মরণ বাঁধ ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদীতে পানির বড় আকাল

Daily Inqilab গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে মো. হায়দার আলী

০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম

নদীর দেশ বাংলাদেশে বর্তমানে নদীর বেহালদশা। পদ্মা নদীসহ শ শ নদী মরে যাচ্ছে, অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে । দেশে জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে । এখন শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা একটি নদীর নাম পদ্মা । এটা কি নদী ? বিশ্বাস করা যায় না । পদ্মার সেই খরস্রোত নেই কেন ? এমন সব প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে একালের শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রীসহ কোন আগন্তুককে । বিশাল-বিস্তৃত ধুধু বালুচর আর পানির ক্ষীণ বিল কিংবা লেকের মতো পদ্মার ঐতিহ্য অস্তিত্বকে এতটা বিপন্ন করেছে।
 
 
ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে আবহমানকাল ধরে প্রবাহিত গঙ্গা-পদ্মা নদীর ভারতের অংশ ফারাক্কায় । ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে ফরাক্কা ব্যরেজটি একতরফাভাবে নির্মাণ করে ভারত। কিন্তু ভারত কৌশল গত ভাবে ব্যারেজটি তখনই চালু করেনি । তখন পাকিস্থানে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথানের ১৯৭০ সালের জেনারেল ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারি এবং সবশেষে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বধীনতা অর্জনের কাল। তারপরেও ভারত অপেক্ষা করে এবং অবশেষে ১৯৭৫ ইং সালের ২১ এপ্রিল ভারত ফারাক্কা চালু করার পর থেকে অব্যাহতভাবে মরণদশা শুরু হয়েছে ।
 
 
নদী আছে পানি নেই, বালু আছে কিন্তু কোথায় যেন কোন মাটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পদ্মার কোলে জেগে উঠা চরে সবুজ ফসল ফলানো সম্ভাব হচ্ছেনা । প্রতি বছর বালু জমতে জমতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে । পদ্মার ভয়াবহ রুপ দিনে দিনে হারিয়ে ফেলেছে । বিগত বছরগুলোতে এ নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এ বার তাও নেই । একটা বিলে পরিণত হয়েছে । এখন রেলবাজার ঘাটের সামনে মানুষ সাঁতার দিয়ে নদী পার হতে পারছেন। কয়েক বছর পর নৌকার পরিবর্তে গরুর গাড়ী কিংবা সাইকেলে নদী পার হওয়া যাবে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
 
 
ফারাক্কা ব্যরেজের সব কয়টি গেট বন্ধ করে নদী শাসন করে মেরে ফেলা হয়েছে অসংখ্য নদ নদীকে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে পরিবেশ জীবন জীবিকায় নেমে এসেছে প্রচন্ড ধ্বস। দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে । গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে যাওযায় উত্তাঞ্চলের বেশীর ভাগ নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায় । দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট । উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে এই ফারাক্কা ব্যারেজ; এসব এলাকার মানুষ যাকে মরণ ফাঁদ বলে জানে ।
 
 
এ ব্যারেজ চালু হওয়ার সময় বলা হয়েছিল এটি উভয় রাষ্টের কল্যাণের প্রতীক। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভরতের বিমাতাসুলভ আচারণের কারণে আজ এ ব্যারেজ দেশের মানুষের জন্য অকল্যাণ। একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত তাদের বন্দর, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখলেও এদেশের কৃষি, নৌযোগাযোগ, পরিবেশ, জীবন-জীবিকাকে ঠেলে দিয়েছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে । বিভিন্ন সময়ে পদ্মার পানি বন্টন নিয়ে অনেক আলোচনা মাপজোঁক আর পর্যবেক্ষণ হয়েছে । চুক্তি হয়েছে, চুক্তি নিয়ে সংসদে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়ছে। কিন্ত বাংলাদেশের ভাগ্যে কখনই চুক্তি মোতাবেক পানি জুটেনি । তবে পানি এসেছে সংসদে, টেলিভিশন, রেডিও, প্রিন্ট মিডিয়া, অন লাইন পত্রিকায়, টেলিফোনে। এর ফলে শুধু পদ্মা নয় অভিন্ন ৫৪টি নদ-নদীর পানি ভারত একতরফা প্রত্যাহার করে চলেছে । ফলে এপারের নদ-নদীগুলো মরে যাচ্ছে ।
 
 
পদ্মা নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে শাখা নদী বড়াল, মরাবড়াল, নারোদ, মুছাখান, ইছামতি, চিকনাই, নাগর, ধলাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, হিসলা, কাজলা, চিত্রা, সাগোরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ মরে যাচ্ছে। কালিগঙ্গা, বেলাবত এসব নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে । বর্ষা মৌসুমে কিছু দিনের জন্য এসব নদীতে পানি থাকলেও প্রায় সারা বছর থাকে পানিশূন্য । তাছাড়া এসব নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে দু পার্শ্ব অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে । সরকারী দলের তথা কথিত যারা বালিখোর, টিআর গোর, টেন্ডার বাজ, সরকারী খাদ্য গুদামে গমখোর, খাস পুকুরখোর, তারা ড্রেজার, টলি, ট্রাক, লরি প্রকাশ্যে নামিয়ে নদী থেকে দেদারসে বালি মাটি নিয়ে গিয়ে ইটভাটা, ভরাটসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ করায় পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীর পাড়, কোটি কোটি টাকার নির্মিত বাঁধ নষ্ট করে দিচ্ছে যা দেখার যেন কেউ নেই। দেশের নদী এতটা বিপন্ন হয়েছে যেন এখন এসব নদীর নাম বইয়ের পাতায় কিংবা মানচিত্রে স্থান পেয়েছে । 
 
