কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা গরু চেনার উপায়

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ জুন ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

আগামী ২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কোরবানি উপলক্ষে ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসেছে পশুর হাট। গরু কোরবানির জন্য সবাই নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হৃষ্টপুষ্ট গরু কিনতে চায়। বড় গরু কিনতে গিয়ে স্টেরয়েড ট্যাবলেট কিংবা ইঞ্জেকশন দেওয়া গরু কিনে প্রতারিত হওয়ার আগেই সুস্থ গরু চেনার উপায়গুলো জেনে নিন।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সঠিক খাদ্যভাস এবং নির্দিষ্ট পরিচর্যার মাধ্যমে অনেক খামারি গরু হৃষ্টপুষ্ট করে থাকেন। এক দশক আগেও এমন মোটাতাজা এবং ওজনধারী কোরবানির পশু পাওয়া দুষ্কর ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় পশু মোটাতাজা করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে। তবে ঈদের বাজারে পশুর চাহিদা বেশি থাকায় অল্প সময়ে বেশি লাভের উদ্দেশ্যে অনেকেই বেছে নেয় কৃত্রিম উপায়। আর এই উপায় হলো স্টেরয়েড।

সাধারণত ছাগল বা অন্য পশুর চাইতে গরুর উপরেই এই ধরনের মোটাতাজা প্রক্রিয়া চালানো হয় বেশি। তাই এরকম গরু সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখার কথা বলেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।

স্টেরয়েডের মাধ্যমে গরু আসলে মোটাতাজা হয় না বরং শরীরে পানি জমে যাওয়ার কারণে হৃষ্টপুষ্ট দেখায়। এসব ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য গরুর শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া নষ্ট করে। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর গোশত মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরুর গোশত খেলে শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালী ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এরকম মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায় হচ্ছে ‘স্বাভাবিক গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে গোশত একটু দেবে যায়। সুস্থ গরুর ক্ষেত্রে এই চাপ ছেড়ে দিলেই গোশত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে কৃত্রিম প্রক্রিয়ার মোটাতাজা করা গরুর গায়ে আঙুলের চাপ দিলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশি সময় নেবে।

গরুর আচরণ: স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হৃষ্টপুষ্ট গরুর আচরণ হবে সক্রিয়। দৃষ্টি থাকবে তীক্ষ্ম, যেকোনো পরিবেশে তারা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে। আর কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা গরু পরিবেশ সম্পর্কে ততটা সজাগ থাকবে না। ক্লান্ত এবং নির্জীবের মতো মনে হতে পারে। গরু অস্বস্তিকর অবস্থা অনুভব করবে।

অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি: কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর ফুসফুস কিছুটা দুর্বল হয়ে থাকে ফলে বেশিক্ষণ শ্বাস ধরে রাখতে পারে না। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। একটু হাঁটলেই হাঁপায়, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো দুর্বল থাকে। খুব ক্লান্ত দেখায়।

গরুর রানের গোশতের পুরুত্ব: স্বাভাবিক উপায়ে মোটাতাজা গরুর পেছনের রানের গোশত শক্ত হয়। স্টেরয়েড হরমোন ইনজেকশন দেওয়া গরুর রানের গোশত নরম হয়। মাংসের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে পেশির কোষে অতিরিক্ত পানি জমার কারণে গোশত নরম হয়ে যায়। এই ধরনের গরুর প্র¯্রাবের পরিমাণও কমে যায়।

লালা বা ফেনা: আবহাওয়া খুব গরম না থাকলে যদি গরু মুখে লালা বা ফেনা বেশি থাকে তাহলে তা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা বলে ধারণা করা হয়। তবে সাময়িকভাবে খাবারের সমস্যার কারণেও অতিরিক্ত লালা বা ফেনা এবং পেট ফাঁপা দেখা যায়। যেসব গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে, সেই গরু কেনার জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে।

হাঁটাচলা: কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকৃত গরুর শরীর ভারী হয়ে যায়। বেশি পানি জমার কারণে সহজে হাঁটতে চায় না এবং এক জায়গায় বসে থাকে। বসে থাকা গরুকে উঠিয়ে হাঁটিয়ে দেখা উত্তম।

খাবারে অনাগ্রহ: সুস্থ ও স্বাভাবিক উপায়ে বেড়ে উঠা গরু খাবার দেখতেই জিহ্বা দিয়ে টেনে খাওয়ার চেষ্টা করবে। অন্য সমস্যা থাকলে খাবারে অনাগ্রহ দেখায়।

মাজেল শুষ্ক থাকা: অসুস্থ গরুর মাজেল বা নাকের উপরের অংশ শুষ্ক থাকে। কিন্তু সুস্থ উপায়ে বেড়ে উঠা গরুর মাজেল বা নাকের উপরের অংশ ভেজা ভেজা থাকে।

পা-মুখ ফোলা: ইনজেকশন দিয়ে কিংবা ওষুধ খাইয়ে মোটা করা গরুর পা ও মুখ ফোলা থাকবে, শরীর থলথল করবে, অধিকাংশ সময় এই গরু ঝিমাবে, সহজে নড়াচড়া করবে না।

তাপমাত্রা: স্বাভাবিক পরিবেশের তাপমাত্রায় সুস্থ গরুর তাপমাত্রা সাধারণত ১০০-১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে থাকে। গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ। পরিবেশ এবং ভ্রমণ জনিত ধকলের কারণেও তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে বিক্রেতার কাছে গরু হাটে পৌঁছেছে কখন সে সময়টা জেনে নিতে হবে। দূর থেকে ভ্রমণ করে আসা গরুর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে সাধারণত ১-২ ঘণ্টা সময় লাগে। অন্যকিছু হলে তা সমস্যা হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক