রিজার্ভ নিয়ে আমরা চিন্তিত তবে শঙ্কিত নই - ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অর্থনীতিতে আমরা ভারতের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছি
০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫০ পিএম | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫০ পিএম
রিজার্ভ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে তা অন্যায়। রিজার্ভ নিয়ে আমরা চিন্তিত কিন্তু শঙ্কিত নই। তবে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের অর্থনীতি এখনো সবল আছে। অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তান, শ্রীলংকাকে পেছনে ফেলে আমরা এখন ভারতের সাথে টেক্কা দিচ্ছি। ঋণ খেলাপীরা কেন একবার নয় দুই বার বার নয়, বার বার কেন তারা পার পেয়ে যাবে। কেন ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করবে না। এক হাজার টাকার কৃষি ঋণ ফেরত দিতে না পারলে কেন বঙ্গবন্ধুর আপনজন কৃষাণ-কৃষাণীদের জেলে যেতে হয়। অথচ দশ হাজার, বিশ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপীরা এক দলের নয়, সব দলের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানদের ডানে বামে বসে বিদেশ ভ্রমণ করে, এটা আমার হিসেবে মেলে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থীতিশীলতা বজায় রেখে সমঝোতা করা উচিত। রাজনৈতিক বিরোধের মিমাংসা না করে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিলে আমাদের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী। যারা নিজের স্বার্থে আইন প্রণয়ন করে। তাই রাজনীতিবিদদের আরো শক্তিশালী করে দেশের স্বার্থে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আইএমএফ’র ঋণ নিয়ে আমরা যদি আর্থিকখাতের সংস্কার করতে না পারি তাহলে সে ঋণ নিয়ে লাভ কি। দেশের আড়াই কোটি লোকের মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলার। অথচ কর দিচ্ছে মাত্র ২৮ লাখ লোক। গ্রামে গঞ্জে অনেক ব্যক্তি আছে যারা কর প্রদানে সক্ষম, তাদেরকেও করের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তবে কর আদায়ে রক্তচক্ষু দেখানো যাবে না। গত ৫২ বছরে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রসর অবিশ^াস্য হলেও আমাদের অনেক সমস্যা আছে। কিছু চাটার দলও আছে। যে কারণে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার এফডিসিতে অর্থনৈতিক সুরক্ষায় অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির কৌশল নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কর দেয়ার প্রবণতা কম। প্রভাবশালীদেরই কর ফাঁকির পরিমাণ অনেক বেশি। কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাবে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা, আর্থিক খাতের অনিয়ম, প্রবাসী আয়ে ধীর গতি, মেগা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্ণীতি ও অর্থ পাচারের কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী করতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই দুর্নীতি অনিয়ম প্রতিরোধ করে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুরক্ষার কৌশল অবলম্বন করা উচিত। দুঃখের বিষয় আর্থিক খাতের অনিয়ম আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় এক কালো দাগ। আমাদের সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে অর্থ পাচারের কারণে। আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা দিনে দিনে ক্যান্সারের রুপ ধারণ করছে। ঋণ জালিয়াতির সংস্কৃতি থেকে আমরা কোনভাবেই শৃঙ্খলমুক্ত হতে পারছি না। ঋণখেলাপির সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। যে পরিমাণে ঋণ আদায় করা হয়, তার চেয়ে বেশি ঋণ অবলোপনের অভিযোগ রয়েছে। নামে বেনামে ঋণ গ্রহণ করে অর্থ পাচারের মাধ্যমে দুবাই, লন্ডন, আমেরিকায় বাড়ি গাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য করে যাচ্ছে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা। আমদানি রফতানির আড়ালেও দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। ঋণ খেলাপি, কর খেলাপি, বিল খেলাপি, অর্থ পাচারকারীসহ দুর্নীতিবাজরা যাতে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেদিকে নির্বাচন কমিশনসহ রাজনৈতিকদলগুলোকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তাই আর্থিক খাতের সংস্কার করে খেলাপি ঋণ হ্রাসের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরী। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, অর্থ পাচার, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া, বৈশি^ক পরিস্থিতির কারণে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবন নীর্বাহ কঠিন করে তুলছে। মূদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বিশ^বাজারে জ¦ালানি তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম কমলেও এর সুফল আমরা এখনো পাচ্ছিনা। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে সঙ্কট মোকাবেলার লক্ষ্যে গত জানুয়ারীতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়। আইএমএফ থেকে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে তারা যে শর্ত দিয়েছিল তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত পূরণে আমরা পিছিয়ে রয়েছে। আইএমএফ যদি দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় দিতে দেরি করে তাহলে সেটি জ¦ালানীখাতসহ পণ্য সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে। তবে আশা করা যাচ্ছে সার্বিক বিশ^ পরিস্থিতি বিবেচনায় আইএমএফ আমাদের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় দিবে।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক জাকির হোসেন, সাংবাদিক মো: আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক শাহ আলম খান। অর্থনৈতিক সুরক্ষায় অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধিই উত্তম কৌশল নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফ্রান্সে গণধর্ষণ মামলা ঘিরে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবিরকে হয়রানি, অভিযুক্তকে প্রত্যাহার
শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ কমিশনার
বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএ’র ৩ সদস্য নিহত, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
ক্রাউন প্রিন্স শেখ হামদান দুবাই রান ২০২৪-উৎসবে দৌড়বিদদের নেতৃত্ব দিলেন
বেনাপোল বন্দরের সাথে সকল রুটের পরিবহণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন চলছে: পাসপোর্ট যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে
সাটুরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধে হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৃষকের মৃত্যু
"অভিনেত্রী মন্দিরার সিনেমার প্রিমিয়ার প্রদর্শনী যুক্তরাষ্ট্রে"
পেঁয়াজের পরিচর্যায় ব্যস্ত কুষ্টিয়ার কৃষকরা
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার বিতর্কিত সিলেবাসের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মহীন করার চক্রান্ত করেছিল-পীর ছাহেব চরমোনাই
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে যাচ্ছে রাষ্ট্র
জবির বোটানি বিভাগ অ্যালামনাইয়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত
আরএফকে জুনিয়র কি আমেরিকার খাদ্যাভ্যাসকে পরিবর্তন করতে পারবেন?
জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের দুঃখ প্রকাশ
বর্তমান সরকার পূর্নবাসনসহ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন- আশাবাদী ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা
ফরিদগঞ্জে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে শিশু-কিশোররা
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজার প্রবাসী গ্রেফতার
চট্টগ্রামে চাকরিচ্যুত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহাসড়ক অবরোধ
পাকিস্তানে রাতভর শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষে নিহত অন্তত ৩২
মোহাম্মদপুরে সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট