শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে। স্বাধীনতার জন্য ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের শেষ প্রান্তে চূড়ান্ত বিজয়ের একদিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। একটি সদ্যস্বাধীন দেশের পথচলা, উন্নয়ন-অগ্রগতি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কী হতে পারে, হন্তারকরা সেটা ভালো করেই জানত। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের পথচলাকে কঠিন করে তুলতে, জাতিকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতার মধ্যে নিক্ষেপ করতে সেদিন দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করে। ব্রিটিশবিরোধী পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী প্রতিটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব বুদ্ধিজীবী সক্রিয় ও পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদেরই হত্যার টার্গেট করা হয়। দেশবরেণ্য সেসব শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, দার্শনিক, ইতিহাসবিদ, ভাষাবিদ, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আইনজীবীকে হারিয়ে জাতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দিশাহারা হয়েছিল। সদ্যস্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিতে তাদের জ্ঞান-মেধা, অভিজ্ঞতা ও পথনির্দেশনা থেকে জাতি বঞ্চিত হয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির মেধা-মনন ও চিন্তার প্রতীক। মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, আনোয়ার পাশাসহ বিপুল সংখ্যক শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিত্বকে হারানোর ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয়। একই সঙ্গে একথাও স্মর্তব্য, যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, লাখো প্রাণের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, সে লক্ষ্য এখনো পূরণ হয়নি। একাত্তরের আগে আমরা যে কায়েমী স্বার্থবাদীদের লুণ্ঠনের অভিযোগ তুলেছিলাম, তা আজও বহাল রয়েছে। তবে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্রের পতাকা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি ও অর্জন। স্বাধীনতার লক্ষ্য ও প্রত্যাশাকে ফলপ্রসূ করে তোলার দায়িত্ব দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের। বিশেষত যে মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে জাতি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তা বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পুরোপুরি ধুলিস্যাত করে এক ব্যক্তির শাসনের মাধ্যমে দেশকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য দেখা গেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পর সেই ঐক্য ও সংহতিতে শৈথিল্য প্রতীয়মান হচ্ছে। এটা মোটেই কাম্য নয়। জাতীয় আত্মপ্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় এক গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতির মধ্যে যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য ও সংহতি পরিলক্ষিত হয়েছিল, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেই ঐক্যবিনাশক ষড়যন্ত্র এখনও রয়ে গেছে। জাতিবিভক্তির চক্রান্ত জাতীয় ঐক্য ও সংহতিকে ক্রমাগত আঘাত করে চলেছে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বিভক্তি বেড়ে চলেছে। অথচ জাতীয় ঐক্যই হচ্ছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অপরিহার্য পূর্বশর্ত। যারা নানা অজুহাতে জাতিকে বিভক্তি ও হানাহানির মধ্যে ঠেলে দিতে চায়, তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকেই দুর্বল করার কাজ করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের আশা রয়েছে। শেখ হাসিনা দেশকে যেভাবে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছিলেন, তা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে দেশের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হবে। দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশের চিন্তক ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে এই শ্রেণীর বেশিরভাগই তার স্তাবকে পরিণত হয়েছিল। শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তার গুণগান গেয়েছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করেননি। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে বুদ্ধিজীবীরা জাতিকে দিকনির্দেশনা দেন। অত্যাচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। দেখা গেছে, শেখ হাসিনার সময় যাদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিগণিত করা হতো, তাদের বেশিরভাগ তার কাছে মাথা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এটা তাদের আত্মবিনাশী প্রবণতা ছাড়া কিছু ছিল না। জাতির কল্যাণে তারা কোনো ভূমিকা রাখেননি, যা মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যার মাধ্যমে জাতিকে মেধাশূন্য করে দেয়ার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতো স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি, কলম ধরেননি, জীবন দেননি। পরিকল্পিত হত্যাকা-ের শিকার না হলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই হয়তো এখনো বেঁচে থাকতেন। তাঁরা হয়তো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতেন। দলদাসে পরিণত হতেন না। একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য ও মতপার্থক্য থাকবেই। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে মত ও পথের পার্থক্য ছিল। তবে তারা তাদের মেধা ও মননশীলতাকে রাজনৈতিক হানাহানি, প্রতিহিংসায় জর্জরিত হতে দেননি। আজ জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শিক্ষা, আদর্শ ও অনুপ্রেরণাকে সামনে রেখেই আমাদের আগামী দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের উত্তরসূরী নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক-সাংবাদিক, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজ সব ভেদাভেদ ভুলে এখন একটি জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের পথরেখা অঙ্কন করবেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কামরাঙ্গীরচরে চালু হচ্ছে ন্যায্যমূল্যের জনতার বাজার
কালীগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা লাগাই প্রাণ গেল মোটরসাইকেল চালকের
‘টিসিবির এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া’
তারুণ্যের উৎসব যুব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে বেগমগঞ্জ বিজয়ী
এক বছরে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
সুন্দরবনে বনদস্যু ও মাদক কারবারিদের ছাড় দেওয়া হবে না: খুলনা পুলিশ সুপার
কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত চারজন, দাবি ইউক্রেনের
চাঁদপুরে ইলিশ গবেষণার নামে ৩৪ কোটি টাকা অপচয়
পঞ্চগড়ে গণসমাবেশে বক্তারা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষনার দাবী
তারেক রহমানের পক্ষে পাইকগাছায় দুই সহস্রাধিক দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
মার্কিন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক অপসারণ, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের ক্ষোভ
অল্পতেই গুটিয়ে গেল পাকিস্তান
দয়া করে চোরদের আর আর ভোট দেবেন না : উপদেষ্টা সাখাওয়াত
প্রতিবেদন দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে : উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম
সিংগাইরে কৃষকদলের নতুন কমিটি গঠন
আরাফাত রহমান কোকো যুব ও ক্রীড়া সংসদের ময়মনসিংহ উত্তর জেলার কমিটি গঠন
এটা সত্যি আমি ফেঁসে গেছি: সৃজিত মুখার্জি
গাজার পূর্ণ দায়িত্ব নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ : আব্বাস
৩৯ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ উৎপাদন হবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন চাউল
৪ আগস্টের পর মাজার-দরগাহে হামলা ভাঙচুর: গ্রেপ্তার ২৩