ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে
০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বাহক বা ভেক্টর এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ভেক্টর হচ্ছে কোনো আর্থপোডা বা কোনো ক্ষুদ্র প্রাণী, যারা রোগের জীবাণু বহন করে অন্যের মধ্যে সংক্রমিত করে থাকে। বাংলাদেশে মশা ও মাছি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য ভেক্টর, যাদের মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুতর রোগ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই রোগমুক্ত সুস্থ জীবনধারণের জন্য মশা ও মাছিমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। এ ব্যাপারে শুধু রাষ্ট্রই নয়- রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি সবাইকেই একযোগে কাজ করতে হবে এবং সবাইকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে ঢাকার অবস্থা খুবই নাজুক। তাই সরকারি ভাবেও ঢাকার বাইরের সাধারন ডেঙ্গু রুগী ঢাকায় আনতে নিষধ করা হয়েছে। শুধু ঢাকা কেন, আমার প্রাণপ্রিয় দেশের অবস্থাই ভালো নেই। ডেঙ্গুর প্রকোপে সারা দেশ ধুঁকছে। মাত্র কয়েক মাসেই এবছর মারা গেছেন হাজারেরও বেশী মানুষ। এডিস নামক এক প্রকার মশার কামড়ে এ জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে মশার দেহে জীবাণু প্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে অন্য সুস্থ লোককে কামড়ালে তার দেহে ভাইরাস প্রবেশ করে। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায় বলে আমরা জানি। তবে এখন গবেষকরা বলছেন রাতেও এরা আক্রমন করছে। বর্ষায় ও গ্রীষ্মের সময় এ মশা বংশ বিস্তার করে ও এ রোগের দ্রুত বিস্তার হয়। এবছর বর্ষার পরও ডেঙ্গুর প্রতাপ চলছে। ছড়িয়ে পরেছে শহর থেকে গ্রামে।
ডেঙ্গু জ্বর ম্যালেরিয়ার মতোই মশাবাহিত জ্বর। ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট-জনিত আর ডেঙ্গু ভাইরাস-জনিত। এডিস মশা প্রথমে আফ্রিকার জঙ্গলের গাছের কোটরে বাস করত। আজ সুদূর আফ্রিকা থেকে ডেঙ্গু জ্বর আমাদের দেশে আমদানি হয়েছে সমুদ্রপথে, আকাশপথে ও সড়কপথে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রকার- ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ প্রকার সেরো টাইপ আছে। ডেঙ্গু-১, ডেঙ্গু-২, ডেঙ্গু-৩, ডেঙ্গু-৪। তাই একজন মানুষও ৪ বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। প্রথমবারের চেয়ে পরবর্তিবার আক্রান্ত হলে তার ভয়াবহতা বেশী হয়। যদিও ডেঙ্গু জ্বর প্রধানত ২ প্রকার (১) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর, (২) হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর। এছাড়া ডেঙ্গু শক সিড্রোমও কারো কারো হতে পারে।
এডিস মশা কোথায় বংশ বৃদ্ধি করে ও ডিম পাড়ে- এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে ও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। যেমন- ফুলের টব, বৃষ্টির জমানো পানি, ফুলদানি, ফ্রিজের নিচে ট্রে, পরিত্যক্ত কাচের বোতল, পরিত্যক্ত টায়ার, ড্রাম, মাটির ভাঙা কলস, ডাবের খোসায় জমানো পানিতে, ছাদের কোনায়, পানির ট্যাংকে এবং কয়েক দিন ব্যবহার না করা বালতি। তবে এখন বলা হচ্ছে এডিস এলবোপিকটাস ধরনেরটা গ্রামে বেশী পাওয়া যাচ্ছে এবং তা গাছের বাকলের ফাকের পানিতে, পাতায় জমা পানিতেও বংশ বিস্তার করছে। আর একারনেই গ্রামেও এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।
কখন কামড়ায়- সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। বিশেষ করে সকালের দিকে ও বিকালের শেষ দিকে এই মশা বেশি কামড়ায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ- তীব্র জ্বর ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। বমি, পেট ব্যথা ও মাথাব্যথা, কোমর, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, হাড়ের ব্যথা এতই প্রচ- যে মনে হয় হাড় ভেঙে গেছে। যে কারণে এই জ্বরকে ব্রেকবোন ফিভার বলা হয়। সমস্ত শরীর (হাড়সহ) ব্যথা হতে পারে। শিশুরা অসহ্য কষ্টে কান্নাকাটি করে ও খিটখিটে মেজাজের হয়। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যায়। দেহের ত্বকে অ্যালার্জি র্যাশের মতো র্যাশ দেখা দিতে পারে। দাগগুলোর কারণে চুলকানিও হতে পারে।
হোমোরেজিক বা রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোই এই অবস্থায় অনেক বেশি তীব্র দেখা যায় এবং সঙ্গে রক্তক্ষরণ থাকে। বিশেষ করে রক্তবমি, পায়খানার সাথে কালো রক্ত, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়, নাক দিয়ে রক্তপাত, ত্বকের নিচে লালাভ চাকার মতো জমাটি বাঁধা রক্তের নমুনা ইত্যাদি দেখা যায়। মস্তিস্ক ও হার্টের মধ্যেও রক্তক্ষরণ হতে পরে। এই রক্তক্ষরণের ফলে রোগী হাইপোভলিউমিক শকে অর্থাৎ অজ্ঞান হয়ে গিয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ অবস্থাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে।
চিকিৎসা- ভাইরাস নিধনের কোন ওষুধ এখানে ব্যাবহার হয় না। তাই সবার জন্য একই চিকিৎসাও কার্যকর নয়। তবে জ্বরের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা, যেমন- ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, বমির জন্য অ্যান্টিইমেটিক (ওন্ডানসেটেরন) ওষুধ দেয়া হয়। এই জ্বরে প্রচুর পানি পান করতে হয়। প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হয়। জ্বর শেষে রোগীর দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, বিষণœতা, দেখা দিলেও পরে আবার সেগুলো ভালো হয়ে যায়। এই পর্যন্ত চিকিৎসা এদেশের সব এলাকাতেই হয়। এদের কোন ভাবেই ঢাকায় বা বড় হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নাই।
হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। রক্ত পরীক্ষা করে হেমাটোক্রিট বা রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে কিনা তা নিয়মিত দেখতে হয়। রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বরের গতিবিধি দেখতে হয়। কারণ, এই জ্বরে প্লাটিলেট অনেক সময় কমে যায়। যদি ১০ হাজারের নিচে হয় তখন প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হয়। আর বেশি রক্তক্ষরণ হলে রক্ত দিতে হয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে এসপিরিন দিলে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এসপিরিন দিলে রাই সিনড্রোম নামক মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয়। ঠিক সময়মতো চিকিৎসা করলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।
প্রতিরোধ- এডিস মশার উৎস নির্মূল করাই এর প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। যেসব জায়গায় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি করে সেসব জায়গা পরিষ্কার করতে হবে। গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া ন্যাট, স্প্রে ব্যবহার করতে হবে এবং মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে দিনের বেলায়ও। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- নিজের যতœ না নিলে নিজে- অন্যের ওপর ভরসা মিছে।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান