অর্ধেকে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ঋণ
২৩ জুন ২০২৩, ১১:১৪ পিএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
চামড়া খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। খেলাপি ঝুঁকির কারণে চামড়া খাতে ঋণ অর্ধেকে নামিয়ে আনছে ব্যাংকগুলো। আসন্ন ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ট্যানাররা ২৫৯ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পাবেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত এ ঋণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১৮৪ কোটি টাকা কম। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৩৫ কোটি এবং অগ্রণী ব্যাংক ৮০ কোটি টাকা দেবে। সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ১২টি ব্যাংক এবারে চামড়া সংরক্ষণে ঋণ দিবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদে চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি শিল্পের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। শিল্পমালিকরাও বলছেন, কাঁচা চামড়া কেনা ও ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ঋণ সহায়তা প্রয়োজন।
প্রতিবছর কোরবানি ঈদের সময় ঋণের ব্যবস্থা করতে সরকারের নীতি সহায়তা চান উদ্যোক্তারা। ট্যানারি শিল্প উদ্যোক্তাদের পূর্বের ঋণের বড় একটি অংশই খেলাপি থাকায় ব্যাংকগুলো সহজে ঋণ দিতে চায় না, যে কারণে ঋণ পেতে সরকারের সহায়তায় চান তারা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ)’র চেয়ারম্যান, মো. শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া একটি পচনশীল পণ্য, যা দ্রুত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে হয়, যার জন্য নগদ টাকা প্রয়োজন হয় কারণ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করে। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা নিজস্ব ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিয়ে ব্যবসা করলেও কোরবানির সময় বেশি নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়,যা নিজস্ব ফান্ড থেকে ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) চামড়া খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংস্থা। এই খাতের শিল্প মালিকরা সারা দেশ থেকে আড়তের মাধ্যমে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে থাকেন। প্রক্রিয়াকরণের পর উদ্যোক্তারা কেউ কেউ চামড়া শিল্পের সংযোগ শিল্পে বিক্রি করে ও কেউ কেউ আবার বিদেশে রফতানি করে।
বিটিএ’র সূত্রমতে, ট্যানারি মালিক ও বাণিজ্যিক রফতানিকারক মিলিয়ে সংগঠনটিতে বর্তমান প্রায় ৮০০ সদস্য রয়েছেন। সারাদেশে ১৮৬৬টি বৃহৎ ও মাঝারি আড়ত রয়েছে। এর বাইরেও ছোট আকারে অনেক আড়ত রয়েছে, যারা মৌসুমী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ঈদুল আজহার সময় চামড়া সংগ্রহ করে।
আড়তদাররা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহের পর নিজেরাই লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে, পরবর্তীতে বড় ট্যানারির কাছে বিক্রি করে। রাজধানীর পোস্তা, নাটোরের রেলওয়ে বাজার, যশোরেররাজারহাট, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, রংপুরের তারাগঞ্জ, নওগা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, আমিনবাজার ও টঙ্গী- গাজীপুরের আড়তসমূহে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুদ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজনের নিরিখে সম্ভাবনাময় খাত চামড়াশিল্প। এই শিল্পের সিংহভাগ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয় ঈদুল আজহায়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়।
এদিকে ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারীগুলোকে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করা হয়। কমপ্লায়েন্স ইস্যু ও স্থানান্তরের কারণে চামড়া রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, ফলে রফতানি কমে যায়। তবে সম্প্রতি আবারও চামড়া রফতানি বাড়ছে, যাতে আগামীতে সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, দীর্ঘদিন পর চামড়া রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদাও এখন বেশ ভালো। রফতানি ত্বরান্বিত করতে ও বর্তমান ট্রেন্ড ধরে রাখতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এগারো মাসে চামড়াজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে ১১২০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এই রফতানির পরিমাণ সরকারের নির্ধারিত টার্গেটের কাছাকাছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই চামড়াজাত পণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ১১১৫ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের প্রতি বছর চামড়া খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু বিতরণ কখনও ১০০ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। এই ঋণের ৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। তবে চামড়া কেনায় ব্যাংক যে টাকা ঋণ দিয়েছে তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ডজন খানেক ব্যাংক এই খাতে ঋণ দেয়, যার ৯০ শতাংশের বেশি ঋণ দেয় সরকারি ব্যাংক। পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোরবানির ঈদে ট্যানারিগুলোর চামড়া সংগ্রহে ২০২০ ও ২০২১ সালে যথাক্রমে ৬৪৪ কোটি এবং ৫৮৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৪৩ কোটি টাকা। এভাবে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এবার ব্যাংকগুলো চামড়া কেনায় ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ ঋণের বড় অংশই বকেয়া হিসেবে কেটে রাখে ব্যাংকগুলো। ফলে প্রকৃত ঋণ খুবই কম বলে জানিয়েছেন ট্যানারি খাতের নেতারা। ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিগত বছরের মতো এ বছরও চামড়ার দাম কমে যেতে পারে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস
কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০
জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক
যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষরিত
ব্যবসা গুটিয়ে নিতে এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা
ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের উপরে খুব প্রভাব পড়বে না: প্রেস সচিব