তা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈশ্বিক সুনাম কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচারাভিযান গ্রহণ করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি সংস্কার ও অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন সহায়তা আকর্ষণ, লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি অর্জন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকার বিদেশি মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণার মোকাবিলা করতে ইতিবাচক পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরছে। তারা দেশের দৃঢ়তা, সম্ভাবনা এবং দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্থিতিশীল ও উদীয়মান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরছে।
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি দায়িত্বশীল এবং অগ্রসর জাতি হিসেবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পুনরায় তার অবস্থান ফিরিয়ে নিচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কেবল দেশীয় স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেয় না, এটি বৈশ্বিক কাঠামোর সঙ্গে সংহত হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়, যা দেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করছে।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের চ্যালেঞ্জ
১। অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চাভিলাষী সংস্কার কর্মসূচি অভ্যন্তরীণভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত স্বার্থগোষ্ঠী, রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানী এবং প্রতিবন্ধকদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। পূর্ববর্তী শাসনের অধীনে পৃষ্ঠপোষকতার যে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল, তা কয়েক দশক ধরে এই প্রতিপক্ষদের উৎসাহিত করেছে। সরকার এই কাঠামোগুলো ভাঙতে কাজ করছে, আর স্বার্থান্বেষী মহল তাদের সুবিধা এবং ক্ষমতা রক্ষার জন্য সক্রিয়ভাবে বাধা দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি হলো ভুল তথ্য প্রচারণা, যা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা দুর্বল করার জন্য তৈরি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ভুয়া খবর, আংশিক সত্য এবং উসকানিমূলক প্রচারণার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই প্রচারণাগুলো সাধারণ মানুষের হতাশা এবং অনিশ্চয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তি এবং বিভাজন তৈরি করছে। সরকারের পদক্ষেপগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে, অর্জনগুলোকে খাটো করতে এবং বিরোধিতাকে বাড়াতে মিথ্যা গল্প প্রচার করা হচ্ছে।
পূর্ববর্তী শাসনের অনুগত উপাদানগুলো অপরাধী নেটওয়ার্কের সঙ্গে সহযোগিতা করে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের ষড়যন্ত্র করছে। বিক্ষোভ, ধর্মঘট এবং সহিংস বিক্ষোভের মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এই সংগঠিত অস্থিরতা কেবল শান্তির জন্য হুমকি নয়; এটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং উন্নয়ন উদ্যোগ থেকে সরকারের সম্পদকে অন্যত্র ব্যয় করতে বাধ্য করছে।
২। বিদেশি সমর্থিত অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র: বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কিছু গোষ্ঠী বিদেশি শক্তির সঙ্গে একত্রিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এই জোটগুলো প্রায়শই আদর্শগত সহানুভূতি বা আর্থিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এবং এটি জাতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। বিক্ষোভের জন্য তহবিল প্রদান, ভুল তথ্য প্রচার এবং চরমপন্থী কার্যকলাপে সহায়তার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীগুলো প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণœ করতে এবং এর সংস্কার কর্মসূচি ব্যাহত করতে চায়। এই ধরনের কর্মকা- কেবল রাজনৈতিক বিরোধিতা নয়; এগুলো দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা, বিভক্তি এবং অবিশ্বাস তৈরি করার জন্য পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। এই অস্থির পরিবেশ সরকারকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে দুর্বল করে এবং বিদেশি শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ন্যায্যতা প্রদান করে।
৩। বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিরোধীদের কাছ থেকে সমালোচনা এবং বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। এই সমালোচকেরা প্রায়শই তাদের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থের দ্বারা চালিত হয়ে দেশের রূপান্তরকালীন সময়টিকে দুর্বল করতে চায়। কিছু বিদেশি সরকার এবং সংবাদমাধ্যম অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে অকার্যকর বা স্বৈরাচারী হিসেবে চিত্রিত করে নেতিবাচক বর্ণনা জোরদার করছে, যার ফলে সরকারকে একটি ভুল আলোকে তুলে ধরা হচ্ছে। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বাংলাদেশের উত্থানকে তাদের প্রভাবের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে এবং কূটনৈতিক চ্যানেল, অর্থনৈতিক উপায় এবং গোপন অভিযান ব্যবহার করে দেশটিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, বিদেশি শক্তি দেশীয় বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে আর্থিক এবং যৌক্তিক সহায়তা প্রদান করতে পারে, প্রচারণার জন্য তহবিল যোগাতে পারে বা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনের মাধ্যমে জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে।
