'মুক্তচিন্তা ও তারুণ্যে, জাবিসাস চুয়ান্নে'

Daily Inqilab জাবি থেকে হাসান রাকিব

০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের চলাকালীন জুলাইয়ের ১৭ তারিখের কথা। থমথমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা। এতে বিপন্ন হতে পারে জীবন। এমন জীবনাশঙ্কার মধ্যেও একদল তরুণ ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছেন। একপর্যায়ে সাহসিকতার পরাকাষ্ঠা দেখানো ওই তরুণদের কয়েকজন আহত হলেন। তবুও বজায় রাখলেন তাদের পূর্ণ পেশাদারিত্ব। ইতোপূর্বে সত্য সংবাদ প্রকাশের জেরে ক্ষমতাসীনদের চক্ষুশূল হয়ে টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন এই তরুণদের অনেকে, যার শোধ তুলতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আঘাত করা হলো তাদের অনেককে। এই ভয়হীন উদ্যমী তরুণেরাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকবৃন্দ। আর তাদের সংগঠন ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস)’। শুধু চব্বিশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন নয় নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান কিংবা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরতে এই সংগঠনটি রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

 

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। এর পর পরই ১৯৭২ সালের ৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পথচলা শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস)’। সে হিসেবে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আপোসহীনভাবে কাজ করে আসা এই সংগঠনটি হাটি হাটি পা পা করে আজ চুয়ান্ন বছরে পদার্পণ করেছে।

জাবিসাসের শুরুর বীজটা বপন করেছিলেন সাতজন স্বপ্নবাজ তরুণ। বর্তমানে সংগঠনটির কার্যালয়ের আধুনিকায়ন ও কলেবর বাড়লেও যাত্রার শুরুটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হল ক্যান্টিনে কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের পরিসংখ্যান বিভাগের রাশেদ আহমেদ আলীকে সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের আবুল কাসেমকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। এরপর থেকেই বস্তুনিষ্ঠতা, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে চলছে আপোসহীন এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠকদের সেই অবিচল বিশ্বাস ও প্রচেষ্টায় তা আজ পরিণত হয়েছে বিশাল মহীরুহে।বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সফলতা, সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সংগঠনটি যেমন কার্পণ্য করেনি তেমনি নানা অসংগতি-অনিয়ম তুলে ধরে নিয়মতান্ত্রিক ধারায় পরিচালনার ক্ষেত্রে শুভাকাঙ্ক্ষীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বারংবার। শিক্ষার্থীসহ অংশীজনদের ন্যায্য অধিকার অদায়ে সবসময় ভরসাস্থলের ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি। শুধু সংবাদ প্রচার নয়, বরং আপোসহীনভাবে সত্য সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করেছে এই সংগঠন।

 

ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংবাদিকতার পথিকৃত জাবিসাস কেবল সাংবাদিকতা চর্চার জায়গাই নয় বরং গণতন্ত্র, মননশীলতা, পেশাদারিত্ব ও প্রগতিশীলতার পাঠ গ্রহণের জায়গাও। এতে প্রতি বছর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সদস্যদের ভোটে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এতে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রেখেছে সাংবাদিক শিক্ষার্থীরা। তাদের মননশীলতা চর্চা ও বিকাশের ধারা বজায় রাখতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংগঠনটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করছে। এসব আয়োজনে সত্য ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়। যা সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশের আগে এক গুরুত্বপূর্ণ সোপানও বটে। সংগঠনটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং প্রয়োজনের আলোকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর সংগঠনটি থেকে ‘সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। জাবিসাস শুধু সাংবাদিক সংগঠন নয়, এটি সুস্থ সংস্কৃতি তুলে ধরা ও প্রগতিশীলতা চর্চার মঞ্চ হিসেবেও পরিচিত। সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এই সংস্কৃতি দেশের গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর সংগঠনটির সাংবাদিকেরা। এতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে জায়গা হয়েছে আরো প্রশস্ত।

 

এই সংগঠনটি সত্য ও মুক্ত সাংবাদিকতার আলোকবর্তিকা হিসেবে তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে। শুধু অতীতে কিংবা বর্তমানে নয় ভবিষ্যতের জন্যও তরুণদের প্রস্তুত করেছে উল্লেখ করে বর্তমান সভাপতি মেহেদী মামুন বলেন, “জাবিসাসের দীর্ঘ এই পথচলা সংগ্রাম, সাফল্য ও ত্যাগের গল্পে সমৃদ্ধ। সংগঠনটি সূচনালগ্ন থেকেই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আপোসহীন অবস্থান নিয়েছে। যেকোনো সাংবাদিক সংগঠনের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সত্যনিষ্ঠতা বজায় রাখা। জাবিসাস সেই পরীক্ষায় বারবার উত্তীর্ণ হয়েছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রেখে এই সংগঠনটি সামর্থের প্রমাণ দিয়েছে। প্রমাণ করেছে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কখনোই দমিয়ে রাখা যায় না। ‘মুক্তচিন্তা ও তারুণ্যে জাবিসাস চুয়ান্নে’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করেই জাবিসাস আগামী দিনগুলোতে আরও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে।”


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কুমিল্লার সাবেক এমপি শফিউদ্দিন শামীমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি
পুরান ঢাকায় আগুনে একজনের মৃত্যু
টঙ্গীতে পোশাক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা
পিপিএম পদক পেলেন কনস্টেবল রিয়াদ
আরও
X

আরও পড়ুন

অভিজ্ঞদের নিয়েই আসছে জিম্বাবুয়ে

অভিজ্ঞদের নিয়েই আসছে জিম্বাবুয়ে

বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডের বর্ষসেরার তালিকায় যারা

বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডের বর্ষসেরার তালিকায় যারা

কুমিল্লার সাবেক এমপি শফিউদ্দিন শামীমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

কুমিল্লার সাবেক এমপি শফিউদ্দিন শামীমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

আবেদ আলীর বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি জব্দ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

আবেদ আলীর বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি জব্দ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পুরান ঢাকায় আগুনে একজনের মৃত্যু

পুরান ঢাকায় আগুনে একজনের মৃত্যু

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত : আইসিসিবি সভাপতি

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত : আইসিসিবি সভাপতি

আরব আমিরাত ও তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

আরব আমিরাত ও তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

পহেলা বৈশাখ পান্তা-ইলিশ খাওয়া আমাদের সংস্কৃতি না -প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পহেলা বৈশাখ পান্তা-ইলিশ খাওয়া আমাদের সংস্কৃতি না -প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বৈঠক

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বৈঠক

ঢাকায় মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি

ঢাকায় মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের নায়কদের সচিব করার প্রস্তাব

গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের নায়কদের সচিব করার প্রস্তাব

ওয়াকফ বিল ইস্যুতে সারজিস :  মোদিকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই

ওয়াকফ বিল ইস্যুতে সারজিস :  মোদিকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই

উদ্যোক্তাদের জন্য ৮০০-৯০০ কোটি টাকার তহবিল আসছে

উদ্যোক্তাদের জন্য ৮০০-৯০০ কোটি টাকার তহবিল আসছে

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা-মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা-মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ

গাজার পক্ষে ড. ইউনূসের বিবৃতি

গাজার পক্ষে ড. ইউনূসের বিবৃতি

শুল্ক ৩ মাস স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন ড. ইউনূস

শুল্ক ৩ মাস স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন ড. ইউনূস

জনসমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প

জনসমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প

নিরাশা নয়, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-১

নিরাশা নয়, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-১