প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য সাংবাদিক হবে
২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার জন্য এই সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো যাতে যথাযথভাবে তাদের ভূমিকা পালনে সক্ষম হয় সেই উপযোগী নীতিমালা প্রণয়নে কমিশন সুপারিশ করবে। আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে সাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য হবে।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে বিভাগের সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব না। দেশে ব্যক্তি-ব্যবসায়িক স্বার্থে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর জন্য সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহারের প্রবণতা প্রবল। দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ন্যূনতম একটি বেতনের নিশ্চয়তা থাকা দরকার। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকবে না।
গত ১৫ বছরের দুঃশাসন প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, কর্পোরেট হাউসগুলো তাদের রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারের ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রয়োগ করে এবং জনস্বার্থকে বাদ দিয়ে তাদের মালিকদের পক্ষে আমলাতন্ত্র ব্যবহার করে মূলধারার গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক ক্ষমতা, কালো টাকা এবং সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য ও বিভাজনের অভাবের সুযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে পত্রিকার সার্কুলেশনের সংখ্যা ডিএফপির মিডিয়া তালিকা তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে।
মূলধারার গণমাধ্যম কেন ব্যর্থ হলো তা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মূলধারার গণমাধ্যম ব্যর্থ হয়েছে রাজনীতির কারণে। রাজনৈতিক প্রভাব। সরকারের বিভিন্ন স্বৈরাচারী পদক্ষেপ। মামলা-মোকাদ্দমা ও আইন দিয়ে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়নের চেষ্টা। ভয়-ভীতি প্রদর্শন। আবার একইভাবে কর্পোরেট ডিড। বড় বড় মালিকদের যে করপোরেট স্বার্থ। সেই কর্পোরেট স্বার্থে অতি মুনাফার লোভে সেগুলো থেকে তারা সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করেছেন। তাদের স্বার্থে আত্মরক্ষার জন্য, তাদের স্বার্থে তাদের পক্ষে ব্যবহারের জন্য। তখন দেখা গেছে সংবাদমাধ্যম মানুষের যে স্বার্থ, মানুষের যে ভোগান্তি, সেই ভোগান্তির কথা না লিখে বরং তাদের কথাই লিখছে। মালিকদের কথাই লিখছে। যে মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থ উপকৃত হবে, লাভবান হবে। ফলে এটা একটা দুষ্টুচক্রে পরিণত হয়েছে। এই দুষ্টুচক্র না ভাঙলে গণমাধ্যমের সমস্যার সমাধান খুব সহজেই আসবে না।
কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিজে যেহেতু ভালোভাবে চলছে না, সঠিকভাবে চলছে না, তখন তার কর্মীদেরকেও বঞ্চিত করছে। সেখানে অনেকগুলা কারণ রয়েছে। তার একটা হলো অনেক বেশি সংখ্যক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান। অনেক বেশি সংখ্যক পত্রিকা। অনেক বেশি সংখ্যক টেলিভিশন। এগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নেই। পরিবেশটা এমনই, যেখানে যার যত রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, যার যত কালো টাকার দাপট আছে, সে তত বেশি লাভবান হচ্ছে, তত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে এবং যেহেতু রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে, তার টাকার প্রভাব রয়েছে, সে কারণে তার গণমাধ্যমের ওপরে প্রভাবটা জোরালো ও শক্তিশালী। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কিছু করতে পারছি না।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা গণমাধ্যম সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। উপস্থাপিত প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে— মিডিয়া কমিশন গঠন; সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে পিআইবির শাখা অফিস স্থাপন; রাজধানীকেন্দ্রিক সাংবাদিক ও মফস্বল এলাকার সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবধান নিরসন; সকল মিডিয়াকে ওয়েজবোর্ডের নীতিমালা অনুসরণে বাধ্যকরণ; সাংবাদিকতা পেশার স্বীকৃতি প্রদান; সাংবাদিকদের দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখা; অনলাইন মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা; সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধমূলক আইন বাতিল; সাংবাদিকতার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ; ডিএফপি তালিকাভুক্তিকরণে দলীয় প্রভাব দূরীকরণ; সাংবাদিকদের একক পরিচিতি নম্বর প্রদান; সাংবাদিকদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা; সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণ; বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি।
মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, বেগম কামরুন্নেসা হাসান, মোস্তফা সবুজ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের উপসচিব কাজী জিয়াউল বাসেত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল, দৈনিক আমাদের প্রতিদিনের সম্পাদক মাহবুব রহমান হাবু, দৈনিক দাবানলের সম্পাদক খন্দকার মোস্তফা সরওয়ার, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরপিইউজে) সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, সাধারণ সম্পদক সরকার মাজহারুল মান্নান, এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হক, দৈনিক সকালের বাণীর পরিকল্পনা সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক, সময় টিভির ব্যুরো প্রধান নাজমুল ইসলাম নিশাত, বাংলাভিশনের রংপুর ব্যুরো জুয়েল আহমেদ, এটিএন নিউজের রংপুর প্রতিনিধি শাহরিয়ার মিমসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় রংপুর বিভাগের আট জেলা ও উপজেলা থেকে আসা অনলাইন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ১২০ জন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সংবাদ-সাংবাদিকতা এবং সুযোগ-সুবিধাসহ আর্থিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফিরলেন স্বামী-স্ত্রী
চার দিনের সফরে সোমবার সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা