ফাটছে ঠোট, চামড়া শুস্ক হচ্ছে

তাপমাত্রা বাড়ছে পুড়ছে প্রকৃতি, পুড়ছে মানুষ, ফসলের ক্ষেত

Daily Inqilab রাজশাহী ব্যুরো

১২ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৩০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪২ পিএম

রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে ক’দিন ধরেই। পুড়ছে প্রকৃতি, পুড়ছে মানুষ, ফসলের ক্ষেত আর ঝরছে আমের গুটি। গরম বাতাসের ঝাপটা চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে। সকালের সূর্যটা উঠছে আগুনের হলকা নিয়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রার পারদ উপরে উঠছে। দুপুরের দিকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই। এরপর আবারও তাপমাত্রা কমে আসছে। আর তাপমাত্রার ঠিক বিপরীত চিত্র আর্দ্রতায়। গতকাল সকাল ৬ টার দিকে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিলো ৯২ শতাংশ। যেটা বিকেল ৩ টায় দাঁড়ায় মাত্র ১৫ শতাংশ। আর কড়া রোদের সঙ্গে আর্দ্রতার নিম্নমুখি প্রবণতার কারণে মানুষের শরীরের ত্বকে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এতে অস্বস্তিতে জনজীবন। শেষ সময়ে গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচাতে বোরো চাষিরা সেচ নিয়ে চরম দুর্ভোগে বোরো চাষীরা। পানির স্প্রে করে আমের গুটি রক্ষার চেষ্টা কোথা কোথাও চলছে।

রাজশাহী আবহওয়া অফিসের তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গতকাল দুপুর ৩ টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত ১০ এপ্রিল দুপুর ৩ টায় ছিলো ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১৬ শতাংশ। এদিন বেলা ১২ টায় তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ১ টায় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ ডিগ্রিতে। আর এমন চিত্র আরও সপ্তাহখানেক থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়া অফিস।
তাপদাহের কারণে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে মানুষের চলাফেরাও কমে আসছে। দুপুর মাড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত মানুষের চলাচল থাকছে খুবই সীমিত। তবে মানুষ ঘরের বাইরে না বের হলেও শুষ্কতাজনিত সমস্যা নিয়ে অস্বস্থিতে রয়েছে। এর সাথে বিদ্যুতের যাওয়া আসা মানুষকে আরো বিপাকে ফেলেছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। দিন খেটে খাওয়া কর্মজীবীরা বাধ্য হয়েই তাপাদহের মধ্যে কাজ করছে। রিক্সা নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে রিক্সা চালকরা। ঈদকে সামনে রেখে ফুটপাতজুড়ে বসেছে রকমারি দোকান। তারাও বেশ কষ্টে আছে। এ সময় ক্রেতা কিছু কম থাকলেও তারা আসায় বসে আছেন। তারা অপেক্ষায় থাকছেন রাতের জন্য। শ্রমিকরা জানান, অন্যান্য সময় রোদে কাজ করলে প্রচুর ঘাম হয়। তবে এখন তেমন ঘাম হচ্ছে না। কিন্তু ঠোঁট ফেটে যাচ্ছে। অস্বস্তি লেগেই থাকছে।

এদিকে, বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো ধানের জমিতে ফাঁটল দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় ঘন ঘন জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার বাসিন্দা আনসার আলী জানান, তিনি এবার দেড় বিঘা মতো জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধান লাগানোর পরে প্রাকৃতিক বৃষ্টি হয় নি। এখন ঘন ঘন সেচ দিতে হচ্ছে। সেচের জন্য দীর্ঘ সিরিয়ালও পড়ছে। আর সেচ দেয়ার দু’দিন পরই জমি শুকিয়ে ফাঁটল দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টি না হলে স্বস্তি নেই। বৃষ্টির জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে নামাজও আদায় হচ্ছে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান, এই আবহওয়ায় বোরো ধানের কিছুটা নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা থেকে জমিতে পানি ধরে রাখতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য কোনো ফসলে ক্ষতির শঙ্কা এখনো নেই। আমের মুকল থেকে এখন গুটি হয়ে গেছে, এছাড়া অন্যান্য রবি শস্য এখন শেষের দিকে। আবহওয়া দপ্তরের কাছে মাঝারি তাপপ্রবাহ আরও কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো বার্তা নেই। তবে আরও সপ্তাহখানেক এমন অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানাচ্ছেন তারা। শংকা করা হচ্ছে তাপমাত্রা বেড়ে চুয়াল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে পারে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক রাজিব খান জানান, বৃষ্টি ছাড়া তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে শুষ্কতার কারণে মানুষ সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছে। আর তাপমাত্রা বাড়লে শুষ্কতার সমস্যাও থাকে। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে বৃষ্টির তেমন কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট

মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও

মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত  মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা