সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে দ্রুত নির্বাচন দিন
০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৩ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৩ এএম
সংস্কার আগে, নাকি নির্বাচন আগে এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক চলতে থাকলে দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে। তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে শিগগির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গতকাল রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘ঢাকা সমাবেশে’ সিপিবি নেতারা এ দাবি জানান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই প্রথম ঢাকায় বড় সমাবেশ করল সিপিবি। সমাবেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে সিপিবির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে লাল পতাকা মিছিল করে।
সমাবেশে বক্তব্যে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেন, সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে এটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে সংস্কার আগে, নাকি নির্বাচন আগে, এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করছে কোনো কোনো মহল। সংস্কার ও নির্বাচন সাংঘর্ষিক নয়। এটি একে অপরের পরিপূরক। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আগেও স্বৈরাচারী সরকার বলত, গণতন্ত্র চান না উন্নয়ন চান। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন সাংঘর্ষিক ছিল না। একই গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকলে সহস্র শহীদের আত্মদানের ফলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে।
গণতন্ত্র এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাক্সক্ষা জুলাই-আগস্টের মূল লক্ষ্য ছিল বলে উল্লেখ করেন সিপিবি সভাপতি। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অতি সত্বর নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করে দেশ জাতিকে সংকট থেকে মুক্ত করতে হবে। নিয়মিত সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে। জুলাই–আগস্ট হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৃত অপরাধীদের তথ্য যাচাই–বাছাই করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
জরুরি সংস্কার করে দ্রুত জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সমাবেশে বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে জরুরিভাবে নির্বাচন দিয়ে জনগণের রায়ের সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কলঙ্কিত করেছে উল্লেখ করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ মিথ্যা বয়ান দিয়েছিল। ওই বয়ান দিয়েছিল লুটপাটের জন্য। তারা ২৮ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। লুটপাট করতে ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করছিল। আমাদের প্রথম কর্তব্য হবে, এই ফ্যাসিস্ট শাসন আর যাতে বাংলার মাটিতে স্থান করে নিতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা। নয়া যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করে নতুন ভবিষ্যৎ তৈরির কথাও বলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বামপন্থীদের নিয়ে বিকল্প মঞ্চ গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি। রাজনীতির বাইরে কোনো রকম খেলা বাংলার মাটিতে হতে দেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের জরুরি কাজ হলো আর দেরি না করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা। এর কোনো বিকল্প নেই। অন্তর্র্বতী সরকারকে জনগণের ওপর ভরসা রাখতে হবে। তা না করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে নানা অপশক্তি সুযোগ নেবে। তাই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা, নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং জনগণের জান–মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার নানা কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়, এমন মন্তব্য করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন একটু উল্টিয়ে দিয়েছি, ক্ষমতায় অনেক দিন থাকি। থাকতে কি পারবেন? নানা ধরনের ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। আমরা বলতে চাই, ভোট জনগণ দিতে পারেনি। ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছিল, এসব কারণে মানুষ বিক্ষুব্ধ ছিল। এ জন্য হাসিনাকে দেশছাড়া করা হয়েছিল। আর আপনি যদি সংস্কারের ট্যাবলেটের কথা বলে জিনিসপত্রের দাম কমাতে না পারেন। জনজীবনে শান্তি দিতে না পারেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক–আইএমএফের কথা শোনেন। তেলের দাম–গ্যাসের দাম কমাতে না পারেন। নতুন করে ভ্যাট বসিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ান। তাহলে আপনি তো একই পথে চলছেন।’
অরাজনৈতিক শক্তি অন্য কারও মদদে যাতে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে না পারে, সে জন্য দ্রুত ভোটের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনোভাবে অভ্যুত্থানের শহীদদের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না। অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করবে, সেটাও আমরা চাই না। সংস্কারের নামে কী করতে চান, তা পরিষ্কার করতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রুহিন হোসেন বলেন, জুলাই–আগস্ট হত্যাকা-ের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দৃশ্যমান কাজ নেই। অন্তর্র্বতী সরকার এই কাজ দ্রুততার সঙ্গে করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সমাবেশ থেকে জানানো হয়, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করবে সিপিবি। ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালিত হবে। এই সময়ে দেশের অন্তত হাজার কিলোমিটারজুড়ে পদযাত্রা করা হবে। মানুষের ঘরে ঘরে যাবেন সিপিবি নেতাকর্মীরা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাই মামলার আসামি গ্রেপ্তার
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল রোজার আবেগঘন স্ট্যাটাস
ভারতে নয় জজদের প্রশিক্ষণের জন্য বিজ্ঞ মুফতিদের কাছে পাঠান
এক্সিকিউটিভ স্টাডি অ্যাব্রোডের আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ান এডুকেশন এক্সপো অনুষ্ঠিত
আড়ানী পৌরসভায় গণ-অভ্যুত্থানের ছবির উপর জয় বাংলা স্লোগান- ছাত্রজনতাসহ সকলের নিন্দা ও ক্ষোভ
এবারের আন্দোলনের ঘোষক ও রূপকার তারেক রহমান : আজাদ
নালিতাবাড়ীতে গর্তে পড়ে শিশুর মৃত্যু
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ
দূর্দান্ত এআই সুবিধাযুক্ত নিও কিউএলইডি ৮কে টিভি নিয়ে এল স্যামসাং
সেনা ইন্স্যুরেন্সকে অ্যাডভান্সড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন দেবে ব্র্যাক ব্যাংক
ফারুক হাসানের ওপর হামলা : হামলাকারীদের ধরতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম নুরের
মেটলাইফ বাংলাদেশের “সেরা এজেন্সি ২০২৪” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে নোয়াখালী জেলার “সুমন এজেন্সি”
রাজধানীতে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যমেলা শুরু বুধবার
আয়নাঘর পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন গণমাধ্যমকর্মীরা: প্রেস সচিব
মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন-২০২৫ সম্পন্ন
আওয়ামী লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে অতীষ্ট প্রবাসীরা; কূটনীতিক মহসিনকে অপসারণ ও শাস্তির দাবি
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা
প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
যাকাতের টাকা থেকে কি দরিদ্র ছাত্রদের লেখা-পড়া করার জন্য সহায়তা প্রসঙ্গে।