প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সামাজিক জাগরণের বিকল্প নেই পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. এ. আতিক রহমান
৩০ জুলাই ২০২৩, ০৪:৩১ পিএম | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩, ০৪:৩১ পিএম
প্লাস্টিকের অতিমাত্রায় ব্যবহার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যর ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। প্লাস্টিকের বোতলে রাখা পানিতেও প্লাস্টিকজনিত ক্ষতিকর উপাদান মিশে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যা সুরক্ষার জন্য বড় হুমকি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ হলেও প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার হ্রাস করার ক্ষেত্রে কোন আইনি কাঠামো নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লাস্টিক পণ্যের ওয়ান টাইম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা জরুরী। বিশেষত সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি নিষিদ্ধ করা হলে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য সেক্টরে নিষেধ করা সহজতর হবে। প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সামাজিক ন্যায়বোধ, জীবন পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং শিক্ষা কারিকুলামে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরী। রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মেনিফেস্টোতে প্লাস্টিক দুষণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। প্লাস্টিক দুষণ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যা সুরক্ষা সম্ভব হবে। বোতলজাত ও কোমল পানীয় উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশের অংশ বিশেষ জনস্বাস্থ্যা খাতে ব্যয় করা হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। গতকাল শনিবার ঢাকার এফডিসিতে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. এ. আতিক রহমান এসব কথা বলেন। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পৃথিবীর বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার প্লাস্টিক বর্জ্যরে হুমকিতে বিপর্যয়ের মূখে পতিত হতে যাচ্ছে। সমুদ্র সৈকত দেখতে এসে যদি আমরা সমুদ্রকে ডাস্টবিনে পরিণত করি তাহলে বৃহৎ এ সমুদ্র সৈকতটি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে উঠতে পারে। সারা দেশে প্রতিদিন ৩ হাজার টন প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ আইনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক এবং মাল্টিলেয়ার প্লাস্টিকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এর উৎপাদন, বিপনণ নিষিদ্ধ করা হয়নি। অন্যদিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক বিবেচনা করে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হলেও এর ব্যবহার বন্ধের অগ্রগতি খুবই কম। শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যাগত ঝুঁকি যেমন চোখ জ¦ালা করা, শ^াসকষ্ট, লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস, মাথাব্যাথা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।
তিনি একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলেন, বাংলাদেশে ১৮ প্রজতির মাছের মধ্যে ৪৩ শতাংশ মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। সাভার ও আশুলিয়ার দুটি স্থানের বাজার থেকে এই মাছ সংগ্রহ করে এই গবেষণা করা হয়। কালিবাউশ, ট্যাংরা, পাবদা, পুঁটি, শিং, টাটকিনি, বাইনসহ ৪৮টি মাছের পেটে এসব মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। গবেষণার জন্য যেসব বাজার থেকে এসব মাছ কেনা হয়েছে সেগুলি সাধারণত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ কিংবা আশেপাশের খাল থেকে ধরা হয়। এসব মাছ মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধের জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নোক্ত ১০ দফা সুপারিশ করেন। প্রথমত প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার হ্রাস ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে সুষ্ঠ ব্যবস্থাাপনার জন্য প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ বিধিমালা প্রনয়ণ করা, পলিথিনের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপনণ নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইনী কাঠামো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা, প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, প্লাস্টিক বোতলে পানি বা কোমল পানি তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্লাস্টিক বোতল স্বাস্থোর জন্য ক্ষতিকর বিধায় সিএসআর এর আওতায় তাদের লভ্যাংশ থেকে একটা অংশ স্বাস্থ্যাখাতে ব্যয় করা, প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সামাজিক জাগরণ তৈরি করা , দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ স্থাানীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারী জোরদার করা, নগর এলাকায় পলিথিনমুক্ত বাজারের মডেল তৈরী করা, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে গণ সচেতনতামূলক টিভিসি প্রচার ও সুপারিশসহ বড় বড় বাজারগুলোর সামনে বিল বোর্ড স্থাাপন করে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা এবং প্লাস্টিকের দ্রব্যকে বারবার ব্যবহার ও পুনর্চক্রায়ণকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করতে হবে।
“ব্যক্তি সচেতনতাই পারে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে” শীর্ষক ছায়া সংসদে কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এর বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, আইনজীবী বিথিকা হাসান, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান রাহী, সাংবাদিক আখলাকুস সাফা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দুমকী উপজেলা জমিয়তে হিজবুল্লাহ সভাপতির ইন্তেকাল
সাদপন্থীদের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
ছাগলনাইয়ায় ফসলি জমির মাটি কাটায় দুইটি এক্সেভেটর জব্দ
আব্দুল্লাহ শফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
সৈয়দপুরে সাদপন্থি তাবলীগ জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ
স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা ফুয়াদ হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার কারাগারে
বাংলাদেশে আইওটি ইকোসিস্টেম উন্মোচন করেছে ওয়ানপ্লাস
শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতা ছড়ালো ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সড়কে ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে গাড়ি চলবে ১০০ কি.মি গতিতে
আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক
সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা
সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু
রামগড়ে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা
আমতলীর ইউএনও’র বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন
নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার
মণিপুর গৃহযুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে মিয়ানমার, চাঞ্চল্যকর দাবি রিপোর্টে
চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ
বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু