এস আলমের নিয়োগ অপেশাদার ব্যাংকারদের ছাঁটাই শুরু
০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম
ব্যাংকের সার্বিক শৃঙ্খলা ফেরাতে পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ পাওয়া প্রবেশনারি সময়কালে থাকা ৫৮৯ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করলো বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)। মোট জনবল ৪ হাজার ৭৫০ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়। এসআইবিএল ছাড়াও চট্রগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকেও এভাবে মোট জনবলের অর্ধেকের বেশি নিয়োগ হয়েছে বিজ্ঞপ্তি ছাড়া। যাদের অধিকাংশেরই নেই ন্যূনতম যোগ্যতা। অবশ্য শুধু বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণই নয়; হাসিনা রেজিমে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণ ছিল গ্রুপটির হাতে। আর তাই এসআইবিএলে থাকা অপশোদারদের চাকরিচ্যুতি শুরু হলো। ধীরে ধীরে অন্যান্য ব্যাংকও এই ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এস আলম নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে গত কয়েক বছরে দেদারছে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অদক্ষ-অপেশাদার লোকদের। ব্যাংকে নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করতে হাজার হাজার নতুন কর্মী ও কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের সিংহভাগের বাড়ি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের জেলা চট্টগ্রামে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও প্রশ্নসাপেক্ষ। ক্ষেত্রবিশেষে নিয়োগের আগে কোনো ধরনের পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পর্যন্ত করা হয়নি। এছাড়া ব্যাংকের প্রমোশনের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অনিয়ম উঠে এসেছে। ডজন খানেক কর্মকর্তার তথ্য ইনকিলাবের হাতে রয়েছে। যাদের অনেকেই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার সঙ্গে কোনো না কোনো সময় সংশ্লিষ্ট ছিলেন। অনেককেই আবার একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে তুলে এনে নাটকীয় গতিতে পদোন্নতি দিয়ে বসানো হয়েছে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে। সূত্র জানায়, এস আলম সংশ্লিষ্টতার বাইরে হাতে গোনা কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে ওই সব ব্যাংকে। এস আলমের লোক হলে- কারো কারো একলাফে ৩/৪টি পদোন্নতি। কেউ কেউ প্রতি বছর একটা করে পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ। এমনকি সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ থাকার পরও এস আলমের আস্থাভাজন হওয়ায় আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) হয়েছে মাসুদুল বারী।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ব্যাংকিং পাড়ায় আলোচনার নাম ছিল ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি আকিজ উদ্দিন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস হওয়া স্বত্তেও ২০২৩ সালের এপ্রিলে ব্যাংকটিতে ডিএমডি হিসেবে বসানো হয় তাকে। ডিএমডি হিসেবে যোগদানের পর তার সম্পর্কে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সততা, কাজের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতায় সন্তুষ্ট হয়ে ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ ব্যাংকিং একটি বিশেষায়িত খাত। এই পদের জন্য ব্যাংকিং সম্পর্কিত জ্ঞান ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ীই ন্যূনতম ১৮-২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এই পদের জন্য। যার লেশমাত্রও ছিল না আকিজ উদ্দিনের। অথচ তিনিই ব্যাংকের সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অবশ্য ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে আকিজ উদ্দিনের অন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এস আলম শিল্প গ্রুপ সংশ্লিষ্ট একজন ইনকিলাবকে জানান, দেশের শীর্ষ ব্যাংকের ডিএমডি পদে এ রকম একজন ব্যক্তিকে বসানো ব্যাংককে ধ্বংস করার মতো। এটি ব্যাংকিংখাতের জন্য ছিল লজ্জাকর। তিনি বলেন, ব্যাংকিং জ্ঞানই বলতে ছিল না; কিছুদিন একটি শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যানের পিএস, সেখান থেকে ডিএমডি বনে গেলেন। তাও আবার দেশের শীর্ষস্থানীয় বা এক নম্বর ব্যাংকের। তাহলে ব্যাংকখাতের কি হাল ছিল প্রশ্ন রাখেন তারা। এমনকি অনুসন্ধানে জানা গেছে, আকিজ উদ্দিন সাইফুল ইসলাম মাসুদ (এস আলম) এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট একজন জানান, এই আকিজ উদ্দিন সাইফুল ইসলাম মাসুদের (এস আলম) জুতা পরিষ্কার করা থেকে তার চুল আঁচড়ানোর কাজ করে প্রকৃতার্থে এই পদ এবং গ্রুপের নিয়ন্ত্রক হন। ব্যাংকিং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণও মূলত ছিল আকিজ উদ্দিনের হাতে। একটি পক্ষের হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী থেকে শুরু করে বর্তমান ডেপুটি গভর্নর-১ নূরুন নাহার, দেব দুলাল রায়সহ বড় একটি গ্রুপকে মাসোহারা দেয়া হতো তার মাধ্যমে। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠানটির অতি নিকটের মানুষ হিসাবে অঘোষিত সর্বেসর্বা বনে যান। যদিও স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে এখনো আকিজ উদ্দিন জনসম্মুখে আসেননি। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকও তাকে ডিএমডি থেকে অপসারণ করেছে।
এদিকে প্রথম এস আলমের যোগসাজশে অপেশাদার কর্মকর্তাদের আংশিক নিয়োগ বাতিল করেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। কোন ধরণের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ও সনদ যাচাই ছাড়াই চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার এসব ব্যক্তিদের চলতি বছর নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রত্যেককে আলাদাভাবে চিঠি দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
এসআইবিএল সূত্র জানায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোট জনবল ৪ হাজার ৭৫০ জন। এসব কর্মকর্তার মধ্যে কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয় ২ হাজার জনকে। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি দখলে নেওয়ার পর তাদের নিয়োগ হয়। যাদের বেশির ভাগের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়।
গতকাল এসআইবিএলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক দখলে নেওয়ার পর থেকে ন্যূনতম যোগ্যতা যাচাই ছাড়াই অপ্রয়োজনীয় অনেক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের সিংহভাগই এস আলমের বাড়ির সামনে রাখা চাকরির বক্সে সিভি জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। এভাবে নিয়োগ পাওয়া অন্যদের বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ব্যাংকটির অপর এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের পর থেকেই অপ্রয়োজনীয় নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন অনেক শাখায় বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। তারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। তাই শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১০ নম্বর শর্তের আলোকে তাদের ছাঁটাই করেছে ব্যাংক। এর মাধ্যমে ব্যয় সংকোচন করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ধীরে ধীরে অন্যান্য ব্যাংকগুলোতেও এস আলমের সময়ে নিয়োগ পাওয়া অপেশাদারদের বিতারিত করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনরা।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসলামী রাষ্ট্র গঠিত হলে পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে : মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী
শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসকারী কুশীলবদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে -জাতীয় শিক্ষক ফোরাম
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আলোচনা সভা, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য চান আলোচকরা
বিনা ভোটের সরকার দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুট করে পাচার করেছে - সাঈদ সোহরাব
গণহত্যায় জড়িত পুলিশের তালিকা হচ্ছে
'নিজ জন্মভূমি ভারতেই অপমানিত হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'
জাতীয় পার্টির সব কার্যালয়ের সামনে গণপ্রতিরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করলো ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা
বিএনপি-র নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদের বংশাল এলাকায় পথসভা
সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ হলো কাকরাইল ও এর আশপাশের এলাকায়
জিশান-সাইফউদ্দিন ঝড়ে জয় দিয়ে শুরু বাংলাদেশের
সাভার সার্কেল পুলিশের সাবেক এএসপি শাহিদুল কারাগারে
চট্টগ্রামে বই পড়ে ৫ হাজার ৫০৩ শিক্ষার্থীর পুরস্কার লাভ
বিএনপি জনগনের সাথে ছিল আছে এবং থাকবে - ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম
গোদাগাড়ীতে কোচিং সেন্টারের পরিচলক এক ছাত্রীর সাথে আপত্তিকর দেখে এলাকাবাসী অবরুদ্ধ করে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন।
'মানুষের গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করাই হচ্ছে গণঅধিকার পরিষদের মূল লক্ষ্য' - গণঅধিকার পরিষদ
জাতির জনক ট্যাগ ব্যবহার করে ফ্যাসিজমের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো- ড.সলিমুল্লাহ খান
আনুপাতিক হারে সংসদ নির্বাচনের দাবি সংস্কারের নামে কুসংস্কার বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
সিলেট সীমান্ত হয়ে ভারতে পালাতে যেয়ে ধরা খেলেন এক আ'লীগ নেতা !
নির্বাচনে জিততে যেভাবে ধর্মকে ব্যবহার করছেন ট্রাম্প
আগামীদিনের রাজনীতি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশের গড়ার রাজনীতি