অকুপেশনাল থেরাপি : তীব্র ব্যথায় কার্যকরী

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৩ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যে তীব্র ব্যথা একটি প্রধান সমস্যা। আর এটি এমন একটি সমস্যা যাতে কম বেশি সবাই ভোগেন, পারিবারিক কিংবা সামাজিক জীবনকে পুরোপুরি ভোগায়। আমেরিকার একটি গবেষণায় দেখা যায়, এই তীব্র ব্যথায় ভুক্তভোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাৎসরিকভাবে অনেক বেড়ে যায়। বিপত্তি আসে যখন হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মত জটিল জটিল রোগে একসাথে আক্রান্ত হয় ব্যক্তি।

তীব্র ব্যথা হবার ফলে রোগী অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, পারিবারিক এবং পেশাজীবীর ভূমিকা হারিয়ে ফেলেন এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে অংশগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। নিদ্রাহীনতা, বিষণœতা, একাকীত্ব, জীবনযাপনের মানহানী এসব কিছুই একজন তীব্র ব্যথায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দেখা যায়। দিনের পর দিন সাধারণ চিকিৎসা নেবার পরও ব্যথা যখন অসহনীয় এবং অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে তখনই ইন্টার ডিসিপ্লিনারি এপরোচ স্বল্প খরচে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং জটিলতা প্রতিরোধ করে।

অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকা :
দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে ব্যথা থাকলে কর্মক্ষমতা এবং কাজ করার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়। সেল্ফ মেনেজমেন্ট এপরোচের মাধ্যমে অকুপেশনাল থেরাপিসট রোগীর সামর্থ্য অনুযায়ী উপযুক্ত পন্থায় দৈনিক কাজসমূহে অংশগ্রহণের ব্যপারটি গুরুত্ব দেন। অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর কর্মদক্ষতাভিত্তিক সমস্যা ও মূল্যবান কাজ চিহ্নিত করা হয়। তারপর গবেষণা ভিত্তিক থেরাপিউটিক এপ্রোচের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। একটি সমন্বিত ব্যথা নিরাময় ও পুনর্বাসন প্রকল্পে অকুপেশনাল থেরাপি প্রধান ও প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।

চিকিৎসা পদ্ধতি-
রোগীরা প্রায় সময়ই ব্যথার কলাকৌশল, ব্যথার ধরণ এবং ব্যথা দূরীকরণে থেরাপি চিকিৎসা গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত থাকেন না। রোগীকে তার ব্যথা সম্পর্কে জানানো, চিকিৎসা পরিকল্পনার প্রত্যাশিত ফলাফল অবহিতকরণ এবং নিজে শিখে কিভাবে তা কাজে লাগানো যায় সেই পদ্ধতিতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় রোগীকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্যে প্রস্তুত করা হয়।

চিকিসার লক্ষ্য:
চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে রোগীও তার লক্ষ্য পূরণের বিষয়ে জড়িত থাকেন। যখন থেরাপিতে উন্নতি আসে তখন এই পদ্ধতি রোগীকে প্রণোদনা এবং অংশগ্রহণকে সমর্থন দেয়।

প্রশিক্ষণ :
প্রো একটিভ পেইন কন্ট্রোল: রোগীকে স্বাধীনভাবে এবং সক্রিয়ভাবে ব্যথা প্রতিরোধক গরম বা ঠা-া ব্যবহারের বিষয়টি শেখানো হয়।
সেফ বডি মেকানিকস্ ও এরগোনমিকস: কর্মস্থলে ও অফিস-কারখানায় দৈহিক কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শারীরিক, মানসিক, চিন্তাগত, সামাজিক ইত্যাদি সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ এবং কর্মস্থলকে উৎপাদনমুখী করে তোলা।

নিউরো মাস্কুলার রি এডুকেশন: দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিক দেহভঙ্গি এবং মুভমেনটের ফলে ব্যথা বেড়ে যায়। অকুপেশনাল থেরাপিসট কিছু বাড়তি পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে উপযুক্ত মাংপেশির গ্রুপকে সচল করে নির্দিষ্ট কাজকে ভালভাবে সম্পাদন করতে সহায়তা করেন।
মাসল টেনশন কমানোর প্রশিক্ষণ: দেহের ব্যথা মনেও কিছুটা বিরাজ করে। তাই এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যথার তীব্রতা কমে যাওয়ার সময় মাংশপেশি বিশ্রামে আসে এবং মনকে উপদেশ দেয় তার দেহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে।

যোগাযোগ বাড়ানোর প্রশিক্ষণ: তীব্র ব্যথা একটি অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা। ইতিবাচক আচরণ ও যোগাযোগ দক্ষতার মাধ্যমে রোগী হতাশা এবং বিরুপ মনোভাব কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
প্রো একটিভ প্রবলেম সলভিং: এই পদ্ধতিতে রোগী যখন সক্রিয়ভাবে সমস্যা সমাধানের বিষয়টি বুঝে যাবে তখন পূর্বের নিষিদ্ধ কাজগুলি আবার শুরু করতে পারবেন। এই পদ্ধতির মধ্যে সম্ভাব্য সমস্যাকে কিভাবে সমাধান করা যাবে তা নিহিত।
পেসিং কার্যক্রম: অকুপেশনাল থেরাপিসট রোগীর কাজগুলোকে ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করে বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে কার্যকরী করে তোলেন।

বাসায় ব্যায়াম :
এছাড়াও অকুপেশনাল থেরাপিসট রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরণ পরিবর্তন, মেডিটেশন অথবা রিলাক্সেশন, ব্যথা নিরাময়ের বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন যাতে রোগী বাড়িতে মেনে চলতে পারে।
অন্য চিকিৎসকের পরামর্শ :
রোগীর প্রয়োজন ও সমস্যা বুঝে অকুপেশনাল থেরাপিসট অন্য চিকিৎসক কিংবা পেশাজীবীর কাছে রোগীকে পাঠাতেও পারেন।

শম ফারহান বিন হোসেন
ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিসট,
সিআরপি-মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৬৮৫৬৫৬১৯৯।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন

শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক অ্যাজিভিট

শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক অ্যাজিভিট

বাইডেনকে তিরস্কার করে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাতে বিল পাস

বাইডেনকে তিরস্কার করে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাতে বিল পাস

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা : যুক্তরাষ্ট্র

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা : যুক্তরাষ্ট্র

৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো

৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো

মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির! ভারতে ধর্মের কার্ড খেলার ট্র্যাডিশন চলছেই

মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির! ভারতে ধর্মের কার্ড খেলার ট্র্যাডিশন চলছেই

অত্যাধুনিক রকেটের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান

অত্যাধুনিক রকেটের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান

কুয়েতে নতুন রাষ্ট্রদূত হলেন মেজর জেনারেল তারেক

কুয়েতে নতুন রাষ্ট্রদূত হলেন মেজর জেনারেল তারেক

স্বামীর উপহারের টাকায় লটারি কিনে কোটিপতি স্ত্রী

স্বামীর উপহারের টাকায় লটারি কিনে কোটিপতি স্ত্রী

হাজীগঞ্জে খালে ভাসছিল অজ্ঞাত নারীর লাশ

হাজীগঞ্জে খালে ভাসছিল অজ্ঞাত নারীর লাশ

রাজধানীর বাসাবোয় ১০ তলা বিল্ডিংয় থেকে পড়ে ২ শ্রমিক নিহত

রাজধানীর বাসাবোয় ১০ তলা বিল্ডিংয় থেকে পড়ে ২ শ্রমিক নিহত

সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরামের ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরামের ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

অধ্যক্ষের কক্ষে শিক্ষককে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা

অধ্যক্ষের কক্ষে শিক্ষককে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা

বিজিবি'র পৃথক অভিযানে ৪ কেজি আইস উদ্ধার, আটক-১

বিজিবি'র পৃথক অভিযানে ৪ কেজি আইস উদ্ধার, আটক-১

সব বিষয়ে পাস, বাস্তব প্রশিক্ষণে নম্বর না দেয়ায় ফেল ১৩ শিক্ষার্থী

সব বিষয়ে পাস, বাস্তব প্রশিক্ষণে নম্বর না দেয়ায় ফেল ১৩ শিক্ষার্থী

হজ পালনে সউদী গেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি

হজ পালনে সউদী গেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি