বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামী ধরতে গিয়ে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা। এসময় আসামীর আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীরা একজোট হয়ে ডিবি পুলিশের সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে এবং তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বেঁধে রাখে বলেন জানান প্রত্যক্ষর্শীরা।
পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসলেও আসামী জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের বেরাইদ এলাকার জাকির হোসেনের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
অভিযুক্ত জাকির হোসেন বনগাঁও ইউনিয়নের বেরাইদ এলাকার আলী জানের ছেলে। সে জিয়া মঞ্চ এর সাভার থানা কমিটির সাধারন সম্পাদক বলে জানিয়েছে পরিবারের লোকজন। তবে পুলিশ বলছে জাকির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলার আসামি এবং বনগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নিজেকে বিএনপির কর্মী পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে।
জাকিরের স্ত্রী জোবাইদা আক্তার মানিকি বলেন, আমরা রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাচ্ছিলাম। রাত ১২ টার দিকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা এসে আমাদের গেট থাপরিয়ে সাহায্য চায়। একজন নারী নিজেকে ফারহানা পরিচয় দিয়ে গেট খুলতে বললেও আমরা ভয়ে গেট খুলিনি। এসময় তারা আশপাশের বাড়িগুলোতেও ডাকাডাকি করলে সবাই উঠে আসে এবং অনেক লোক জরো হয়। এরপর কি হয়েছে আমি আর বলতে পারছিনা।
জাকিরের ছোট বোন পরিচয় দিয়ে নাম প্রকাশে এক নারী বলেন, রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল লোক আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যেতে আসে গেট ভাংচুরের চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পেরে উপস্থিত লোকজনের পরিচয় জানতে চায়। তখন তারা নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দিলেও আইডি কার্ড দেখাতে পারেনি। ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যেতে পারলে গুম করে ফেলতো তারা। আমার ভাই আগে থেকেই বিএনপি করতো। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সময় নাশকতার অভিযোগে অনেক মামলা হয়েছে। পিঠ বাঁচাতে একসময় জাকির আওয়ামী লীগের লোকের সাথে মিলে চলার চেষ্টা করে।
জাকিরের মামা ফারুক বলেন, রাতে দুটি হায়েস গাড়িতে করে একদল দুর্বৃত্ত জাকিরে বাড়িতে আসে। এসময় স্থানীয়রা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে দুইজন দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এঘটনায় এলাকাবাসীরা তাদেরকে মারধর করে বেঁধে রেখে পুলিশ ফোন দেয়। পরে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে আটককৃতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, রাতে পুলিশ পরিচয়ে জাকিরতে ধরতে যাওয়ায় জাকিরের বাহিনীরা সদস্যরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে বেঁধে রাখে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন নারীও রয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জাকির এতোদিন এলাকায় যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়িয়েছে। বর্তমানে ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ায় নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। এখন সে নিশান সিটিতে দুটি প্লট কিনে সদস্য হয়েছে। এছাড়া হাউজিং কোম্পানির পক্ষে সাধারন মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, মানুষকে মারধরসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করার জন্য তাদের শতাধিক লোকের একটি গ্রুপ রয়েছে। যাদের ডেকে এনে রাতে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়েছে।
ঢাকা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ জালাল উদ্দিন বলেন, জকির নামে ছাত্র হত্যা মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে এসআই সেকান্দারের নের্তৃত্বে একটি টিম বেড়াইদ এলাকায় অভিযানে যায়। এসময় আসামি সন্দেহে গ্রেপ্তার করতে যাওয়া কোনো হত্যা মামলার আসামি নয় দাবি করে পুলিশের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকাসীরা ভুয়া পুলিশ বলে আমাদের লোকজনকে আটকে রাখলে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করি।
এছাড়া ছাত্র হত্যা মামলার আসামী জকিরের বাবার নাম অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে এবং বাদীও আসামীকে চিনেন না জানিয়ে ওসি আরও বলেন, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেক ভুল রয়েছে এবং উল্টা পাল্টা অনেককে আসামী করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবো। প্রসঙ্গতঃ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে বাদী রিয়া শেখ। ওই মামলায় বনগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের জকির হোসেন (৩৮) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে পিতার নাম জবেদ আলী রয়েছে।