ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩ পৌষ ১৪৩১

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম

গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর তার ধ্বংস করে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পর্যুদস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজ সহজ নয়। তবে অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার আমলে লুটপাট ও পাচারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তারা সক্ষম হয়েছেন। তলানিতে ঠেকে যাওয়া রিজার্ভ এখন সবল হয়েছে। রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রেমিট্যান্সেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ডিসেম্বরে রেকর্ড ২.৬৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ২৩ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি। রফতানি বাণিজ্যও ২৩ সালের চেয়ে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনীতির এসব সূচকে ইতিবাচক ধারা বইলেও তা সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান ও উপার্জন তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না। বরং মূল্যস্ফীতির কারণে তারা অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করছে।

মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের প্রথম শর্তই হচ্ছে কর্মসংস্থান। এই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় সরকারি- বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে অত্যন্ত মন্দাবস্থা চলছে। বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। শেখ হাসিনার পতনের পরও এ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। বরং বিনিয়োগে উদ্যোক্তরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারিরা দেশের পরিস্থিতি কোনদিকে যায় এ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তারা অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ নীতি অবলম্বন করছেন। ফলে বিনিয়োগ কমে গেছে। এছাড়া, গত সরকারের সাথে যেসব ব্যবসায়ী ঘনিষ্ট ছিলেন, তাদের শিল্পকারখানা সমস্যার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেক শ্রমিক-কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়েছে। এর চাপ অর্থনীতিতে পড়ছে। মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তাদের জীবনযাপন দুরুহ হয়ে পড়েছে। আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। এ পরিস্থিতি পতিত সরকারের সময় থেকে চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের সময় তা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থা উত্তরণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না। সরকার জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে যে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে, এ কাজ করতে পারেনি। সিন্ডিকেটও ভাঙতে পারেনি। অন্যদিকে, অভাব-অনটনের মধ্যে পড়ে মানুষের মধ্যে হতাশা তীব্র হয়ে উঠেছে। বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় সমাজে অপরাধ প্রবণতা শঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের নিত্যকার জীবনযাপনে স্বস্তি দিতে না পারলে, তা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে পরিগণিত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি পুনর্গঠনে মনোযোগ দিলেও তার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়াতে পারলেও বেসরকারি বিনিয়োগের পরিবেশ ও নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারিদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে কীভাবে বিনিয়োগে তাদের উদ্ভুদ্ধ করা যায়, এ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সরকারকে নিতে হবে। এ সরকারের সময় যদি বিনিয়োগ বাড়ানো না যায়, মানুষ ভালো না থাকে, তাহলে তা হবে হতাশার। কারণ, এ সরকারে দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদরা রয়েছেন। অন্যরা সহায়কশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। তাদের সমন্বয়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বাধা ও সংকট রয়েছে, তা উত্তরণের পথরেখা তৈরি সম্ভব। বিনিয়োগের পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারিদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসে, অনিশ্চয়তায় না ভোগে। পরবর্তী সরকার এলেও যাতে তাদের বিনিয়োগ ইনটেক্ট থাকে এবং এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করা। জিনিসপত্রের দাম কমানো থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। বেকারত্ব দূরীকরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা সরকারের নীতিনির্ধারকরা ভালো জানেন। তবে মানুষের অভাব-অনটনের এই সময়ে বেকারত্ব কমাতে সরকারের কিছু উদ্যোগ নেয়া জরুরি। প্রয়োজনীয় ও জনগণের উপকারে আসে এমন প্রকল্প নিয়ে বেকারদের কাজে লাগানো যেতে পারে। অনেক সড়ক, বেড়িবাঁধ বেহাল অবস্থায় রয়েছে, এগুলো মেরামতের উদ্যোগ কিংবা খাল খননের মতো কর্মসূচি নিলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। এতে যেমন অর্থপ্রবাহ সৃষ্টি হবে, তেমনি তাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির মধ্যে দূরত্ব কাম্য নয়
সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে
মাসে অন্তত একটি বই পড়ুন
সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভারতীয় বয়ান থেকে এদেশের হিন্দুদের সতর্ক থাকতে হবে
নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রী কোটা ১ হাজারই থাকছে

এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রী কোটা ১ হাজারই থাকছে

বিপিএলে ছক্কার নতুন রেকর্ড

বিপিএলে ছক্কার নতুন রেকর্ড

জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির মধ্যে দূরত্ব কাম্য নয়

জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির মধ্যে দূরত্ব কাম্য নয়

সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

ফুডপ্যান্ডায় সিপি ফাইভ স্টারের ১০০টি আউটলেটের খাবার অর্ডার করা যাবে

ফুডপ্যান্ডায় সিপি ফাইভ স্টারের ১০০টি আউটলেটের খাবার অর্ডার করা যাবে

চীন সফর বাতিল, মন্ত্রীত্ব হারানোর ঝুঁকিতে টিউলিপ

চীন সফর বাতিল, মন্ত্রীত্ব হারানোর ঝুঁকিতে টিউলিপ

রাজধানীর উত্তরাতে শীতার্তদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

রাজধানীর উত্তরাতে শীতার্তদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে এলো ৫ টন জিরা

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে এলো ৫ টন জিরা

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন মোহাম্মদ নুরুল হক

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন মোহাম্মদ নুরুল হক

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সহযোগিতা করবে সরকার: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সহযোগিতা করবে সরকার: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে বাস উপহার দিল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক

চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে বাস উপহার দিল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক

বোরাক রিয়েল এস্টেটের ৪০০ কোটি টাকার আইপিও আবেদন বাতিল করেছে বিএসইসি

বোরাক রিয়েল এস্টেটের ৪০০ কোটি টাকার আইপিও আবেদন বাতিল করেছে বিএসইসি

সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধার

সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধার

সিরিয়ায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা

সিরিয়ায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা

ঈশ্বরগঞ্জে তরুণদের নিয়ে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

ঈশ্বরগঞ্জে তরুণদের নিয়ে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

মেক্সিকোতে পানশালায় বন্দুক হামলা, নিহত ৫

মেক্সিকোতে পানশালায় বন্দুক হামলা, নিহত ৫

যুক্তরাষ্ট্রের ৭ অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা, ১৫০০ ফ্লাইট বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রের ৭ অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা, ১৫০০ ফ্লাইট বাতিল

চলতি বছর গরম নিয়ে দুঃসংবাদ

চলতি বছর গরম নিয়ে দুঃসংবাদ

কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান

কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান

গাজায় ১ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরাইল

গাজায় ১ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরাইল