পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১০ এএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
বিগত দুইদিন ধরে চলে আসা সংঘর্ষের পেছনে সরাসরি মদদ দিচ্ছে পতিত স্বৈরাচার পন্থী কিছু মিডিয়া আর চিহ্নিত হাসিনা দোষর কিছু ব্যক্তি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে গুটিকয়েক সন্ত্রাসী পাহাড়ি গোষ্ঠী আর তাদের পালিত কিছু ছাত্র নামধারী ব্যক্তি। দ্রুত এদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সচেতন মহল ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
চরম আতঙ্ক আর উদ্বেগের মাঝে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খাগড়াছড়ি-বাসী। গত দুইদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ, আগুন দেওয়া, গোলাগুলি, হত্যার মতো বিভিন্ন পোস্ট দেখেছে পাহাড়-বাসী। এসব পোস্ট দেখে বেশির ভাগ মানুষই ছিলেন ঘুমহীন। সবাই নিজের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য রেখেছেন পূর্বপ্রস্তুতি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল জেলার প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
তারপরও কেন এত গুজব রটানো হলো সামাজিক মাধ্যমে? এ সম্পর্কে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার সম্পাদক মো. মাসুম রানা বলেন, ‘এর নেপথ্যে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল, রাষ্ট্রের পরাজিত শক্তি ও ভূ-রাজনীতি জড়িত। সারা রাত ধরে অনেকে মিথ্যা ও উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে তরুণ ও যুবকদের ঘর থেকে বের করে এনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চেয়েছে।’
এইচ এম ইউছুফ আলী নামের পানছড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো খাগড়াছড়িতে। এর জেরে সংঘর্ষ হলো ২৬ থেকে ২৭ কিলোমিটার দুরের দীঘিনালায়। আর আমাদের দোকান পোড়ানো হলো ঘটনাস্থল ২৫ কিলোমিটার দূরের পানছড়িতে। এর আগে পাহাড়ি যুবকরা পানছড়ি ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। সেনাবাহিনীর টহল টিমকে আটকে রাখে। গুজব পোস্টের কারণে রাতে আর ঘুমাতে পারলো না পুরো জেলাবাসী।’
প্রকৃত ঘটনার পেছনে কারা? তারা কী করতে চাচ্ছে? এসব প্রশ্নের সমাধান করার জন্য তিনি সরকার ও প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি সদরের বাসিন্দা রোমেল চাকমা জানান, আতঙ্কে সারা রাত ঘুমাতে পারেননি তারা। গুজব ও ফেসবুকের পোস্ট দেখে সবাই আতঙ্কিত ছিলেন। বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া পর্যন্ত বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে কারা ফায়দা লুটতে চায়, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
রহিম হৃদয় নামে খাগড়াছড়ি সদরের আরেক বাসিন্দা জানান, দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে পাহাড় নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি এই ফাঁদে পা না দিতে সকলকে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা, নেপথ্যে কারা এবং কী হয়েছে বা হচ্ছে সব কিছু এই ডিজিটাল যুগে গোপন করা যাবে না। সব কিছুই পরিষ্কার করা হবে। যারা সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে উসকানি দিচ্ছে তাদেরও শনাক্ত করা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শক্তহাতে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘এই ঘটনার নেপথ্যে কারা আছে, তা বের করা হবে। দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে তার আগে গতকালকের ঘটনায় যাতে আর অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে, সেজন্য এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা সভা করা হবে।’ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে অহেতুক গুজব না ছড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধও জানান জেলা প্রশাসক।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে খাগড়াছড়ির মামুন হত্যার প্রতিবাদে এদিন বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও কলেজগেট এলাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর পরপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে একটি বিবরণ দিয়েছে আন্তঃ-বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আইএসপিআর এই বিবরণ দিয়েছে। এতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে করে সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণের গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামক একজন যুবক নিহত হয়। পরবর্তীতে সদর থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীঘিনালা কলেজ হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফ (মূল)-এর কতিপয় সন্ত্রাসী মিছিলের উপর হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছড়ে। এ প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।
সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়। উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকাসমূহে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাকর করে তুলে।
দ্রুততার সাথে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সকল উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সকল পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করতে বলা হয়।
একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহলদল রাত সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফ (মূল)-এর নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফ (মূল)-এর সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল-দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্ম-রক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। এ গোলাগুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।
একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের উপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সঙ্গে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফ (মূল)-এর নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসে ভাঙচুর করে।
গতকাল শুক্রবার সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলা সদরে 'সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন'-এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনসাধারণ একটি মিছিল বের করে বনরুপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরুপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে উভয়পক্ষের বেশকিছু লোকজন আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছে আইএসপিআর। বলা হয়েছে, অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের সনাক্ত-পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রোগীদের সুস্থ করে তুলতে ‘রোবটের মতো’ কাজ করেছে লেবাননের যে চিকিৎসক
মোদীর সফরের আগে ভারত সরকারের নামে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা পান্নুনের
মিয়ানমার থেকে মণিপুরে অনুপ্রবেশ ৯০০ জঙ্গির, দাবি ভারতের
৪৩ দিন পর কাজে ফিরলেন আর জি করের জুনিয়র চিকিৎসকরা
গিল-পান্তের ব্যাটে পিষ্ট বাংলাদেশ
ফের মৃত্যুর খেলা! ‘স্কুইড গেম সিজন ২’র টিজারে বিপদের বার্তা
অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি কচুয়ায় যুবলীগ নেতার ৪টি দোকান পুড়েছে দুর্বৃত্তরা
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
লেবাননের বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
রাঙামাটিতে সেনা, বিজিবি ও পুলিশের টহল, পরিস্থিতি শান্ত
পরমাণু দূষিত পানি নিয়ে চীন ও জাপানের কিছু ঐকমত্য
ঝিকরগাছায় বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান মিনুসহ ২১ নেতাকর্মী বহিষ্কার
হিজবুল্লাহর ভয়ে ইসরাইলিদের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে থাকার নির্দেশ
ভারতের ঘুম হারাম করে পাকিস্তানকে ভয়ঙ্কর হেলিকপ্টার দিচ্ছে চীন
পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতি হামলা, সেনাসহ নিহত ১৮
জুলাই বিপ্লবে শহিদের সংখ্যা ১৪২৩, আহত ২২ হাজার
নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল গ্রেফতার
বিচারবিভাগ নিয়ে আজ রোডম্যাপ দেবেন প্রধান বিচারপতি
নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল
নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং