গরিব হয়ে যাচ্ছে দেশের মানুষ
২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৩ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৩ এএম
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের উন্নতির কথা এত বেশি শোনা যেত এবং সরকার তা এমনভাবে বর্ণনা করত যে, বাংলাদেশ একটি সোনায় মোড়ানো দেশে পরিণত হয়েছে। উপমহাদেশ তো কোন ছার, ইউরোপের উন্নত কোনো দেশে পরিণত হয়েছে বলেও বলা হতো। নিদেনপক্ষে সিঙ্গাপুর। কখনো কখনো সিঙ্গাপুরকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা শোনা গেছে। বাংলাদেশের মতো এমন বিস্ময়কর উন্নয়ন কোনো দেশে দেখা যায়নি। বিশ্বে বাংলাদেশ ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে মন্ত্রীরা গলা ফাটাত। বিষয়টি এমন, বাংলাদেশের মানুষ রূপকথার রাজ্যে বসবাস করছে, যেখানে কেবল সুখ আর সুখ। এই সুখ দেখানোর জন্য অর্থনীতির পরিসংখ্যানগুলো ঘন ঘন প্রচার করা। প্রথম দুইটি বিষয় ছিল, জিডিপির হার ও মাথাপিছু আয় নিয়ে। জিডিপি ৭ থেকে সাড়ে ৭ পর্যন্ত হয়েছে বলা হতো। অন্যদিকে মাথাপিছু আয় ক্যাঙ্গারুর লাফের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তো। এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নের চরম সীমায় পৌঁছার বিষয়গুলো ছিল নিত্যকার কথার বিষয়। এখন পাঠকদের কেউ কি বলতে পারবেন, বর্তমানে মাথাপিছু আয় কত? কিংবা সর্বশেষ কবে এ খবরটি শুনেছেন? সম্ভবত অনেকেই তা বলতে পারবেন না। কয়েক বছর আগেও তা ঠোঁটের আগায় থাকত। এখন পরিসংখ্যান ঘাটতে হবে। ঘাটতে গিয়ে হয়ত পাবেন ২৭৬৫ ডলার। এখন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় তা আরও কমে যাবে। মাথাপিছু আয়ের এই সংখ্যাটি অনেক দিন ধরেই স্থির রয়েছে। বাড়ছেও না কমছেও না। সরকারের উন্নয়ন যেন এতে আটকে গেছে। কয়েক বছর আগে মাথাপিছু আয় যখন সরকার ঘন ঘন বাড়িয়েছে, তখন এই আয়ের শুভংকরের ফাঁকি নিয়ে বেশ কয়েকটি নিবন্ধে বিশ্লেষণ করেছিলাম। সরকারের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় প্লাকার্ড হচ্ছে, বড় বড় মেগা প্রকল্প। যেমন পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এমআরটি, কর্ণফুলি টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি। এসব প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও ঋণ করা হয়েছে। এগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। তবে এতে মানুষের জীবনমানের কি উন্নয়ন হয়েছে? তাদের জীবনে কি প্রভাব ফেলেছে? এসব প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। যদি এগুলো মানুষের জীবনে উন্নয়ন করে থাকে, তাহলে তা কিভাবে করছে, এ হিসাব করা দরকার। এ হিসাব কি পাওয়া যাচ্ছে? পাওয়া যাচ্ছে না। এসব উন্নয়নকে অর্থনীতিবিদরা ‘মেকআপ ডেভেলপমেন্ট’, ‘মনুমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট’Ñ সোজা কথায়, দেখানোর উন্নয়ন, স্থাপত্যগত উন্নয়ন বলে আখ্যায়িত করেছেন, যা মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করে না। এগুলো একটি শ্রেণীর উন্নয়ন করে দিয়েছে। যে বিনিয়োগ হয়েছে, তা থেকে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করার সুযোগ তাদেরকে করে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা লুটপাট করেছে, নিশ্চয়ই তাদের উন্নতি হয়েছে।
দুই.
দেশ গরিব হয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষও গরিব হয়ে যাচ্ছে। শুধু সেইসব মানুষ ছাড়া, যারা দেশ ইথিওপিয়া হয়ে গেলেও ধনীই থেকে যাবে। কোনো হেরফের হবে না। তারা হচ্ছে গরিব দেশের বড় লোক। এ সময়ে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি কিংবা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা মন্ত্রীদের মুখ থেকে শোনা যায় না। না শোনা যাওয়ারই কথা। উন্নয়ন এখন পেছনের দিকে হাঁটা শুরু করেছে। বলার মতো কিছু নেই। অর্থনীতির প্রতিটি সূচক নি¤œগামী। সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। দুই বেলা খাবার যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, দেশের ৪ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ ঋণ করে খাবার কিনছে। এসব মানুষ নিশ্চয়ই ঋণ করে ঘি, কিংবা পোলাও-কোরমা খাচ্ছে না। তারা ন্যূনতম খাবার ‘ডাল-ভাত’ কিংবা, ‘ভাত-আলুর ভর্তা’র সংস্থান করতেই ঋণ করছে। মাঝে মাঝে ভাল-মন্দ কিছু খেতে পারা তাদের কপালের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবিএসর জরিপ এ কথাও বলেছে, দেশে পরিবার প্রতি ঋণ বছরে ৪৯ হাজার টাকা। দেশে এখন ৪ কোটি ১০ লাখ পরিবার রয়েছে। এ ঋণের হিসাবটি গড় হিসাব। ধনী পরিবারকে তো আর ঋণ করে খেতে হয় না। যেখানে বিবিএস-এর জরিপই এ কথা বলে, সেখানে প্রকৃত চিত্র আরও কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা পাঠকমাত্রই জানেন। এ সরকার ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই একটা প্রবণতা বজায় রেখেছে যে, মরে গেলেও বলা যাবে না, মানুষ কষ্টে আছে। বলতে হবে, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। সবকিছুই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাতে হবে। মানুষের সামনে একটা রঙ্গিন ফানুস উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই ফানুসের মধ্যে রয়েছে, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এমআরটি, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলি টানেল ইত্যাদি বড় বড় প্রকল্প। আবার মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কথা বলতে পারা রোবট সোফিয়াকে বাংলাদেশে এনে সরকারের প্রশংসা করিয়ে উন্নয়ন দেখানো ইত্যাদি। আদতে এসব প্রকল্প মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারছে না। যদি উন্নয়নের সোপান হতো তাহলে মানুষকে তিনবেলা না হোক, দুই বেলা পুষ্টিসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করতে পারত। উন্নয়নকে টেকসই করতে পারত। পনের বছর পর এসে হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ত না। অর্থাৎ ১৫ বছরে উন্নয়নটি ‘ফানুস’ হয়ে উড়েছে। ফলে হঠাৎ করেই চুপসে গেছে। বটবৃক্ষ হলে কঠিন সময়েও তা ভেঙ্গে পড়তে সময় লাগত। হুট করে পড়ে যেত না। দেশের অর্থনীতির এই মন্দাবস্থার অজুহাত হিসেবে সরকার সবসময়ই বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি অজুহাত দিয়ে থাকে। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিশ্চিতভাবেই দেশের অর্থনীতিতে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কমে গেলেও দেশের অর্থনীতি আর ভাল হয়নি। বরং দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখন এমন পরিস্থিতি যে, সরকারের কাছে টাকাই নেই। ঋণ করে চলতে হচ্ছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চিত্র পাওয়া যায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের চিত্র থেকে। মানুষ তার প্রয়োজনীয় খাবার ক্রয় ও ঠিকমতো খেতে পারছে কিনা। এই ভিত্তি ধরে উন্নতির শ্রেণী বিন্যাস হয়। অতি দরিদ্র, দরিদ্র, নি¤œবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত। দেশে এখন এই শ্রেণী বিন্যাস ভেঙে গেছে। দুটি শ্রেণী, ধনী ও দরিদ্র বাদে অন্যগুলো অস্পষ্ট হয়ে গেছে। মধ্যবিত্ত ক্ষয়ে নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে, নি¤œবিত্ত দরিদ্র হয়ে গেছে। আশপাশের পরিবারগুলোর দিকে তাকালেই তা সহজে বোঝা যায়। লোকলজ্জার ভয়ে অনেক পরিবার তা প্রকাশ করে না। আমাদের দেশের ভদ্রস্থ জীবনযাপন করা পরিবারগুলোর বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, তারা আলুর ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েও বলে রুই মাছ দিয়ে খেয়েছি। এক সময় গ্রামে-গঞ্জে অনেক পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েদের শিখিয়ে দেয়া হতো, কি দিয়ে ভাত খেয়েছ, কেউ জিজ্ঞেস করলে যাতে বলে দুধ দিয়ে ভাত খেয়েছি। অথচ খেয়েছে ভাতের ফেন দিয়ে। তারা দারিদ্র্য ঢেকে রাখতে এ কৌশল অবলম্বন করত। সেই সময় পার হয়ে এখন আমরা যখন সরকারের কথা মতো উন্নয়নের স্বর্গরাজ্যে বসবাস করছি, তখন কি ঋণ করে খাবার কিনে খাওয়া, দুইবেলা ঠিকমতো খেতে না পারার কথা শুনতে ভাল লাগে? আবার অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, এখন নাকি নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। তাদের কথা ফেলে দেয়া যায় না। তারা হিসাব-নিকাষ করেই কথা বলেন। মানুষের পকেটে পয়সা নেই। যে পয়সা আছে, তা দিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না। এই পরিস্থিতিকেই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন দুর্ভিক্ষ বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পণ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ হয় না, দুর্ভিক্ষ হয় মানুষ পণ্য কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে।’ সাধারণ মানুষের এখন এই পরিস্থিতির মধ্যে আছে। বাজারে সব পণ্যই রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই। এই কিনতে না পারার কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন পুষ্টিহীনতার মধ্যে পড়ে গেছে। তারা দুর্বল হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। সরকার এ পরিস্থিতি স্বীকার করবে না, এটা স্বাভাবিক। স্বীকার না করুক, পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যবস্থা তো নেবে! সেই ব্যবস্থা কোথায়?
তিন.
দেশের মানুষ যখন গরিব হতে থাকে, স্বাভাবিকভাবেই তার সুখ কমতে থাকে। অনেকে গরিবানা হালে সুখী হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে দারিদ্র এমনই এক জিনিস, যার কষাঘাত অন্তরে খুব বেশি লাগে। সুখ ঝেটিয়ে বিদায় করে দেয়। এ বছর প্রকাশিত বিশ্ব সুখী দেশের তালিকায় বা ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ঠাঁই হয়েছে প্রায় তলানিতে। ১৪৩ দেশের মধ্যে ১২৯ অবস্থানে রয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের (১০৮) চেয়েও নিচে রয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সুখ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৮ এবং ২০২২ সালে ছিল ৯৪। তাহলে, সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে, তাতে তো আমাদের সুখের সীমা থাকার কথা নয়। উল্টো কেন অসুখে ও অসুখী জাতিতে পরিণত হচ্ছি? বর্তমান সরকারের চতুর্থ মেয়াদ চলছে। দেড় দশকের কথাই যদি ধরি, তাহলে উন্নয়নের চিত্রটি কি এই, মানুষকে ধার করে খাবার কিনে খেতে হবে? নীরব দুর্ভিক্ষ চলবে? পণ্য কিনতে গিয়ে মানুষকে হাহাকারের মধ্যে থাকতে হবে? চোখের পানি ঝরাতে হবে? উন্নয়নের চেহারা কি এই, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টে রেখে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উন্নয়নের রেপ্লিকা প্রদর্শন? মন্ত্রী-এমপি, আমলাদের শানশওকতে জীবনযাপন করা? চকচকে ভাব দেখানো? এমন উন্নয়ন তো কোনো স্বৈরাচারও করে না। যে এরশাদের শাসনামলকে স্বৈরাচার বলা হয়, তার শাসনামলে মানুষ এ সময়ের মতো কষ্টে ছিল, এমন কথা শোনা যায় না। অথচ ’৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা ঠিকই শোনা যায়। সেই সময়েও আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ছিল। এই সময়েও আওয়ামী লীগই ক্ষমতায়। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ায়? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দুর্ভিক্ষের কথা শোনা যায়। দুর্নীতি ও চোরের কথা শোনা যায়। সাড়ে সাত কোটি কম্বলের মধ্যে নিজেরটা না পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলতে হয়েছে, আমার কম্বল কই? তার চারপাশের লোকজনদের ‘চোরের খনি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিলেন। এখন কি সেই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ যাচ্ছে না? সরকারের চারপাশে আধুনিক যুগের অলিগার্ক বা লুটপাটকারি চক্র বেষ্টন করে আছে। এই অলিগার্ক দেশের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। তারা নিয়ন্ত্রণ করছে পণ্যের বাজার। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের অর্থ লুটে নিয়ে তাদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে। সরকার এই লুটেরাদের কিছুই করতে পারছে না। সরকার যখন অপারগ হয়ে যায়, তখন দেশের মানুষ সুখে থাকে কি করে? দেশে দুর্ভিক্ষ না লেগে কি নহরে ভাসবে? পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক ঋণ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, দেশ ঋণ নির্ভর হয়ে গেছে। ধণী থেকে দরিদ্র প্রত্যেক দেশই ঋণ করে। তবে সেসব ঋণের অর্থবহ ব্যবহার থাকতে হয়। ঋণ করলাম, আর ঘি খেলামÑএ নীতি অবলম্বন করলে তো পুরো দেশই ঋণ নির্ভর হয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন অনেকটা সেদিকেই হাঁটছে। এখানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পাচার করে দেয়। তারপর খেলাপি হয়ে যায়। জনগণের টাকা মেরে তারা বড় লোক হয়ে যায়। সরকার এদের চেনে। ধরে না। কেন ধরে না, তা সরকারই ভাল বলতে পারবে। সরকারের কোনো স্বার্থ আছে কিনা, কে জানে! ঋণে ঋণে দেশ জর্জরিত হয়ে গেছে। এখন এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তহবিল শেষ হয়ে যাচ্ছে। রিজার্ভে টান ধরেছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছে, দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে না থাকলেও, সে পথে যেতে বেশি সময় লাগবে না। তাহলে, কোটি টাকার প্রশ্ন, বিগত দেড় দশকে সরকার কি উন্নয়ন করল? বড় বড় প্রকল্প কি অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে পারছে? মানুষকে তিনবেলা খাবার দিতে পারছে? দিতে যে পারছে না, তা তো সকলেই জানে। তবে একেবারে যে উন্নয়ন হয়নি, তা নয়। দেড় দশকে যদি সরকার এসব বড় বড় প্রকল্প না নিয়ে বসেও থাকত, তাহলেও দেশের উন্নতি হতো। একেবারে থেমে থাকত না। যেভাবে উন্নতি করেছে গার্মেন্টসহ বেসরকারি কিছু খাত। তবে সরকার যেহেতু কার্যকর এবং উন্নয়নের পথে হেঁটেছে, সেক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। দুঃখের বিষয়, এই উন্নতির ছোঁয়া সাধারণ মানুষের জীবনমানে লাগেনি। লাগলে আজ তাদের খাবারের কষ্টে দিন কাটত না। তারা গরিব হয়ে যেত না।
চার.
দেশ ও দেশের মানুষের মাঝের বছরগুলো যে খারাপ ছিল, তা নয়। তারা কোনো রকমে খেয়েপরে বেঁচেবর্তে থাকতে পারত। এখন আর পারছে না। এ যেন সরকার সাধারণ মানুষকে উন্নয়নের মাঝপথে এনে ছেড়ে দিয়েছে। নিজেও বিপাকে পড়েছে, মানুষও বিপাকে পড়েছে। অবশ্য সরকারের যারা পরবাসী মন নিয়ে এদেশে আছে, তারা খুবই ভাল আছে। কারণ, তারা দেশের টাকা নিয়ে প্রবাসে তাদের সকল থাকা-খাওয়া এবং শানশওকতে চলার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আর সুখে আছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি। দেশের মানুষ শুকিয়ে মরে গেলেও তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা কোনোভাবেই বন্ধ থাকবে না। আফসোসের বিষয়, যারা তাদের এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে, সেই তারাই এখন খুব কষ্টে আছে। কষ্টে থেকেও তাদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার জোগান দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কষ্টে থাকার এই অবস্থা সরকার বুঝছে কিনা, তাও বোঝা যায় না। বুঝলেও চুপ করে আছে। আওয়াজ দিলেই তো ব্যর্থতা প্রকাশিত হয়ে পড়বে। অবশ্য এখন সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও খুব একটা নেই। রাগ-ক্ষোভ ঝারা ছাড়া তাদের কিছু করার নেই। এর পরিবর্তন কিভাবে হবে, তা তারা জানে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে নারী অধ্যাপককে মাটিতে ফেলে যেভাবে হাতকড়া পড়াল মার্কিন পুলিশ
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দমনে মারমুখী যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ
অবৈধ প্রভাব ও হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জুয়েল
আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও পেরুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন সফর করবেন
নিখোঁজের ১ বছর পর বাহরাইন থেকে মিলল থাই মডেলের মৃতদেহ
লোহিতসাগরে ভারতগামী তেলবাহী ট্যাংকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুতিদের
গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শুরু
বেইজিংয়ে শুক্রবার ঐক্য সংলাপে বসছে ফাতাহ-হামাস
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তা বিল বিশ্বকে আরও বিশৃঙ্খল করবে: জনমত জরিপ
ইবতেদায়ী মাদরাসাকে অবহেলিত রেখে দুর্নীতিমুক্ত জাতি গঠন সম্ভব নয়
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের পাল্টা প্রস্তাব বিবেচনা করছে হামাস
আমেরিকার পর এবার ইউরোপে ছড়িয়েছে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন
শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা
একটি গাছ রোপণ না করলেও এক বছরে ১৭শ গাছ কেটেছে বন বিভাগ
চোখের পানিতে আসমানের পানি চান হাজারো মানুষ
বৃষ্টি কামনায় মোহাম্মদপুরে বিশেষ মোনাজাত
নেট জগতে সাড়া ফেলেছে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফারিনের গান
ছেলের আঘাতে প্রাণ গেল যুবলীগ নেতার
কালকিনিতে হামলার মামলা করায় ফের হামলা, বোমায় আহত ১৫
রামপালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত