স্বাস্থ্যসেবা ও ডিজিটাল খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে
১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

গত বৃহস্পতিবার চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারি, অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনরা অংশগ্রহণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক নবদিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্র তো বটেই কীভাবে আরও নতুন নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র ও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, সে কথাও উঠে এসেছে। অতীতে বিনিয়োগ সম্মেলন হলেও সেগুলোর কার্যকর কোনো ইমপ্যাক্ট এবং সম্ভাবনার কথা শোনা যায়নি। এবার যেন সবকিছু ছাপিয়ে এ সম্মেলন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর দক্ষতা এবং উদ্যোগী ও চিন্তাশীল পরিকল্পনা। তাঁর ক্যারিশমাটিক উদ্যোগে সম্মেলনটি বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এর মাধ্যমে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের যে নানা দ্বিধা ও অনিশ্চয়তা কাজ করত, তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে, ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে, যা দেশের ৩ কোটি মানুষের জীবনমানে পরিবর্তন আসবে এবং কম করে হলেও এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিছু ঐতিহাসিক চুক্ত করেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র সাথে ‘আর্টেমিস চুক্তি’। ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত ইন্টারটেন প্রতিষ্ঠান স্টার লিংক দেশে ব্যবসা শুরু করেছে এবং এই সম্মেলনে ১০০ থেকে ১২০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা দিয়েছে।
বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় খাতসহ বিদ্যমান কিছু খাতকে আরও কীভাবে উন্নত ও গতিশীল করা যায়, তার পরামর্শ ও উদ্যোগের কথা উঠে এসেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে এ সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডার এবং বিশেষজ্ঞরা খাতটিকে কীভাবে বিশ্বমানের করা যায়, সে আলোচনা করেছেন। বর্তমানে এ খাতের বাজার রয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। এ খাতের যে বিপুল সম্ভাবনা, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ২৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব এবং এ খাত বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় খাতে পরিনত হবে বলে বিনিয়োগ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ ও ওষুধ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেছেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ দেশের ৯৮ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের দেশসহ ১৫০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। দেশের মানুষ বছরে বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এই ব্যয়ের সিংহভাগই ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যয় হয়। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারতে চিকিৎসা নিতে প্রায় ২৫ লাখ রোগী যায় এবং প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। সেখানে বাংলাদেশীদের মেডিক্যাল ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে। বিনিয়োগ সম্মেলনে এ খাতের বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তরা বলেছেন, বাংলাদেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত উন্নত চিকিৎসা দিতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের ১০ ভাগ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়, দেশের চিকিৎসায় আস্থাহীনতার কারণে। তবে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলো এ চিকিৎসা দিতে সক্ষম যদি উন্নত সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়। ভারত ভিসা রেস্ট্রিকশন নীতি অবলম্বন করায় এখন দেশের চিকিৎসা খাতের অগ্রগতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। দেশে এখন প্রায় ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, টেলিমেডিসিন সুবিধার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। শুধু স্বাস্থ্যসেবাই নয়, এখন ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন গৃহবধূও তার উৎপাদিত পণ্যের অর্ডার ও সরবরাহ করতে পারছে। এমনকি, অর্ডার নিয়ে বিদেশেও পণ্য রফতানি করছে। এ সময়ে দেশের তরুণ প্রজন্ম যাদের ‘জেন-জি’ বলা হয়, তারা পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তি তাদের হাতের মুঠোয়। যেকোনো তথ্য ও সমস্যা সমাধান পেতে তারা মুর্হূর্তে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইট থেকে পেয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি এখন এমন পর্যায়ে যে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিসও ঘরে বসে করা যায়। এর জন্য আলাদা দোকান বা স্পেস নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তরুণ প্রজন্ম এখন নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। এই প্রজন্ম দেশের সম্পদ। তাদের কাজে লাগানোর খাত ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি দ্রুত হবে। আমাদের দেশের বহু মেধাবী বিদেশে গিয়ে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাতেও কেউ কেউ গবেষণা কাজে নিয়োজিত। দেশটি তাদের নিজেদের সম্পদ হিসেবে রেখে দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই বাংলাদেশী চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদরা কাজ করছে। দেশগুলো তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রেখে দিয়েছে। দেশে তাদের জন্য খাতওয়ারি সুযোগ-সুবিধা করে দিতে পারলে, তারা দেশে চলে আসতে পারে। দেশের উন্নতিতে বিপুল ভূমিকা রাখতে পারে। বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার) প্রায় ৪১ বছর বয়সী আশিক চৌধুরী সিঙ্গাপুরের বিলাসী ও আয়েশী জীবন ফেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক ফোনকলে দেশের সেবায় চলে এসেছেন। তিনি সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি একজন পেশাদার স্কাইডাইভার। ২০২৪ সালের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে ৪১,৭৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে বাংলাদেশের পতাকা হাতে লাফ দিয়ে গড়ে তোলেন একটি গিনেস বিশ্ব রেকর্ড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর মতো এমন আরও বহু প্রতিভাবান বাংলাদেশী তরুণ সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টা যদি তাঁদের খুঁজে বের করে তাদের সাথে বসেন এবং দেশে ফিরিয়ে ক্ষেত্র অনুযায়ী সুযোগ করে দেন, তাহলে দেশের সবক্ষেত্রে দ্রুত বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়ে যাবে।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির বিকল্প নেই। সবক্ষেত্রেই এখন প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। যারা এর সাথে তাল মিলাতে পারছে না, তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এক সময় বিনা পয়সায় সমুদ্রপথে ফাইভার অপটিকসের সংযোগের সুযোগ এসেছিল। সে সময় হয়ত শঙ্কা ও অভিজ্ঞতার অভাবে তা গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে তা ভারতে চলে যায়। এতে প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ি। পরবর্তীতে তা অর্থের বিনিময়ে আনা হলেও দেরি হয়ে যায়। তারপরও দেশে দ্রুত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে। তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিকে ধারন করে চলেছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পকারখানা, অফিস-আদালত, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সবক্ষেত্রে এখন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন উন্নত বিশ্বে অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশেও এর সূচনা হয়েছে। অনেক গার্মেন্ট কারখানা অটোমেটেড হয়ে গেছে। সেগুলো চালাতে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন লোকবল প্রয়োজন। এজন্য, প্রযুক্তিগত শিক্ষা অপরিহার্য। জনবলকে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। অর্থনীতির যেসব খাতে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে, সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে। দেশের প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের যে বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে হবে। সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ভারতে যে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে যায়, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত ও সাশ্রয়ী করে দেশের অর্থ দেশেই রাখা যায়। চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এতদিন যে ভারত নির্ভরতা ছিল, তা থেকে বের হয়ে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন বিধিনিষেধ এ সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। এতে উদ্যোক্তাদের উদ্যোগী হতে সহায়তা করবে। সরকারকে তাদের সুযোগ-সুবিধা করে দিতে হবে। অন্যদিকে, ভারতের সাথে কোনো তোয়াজনীতি চলবে না। তার সাথে সম্পর্ক থাকবে সমতা ও পরস্পরিক স্বার্থভিত্তিক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে -মিজান চৌধুরী

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

কূট-কৌশলে ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক

ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা

উইন্ডিজের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: নিগার

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

জেনারেল এসির নামে প্রতারণা

ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ

নোয়াখালীতে ব্রান্ডের নকল বস্তায় চাউল প্যাকেট করে বিক্রি ;ভোক্তা অধিকারের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

মুক্তির অপেক্ষায় মিজানুর রহমান লাবুর সিনেমা আতরবিবিলেন

সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা আমাকে শান্তি দিয়েছে :বাঁধন