বনভোজনে মহেশখালীর ইউএনও মিকি মার্মা -অপসারণ দাবী

ফ্যাসিবাদের দোসর খালেক চেয়ারম্যান এর সাথে প্রমোদ ভ্রমণ

বনভোজনে মহেশখালীর ইউএনও মিকি মার্মা -অপসারণ দাবী

কক্সবাজার ব্যুরো

১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দলীয় নির্বাচিত অনেক চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যায়। তার মধ্যে মহেশখালীতে শাপলাপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল খালেক অন্যতম। অনেকদিন পর আত্মগোপনে থাকা এই চেয়ারম্যানের দেখা মিলেছে মহেশখালীর ইউএনও'র সাথে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী দোসর শাপলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালেক ও তার পরিবারের সদস্যদের বনভোজনে মেতেছেন মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মার্মা।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের দিনেশপুর গ্রামের - পশ্চিমে নদী দখল করে - বানানো ছেড়াদিয়া প্রজেক্টে এ বনভোজন আয়োজন করেন চেয়ারম্যান আবদুল খালেক। হঠাৎ এমন দৃশ্য এখন মহেশখালীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই খালে চেয়ারম্যানকে সম্প্রতি ছাত্র জনতা গণধুলাই দিয়েছিল কক্সবাজার আদালতে।

যেখানে খালেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেখানে তাদের এমন সখ্যতা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? তাহলে ইউএনও কি আওয়ামী দোসর বলে ধরে নেয়া যায়? মহেশখালীর মানুষের দাবী মহেশখালী ইউএনও মিকি মারমাকে শাস্তির আওতায় আনা হউক।

জানা যায়, মহেশখালীতে যোগদানের পর থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নানান কারণে
সমালোচিত। এবার ভূমিদস্যুর বনভোজনে অংশগ্রহণ করে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়লেন মীকি মারমা। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শাপলাপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেক চৌধুরী। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলবল নিয়ে নানান হুমকি দেয়াসহ আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেছিল
আওয়ামী দোসর আব্দুল খালেক
চেয়ারম্যান।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হলে গা ঢাকা দেন চেয়ারম্যান খালেক। তারা আরো জানান, গত বৃহস্পতিবার গোপনে বাড়িতে আসেন খালেক। তারা আরো জানান চেয়ারম্যানের উঠোনে সরকারি গাড়ি রেখে মীকি মার্মা নৌকায় করে খালেক চেয়ারম্যানের অবৈধভাবে দখল করা প্রজেক্টে যান। সেখানে খালেক চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী হামিদা পারভিন, ওয়ার্ড আওয়া লীগের সভাপতি নুরুল আমিন, শাহাব উদ্দিন বাহাদুর, খালেকের ডানহাত বনখেকো শেফায়েত এবং খালেকের অবৈধ কাজের নিয়ন্ত্রক ইয়ার মোহাম্মদ গং এর সাথে বনভোজনে অংশ নেন ইউএনও মিকি মার্মা। সাথে ছিল ইউএনও অফিসে কয়েকজন স্টাফও।

এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অনেক নেতারা শুরু থেকেই অভিযোগ তুলছেন শাপলাপুরের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক চৌধুরী ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌরসভার গুনগাছতলায় ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন এবং সরাসরি
হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।

বনভোজনে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মার্মা জানান, "খালেক চেয়ারম্যানের স্ত্রীসহ প্রজেক্ট দেখতে এসেছেন। সেখানে খাওয়া দাওয়া করছেন।” ছাত্রদের উপর হামলাকারীর সাথে বনভোজনে কেন অংশ নিলেন সেই বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ইউএনও। এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, অভিযোগের বিষয়ে তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিবেন।

জানা গেছে, খালেক চেয়ারম্যান তালিকাভুক্ত নদী খেকো ও ভূমিদস্যু। শাপলাপুরে যার বিশাল বাহিনী রয়েছে। যাদের ব্যবহার করে পাহাড় কাটা, বনের গাছ পাচার, নদী দখল, সরকারী জমি আত্মসাৎ, প্যারাবন কাটা, বন্যপ্রাণী পাচারসহ একাধিক পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করেন এই বিতর্কিত চেয়ারম্যান।

তার ডানহাত খ্যাত শেফায়েড অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন করাত কল। আরো জানা যায়, খালেক চেয়ারম্যানের এইসব অবৈধ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মার্মা। পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ বন্ধে অভিযোগ দিলে খালেকের বিরুদ্ধে অভিযান চালান না তিনি। যার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ এই ইউএনও'র বিরুদ্ধে। আর এসব লেনদেনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন ইউএনওর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর। যার বিরুদ্ধেও রয়েছে পরিবেশ ধ্বংসের অহরহ অভিযোগ।

বিভাগ : বাংলাদেশ