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশর কোটি কোটি মানুষ বন্যা, খরা, জলচ্ছাসের কবলে পতিত হয়, সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, দুঃখের সীমা থাকে না । অকালে ঝরে যায় লাখ লাখ মানুষ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর প্রাণ । জলবায়ুর উপর দেখা দেয় বিরুপ প্রভাব। এর অন্যতম প্রধান কারণ মরণ বাঁধ ফারাক্কা । মৃত. মৌলানা আবদুল হামিদ খাঁন ভাসানী ফারক্কা ব্যারেজের বিরুদ্ধে ব্যারেজমূখি ফারাক্কা লং মার্চ করেছিলেন, ব্যরেজটির মারাত্বক পরিণতির কথা বিবেচনা করে । 
 
 
 বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈপরীত্যের কারণ, জলবায়ুর পরিবর্তন। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রতিক্রিয়া বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। একই দেশে একই সময়ে বৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজাত ফল। এটা লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে বৃষ্টি হয়েছে সেখানে খুব বেশি হয়েছে। যেখানে হয়নি সেখানে একেবারেই হয়নি। অতীতে এরকমটি কখনো দেখা যায়নি।
 
 
ভারত পানি না দিয়ে বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারার ভারতীয় অভিসন্ধির কারণে নদী স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধিক ছোট নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। বড় নদীগুলোর অস্তিত্বের সংকটও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রথমেই বলেছি ভাটির দেশ বাংলাদেশ, ভাটির দেশের ক্ষতি হয়, এমন কিছু উজানের দেশের না করার নীতি-বিধানের তোয়াক্কা না করেই ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নিচ্ছে।
 
 
গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ যাবৎ দুটি চুক্তি হলেও বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি। চলমান ৩০ সালা চুক্তি বাংলাদেশের ন্যায্য পানিপ্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। আগের চুক্তিতে যতটুকু নিশ্চয়তা ছিল, এ চুক্তিতে তাও নেই। ফলে পানিবঞ্চনা আরো বেড়েছে। এ ব্যপারে বাস্তধর্মী পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী বলে সচেতন মহল মনে করেন।

বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সদরঘাটের ব্যবসায়ীকে হত্যা: স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ইসরাইলী বর্বরতার বিরেদ্ধে বরিশালে বিএনপি’র বিক্ষোভ
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৮
ইসরাইলি নৃশংস গণহত্যার  প্রতিবাদে গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
বোয়ালমারীতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন
আরও
X

আরও পড়ুন

সউদীতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

সউদীতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

ভারতের চেয়ে বেশি কেউ বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না

ভারতের চেয়ে বেশি কেউ বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না

জার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার

জার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার

সদরঘাটের ব্যবসায়ীকে হত্যা: স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

সদরঘাটের ব্যবসায়ীকে হত্যা: স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

সান্দা বিশ্বকাপে স্বর্ণপদক জিতেছেন ইরানের দারিয়াই

সান্দা বিশ্বকাপে স্বর্ণপদক জিতেছেন ইরানের দারিয়াই

সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য অংশগ্রহণমূলক বাণিজ্য ও কৌশলগত অংশীদারিত্বে জোর দিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য অংশগ্রহণমূলক বাণিজ্য ও কৌশলগত অংশীদারিত্বে জোর দিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে শুল্কের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে ‘কারসাজির’ অভিযোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে শুল্কের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে ‘কারসাজির’ অভিযোগ

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি স্থগিতের পরে ঘুরে দাঁড়াল এশিয়ার শেয়ার বাজার

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি স্থগিতের পরে ঘুরে দাঁড়াল এশিয়ার শেয়ার বাজার

বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় ঢাকা-মস্কো

বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় ঢাকা-মস্কো

ইসরাইলী বর্বরতার বিরেদ্ধে বরিশালে বিএনপি’র বিক্ষোভ

ইসরাইলী বর্বরতার বিরেদ্ধে বরিশালে বিএনপি’র বিক্ষোভ

‘গাজা ও রাফা ইসরায়েলের নৃশংস গণহত্যা’র প্রতিবাদে গণসংহতি আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ কাল

‘গাজা ও রাফা ইসরায়েলের নৃশংস গণহত্যা’র প্রতিবাদে গণসংহতি আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ কাল

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূত সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূত সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৮

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৮

মানবাধিকার নিয়ে ইউসিবিডি আয়োজিত সেমিনারে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ

মানবাধিকার নিয়ে ইউসিবিডি আয়োজিত সেমিনারে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ

ইসরাইলি নৃশংস গণহত্যার  প্রতিবাদে গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

ইসরাইলি নৃশংস গণহত্যার  প্রতিবাদে গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়াচ্ছে না, তাদের ধ্বংস অনিবার্য : মির্জা আব্বাস

ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়াচ্ছে না, তাদের ধ্বংস অনিবার্য : মির্জা আব্বাস

বোয়ালমারীতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন

বোয়ালমারীতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল হলেও স্বাভাবিক বাংলাবান্ধা, নেপালে গেল ১৪৭ টন আলু

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল হলেও স্বাভাবিক বাংলাবান্ধা, নেপালে গেল ১৪৭ টন আলু

‘এনসিপি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য বানাতে চায়’

‘এনসিপি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য বানাতে চায়’

সংস্কার কমিশনে ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাব-   বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র

সংস্কার কমিশনে ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাব- বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র