৪। গুজব ও প্রচারণার প্রভাব: অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই, ভুল তথ্য এবং প্রচারণা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠেছে। সরকার নীতিমালা সম্পর্কে ভিত্তিহীন গুজব, দুর্নীতির মিথ্যা গল্প এবং অস্থিরতার অতিরঞ্জিত প্রতিবেদনগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, যা আতঙ্ক এবং হতাশা সৃষ্টি করছে। বিদেশি সংবাদমাধ্যম এবং গোপন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের একটি বিকৃত চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের এই নেতিবাচক বর্ণনা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা দুর্বল করছে, যা দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নত করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
৫। অবিশ্বাসের বিষাক্ত পরিবেশ: এই অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মিলিত প্রভাব হলো অবিশ্বাসের এক বিষাক্ত পরিবেশ। এই অবিশ্বাস সংস্কার বাস্তবায়ন এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় জাতীয় ঐক্যকে দুর্বল করে দেয়। প্রতিযোগিতামূলক বর্ণনার মাঝে আটকে থাকা নাগরিকরা হতাশ, উদাসীন বা সরকারের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যা সম্মিলিত পদক্ষেপ ও সংকল্পকে জোরদার করতে কঠিন করে তোলে।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে, সঠিক তথ্য সরবরাহ, ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং জনগণের সঙ্গে স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য সরকারের যোগাযোগ চ্যানেলগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। নাগরিক সমাজ, কমিউনিটি নেতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরা এবং আস্থা বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাহ্যিকভাবে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এমন দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করা উচিত, যারা বাংলাদেশকে সমর্থন করে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করা এবং বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নেতিবাচক বর্ণনা মোকাবিলা করা জরুরি। বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা এবং সাইবার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়ানোও অপরিহার্য, যাতে অস্থিতিশীলতার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা যায়।
দেশপ্রেমিক নাগরিকদের ঐক্য এবং সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপই হবে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রতিকূলতাগুলো কাটিয়ে উঠার চাবিকাঠি। এভাবেই সংস্কার কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হবে এবং এর কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
জনগণের ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জনগণের ভূমিকা অপরিসীম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে উত্তরণের সাফল্য নির্ভর করছে জনগণের সম্মিলিত সংকল্প, ঐক্য এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর। এই রূপান্তরমূলক যাত্রায় নাগরিকরা যেভাবে অবদান রাখতে পারে:
১. সরকারের প্রতি সমর্থন: পরিবর্তনের সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য জনগণের দৃঢ় সমর্থন স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকদের উচিত সরকারের অর্থনীতি পুনর্গঠন, সুশাসন সংস্কার এবং শান্তি পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টাগুলো তাদের মঙ্গলার্থে গৃহীত হয়েছে তা উপলব্ধি করা।
২. ভুল তথ্য প্রত্যাখ্যান: আজকের ডিজিটাল যুগে ভুল তথ্য আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা বিভ্রান্তি, ভয় এবং বিভাজন সৃষ্টি করে। এই সংকটকালীন মুহূর্তে নাগরিকদের উচিত তথ্য শেয়ার করার আগে এর যথার্থতা যাচাই করা। এর অর্থ হলো তথ্য যাচাই করা, নির্ভরযোগ্য সংবাদ উৎসের ওপর নির্ভর করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরঞ্জিত কাহিনীর ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
৩. দেশপ্রেম বজায় রাখা: সত্যিকারের দেশপ্রেম জাতীয় স্বার্থকে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। এই সময়ে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে হবে বিদেশি প্রভাব এবং ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে, যা অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়।
লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজশাহী জেলা ছাত্রদল নেতার পিতা বাচ্চু সরকারের দাফন সম্পন্ন
মোংলায় সড়কের ওপর রাখা পাথরের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ভটভটিতে থাকা দুই যাত্রীর মৃত্যু, আহত ৪
গাজায় ঐতিহাসিক পরাজয় ইসরাইলের
১৭ বছর পর আজ দুপুরে কারামুক্ত হচ্ছেন বাবর
দীর্ঘ এক যুগ পর কারামুক্ত হলেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান
আজ কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানী, নেতৃত্বে সারজিস আলম
বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল সাহির শমসদ
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরাইলের ‘ঐতিহাসিক পরাজয়’: হামাস
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও গাজায় হামলা ইসরাইলের, নিহত অন্তত ৩০
জুলাই ঘোষণা : কারা যাচ্ছেন আজকের বৈঠকে
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল
যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি
এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের