যানজটে ক্ষতির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া জরুরি
০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:১৯ পিএম
দেশের যানজট নিয়ে বহু কথা হয়েছে। বহু লেখালেখি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যানজট কমানোর উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার কথাও শোনা গেছে। তবে যানজট কমানো যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলোও বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে যানজট জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করেছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েক বছর আগে রাজধানীর যানজটকে জাতীয় দুর্ভোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ঠিকই, তবে এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন, এমন নজির দেখা যায়নি। বরং যত দিন যাচ্ছে, যানজট ততই প্রকট আকার ধারণ করছে। এখন রোজা চলছে। ঈদ সন্নিকটে। মানুষ শপিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে ঘর থেকে বের হবে। এমতাবস্থায়, রাস্তাঘাটের কী অবস্থা দাঁড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যানজটের ক্ষতি নিয়ে বহু বছর ধরেই বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এতে অনেক ধরনের ক্ষতির কথা উল্লেখ থাকে। একজন যাত্রীর শারিরীক, মানসিক, আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতির পরিসংখ্যান আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। অবশ্য এ ক্ষতি একজন সাধারণ যাত্রীও বুঝতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয়, তার আর্থিক ক্ষতির চেয়ে মানসিক যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পরিমাপের মধ্যে আনা হচ্ছে না। তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না, যানজটের ধকল সইতে সইতে তার স্বাভাবিক মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেছে। বলা যায়, সে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে গেছে, যে রাস্তায় নামলে তাকে যানজটের ধকল সইতেই হবে। বরং যখন হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় রাস্তা ফাঁকা, তখন সে বিস্মিত হয়। বিশ্বাস করতে পারে না। যাই হোক, কেন ও কী কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তা চিহ্নিত হলেও তা সমাধানের উদ্যোগ ও তৎপরতা নেই। অথচ অব্যাহত এই যানজট নিরসনে যদি একটু একটু করে পদক্ষেপ নেয়া হতো, তাহলেও আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
দুই.
যানজট জাতীয় অর্থনীতিকে কতটা ক্ষতি করে চলেছে, তার হিসাব ও পরিসংখ্যান বিষেশজ্ঞদের গবেষণার বরাত দিয়ে প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতদিন একটি সাধারণ হিসাব ছিল, যানজটে বছরে গড়ে বিশ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। বেশ কয়েক বছর আগে বিনিয়োগ বোর্ডের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ক্ষতি হয় এক লাখ কোটি টাকা। উৎপাদন খাত, স্বাস্থ্যগত ও দুর্ঘটনার ক্ষতি হিসাব করলে এর পরিমাণ হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। যানজটের কারণে ক্ষতির পরিমাণ ঘোষিত বাজেটের প্রায় অর্ধেক এবং এ দিয়ে বছরে পাঁচটি করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। বিনিয়োগ বোর্ডের গবেষণা প্রতিবেদনে যানজটের কারণে ক্ষতির একটি খাতওয়ারি হিসাব দেখানো হয়েছে। হিসাবে দেখানো হয়, যানজটের কারণে বছরে কর্মজীবী মানুষের যে পরিমাণ কর্মঘন্টা নষ্ট হয় তার আর্থিক মূল্য ৪৩ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকার বেশি। উৎপাদন খাতে এ ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৬৮২ কোটি, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ২১ হাজার ৯১৮ কোটি, জ্বালানি ও মেরামত বাবদ ১ হাজার ৩৯৩ কোটি এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতি হয় ১৫৪ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, যানজটের কারণে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি’র ক্ষতির পরিমাণ ৭ শতাংশ। যানজটের ক্ষতি প্রতি বছর কী পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার একটি তুলনামূলক হিসাব তুলে ধরলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি প্রথমে নজরে আনে দি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি)। সংস্থাটি ২০১১ সালে এক গবেষণায় যানজটে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে। প্রতিষ্ঠানটি হিসাব করে দেখায়, ২০১১ সালে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালে এ ক্ষতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৫ সালে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। জ্যামিতিক হারে এ ক্ষতি বাড়ছে। এখন যে তা আরও ছাড়িয়ে গেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জাতীয় অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায়ই যানজট তীব্র হয়ে ওঠে। এতে পণ্যপরিবহণ ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে পড়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যাত্রীরা। নগরবিদরা বলেন, গুলিস্তান থেকে উত্তরা যেতে যে সময় লাগে, এ সময়ে বিমানে দুবাই চলে যাওয়া যায়। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বলেন, বিদেশী বায়াররা যানজটে অতীষ্ঠ হয়ে বলেন, আমাদের আর এ দেশে এনো না। তাদেরকে যানজট এড়িয়ে ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যেতে প্রায়ই হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হয়। এতে যে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা বলে বোঝানো যাবে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠে যাবে। গার্মেন্ট মালিকদের এ কথা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, যানজট কীভাবে অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে। অথচ এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন কোনো বিকার নেই। ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। সরকার কি একবারও ভেবে দেখেছে, যে যানজটে বাজেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশের বেশি ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে কি মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব? অবশ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ইতোমধ্যে অর্থনীতির অন্যান্য প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলে দিয়েছে, আগামী কয়েক বছরে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব। যানজটের সাধারণ কারণগুলো মোটামুটি সবারই জানা। রাস্তার তুলনায় অতিরিক্ত যানবাহন, রাস্তা-ফুটপাত দখল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানোর কারণগুলো চোখের সামনেই ঘটছে। তবে একটি শহরে যান চলাচলের জন্য সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টি, তা হচ্ছে রোড ম্যানেজমেন্ট বা সড়ক ব্যবস্থাপনা। রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে এ ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। অপরিকল্পিতভাবেই সবকিছু চলছে। এমন বিশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা বিশ্বের আর কোথাও নেই। শুধু সড়ক ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলাই নয়, রাজধানীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণও হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনেও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে রাজধানীর অপরিকল্পিত উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং গণপরিবহন পরিকল্পনাকে পাত্তা না দিয়েই উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। সাধারণত একটি আদর্শ শহরে শতকরা ২৫ ভাগ সড়ক থাকতে হয়। ঢাকা শহরে আছে মাত্র ৭ ভাগ। বিভিন্নভাবে দখলের কারণে এই ৭ ভাগও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আর রাজধানীর বিস্তৃতি যেভাবে ঘটানো হচ্ছে, তাতেও এ বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে না। কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যেভাবে খুশি সেভাবে এর সম্প্রসারণ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে যে পরিমাণ সড়ক রয়েছে, এই পরিমাণ সড়কও যদি যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়, তবে যানজট অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমলেই নিচ্ছে না। রাজধানী এখন এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, যানবাহন ও পথচারি একই রাস্তা দিয়ে চলছে। পথচারিদের জন্য যে ফুটপাত রয়েছে, সেগুলো হকারদের দখলে চলে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে যানবাহন চলাচলের রাস্তা দিয়ে পথচারিদের চলতে হচ্ছে। একই রাস্তা দিয়ে যদি হাঁটাচলা, ধীরগতি ও দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করতে হয়, সেখানে যানজট কমবে কিভাবে? ফুটপাত দখলমুক্ত করার কথা আমরা বহু শুনেছি। কিছুদিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘোষণা দিয়েছিলেন, গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করা হবে। এ অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হয়। দেখা গেল, একদিন মুক্ত থাকার পরদিনই সব ফুটপাত হকারদের দখলে চলে গেছে। এমনকি কয়েক বছর আগে উচ্চ আদালত জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত হকার মুক্তের নির্দেশ দিলেও কিছুদিন মুক্ত থাকার পর পুনরায় পুরনো চিত্রে ফিরে যায়। যেখানে উচ্চ আদালত ও মেয়রের নির্দেশে কোনো কাজ হয় না, সেখানে কি করে যানজট নিরসন হবে? বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্ত না থাকলে এবং তা বাস্তবায়ন না হলে যানজট কোনো দিনই কমবে না। অর্থনীতির ক্ষত তো সারবেই না, বরং তা আরও বড় আকার ধারণ করবে।
তিন.
ভিয়েতনামের ট্র্যাফিক সিস্টেম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মুগ্ধ হওয়ার মতো। দেশটি দশকের পর দশক ধরে বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশের সাথে যুদ্ধ করে আমাদের পরে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটির উন্নয়ন এখন চোখে পড়ার মতো। ওখানে যানজট বলতে কিছু নেই। আমাদের দেশে যানজট শহর থেকে শুরু হয়ে শহরের বাইরে মহাসড়ক পর্যন্ত ঠেকে। শহরের ভেতরে ফ্লাইওভারেও যানজট লেগে থাকে। অর্থাৎ যানজট কমাতে ফ্লাইওভার করেও কোনো লাভ হয়নি। অথচ ভিয়েতনামে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়ার জন্য শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। এক শহর থেকে আরেক শহরে মূহুর্তে চলে যাচ্ছে। আর আমাদের দেশে রাজধানী থেকে বের হতেই ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার হয়ে যায়। যদি ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে একটি ফ্লাইওভার করা যায়, তবে অর্থনীতির উন্নতির চেহারাটাই বদলে যাবে। কলকাতার সাথেও যদি ঢাকার তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, কলকাতায় শুধু ট্র্যাফিক সিগনালের স্বাভাবিক জট ছাড়া যানজট বলতে কিছু নেই। প্রধান সড়কগুলোতে ট্র্যাফিক পুলিশও খুব কম দেখা যায়। আমাদের দেশের ট্র্যাফিক পুলিশের মতো হাতের লাঠি দিয়ে সিগনাল দিয়ে গাড়ি থামাতে হয় না। সেখানে সিগনালের লালবাতি জ্বলার সাথে সাথেই সব গাড়ি থেমে যায়। ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের রাজধানীর যানজটের চিত্রের সাথে আমাদের দেশের রাজধানীর তুলনা করলে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তারা পারছে কিভাবে? জবাবে বলা যায়, তাদের সরকার যানজট নিরসন এবং যানজট যাতে সৃষ্টি না হয়, এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়নি। আমাদের দেশের মতো ফুটপাত দখল, যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে সেখানে গাড়ি থামানোর মতো বিষয়গুলো শক্ত হাতে দমন করেছে। যানজটমুক্ত করতে যা করার প্রয়োজন তাই করেছে। এর ফলে কলকাতা থেকে দূরে অন্যান্য জেলার চাকরিজীবী ও কর্মজীবীরা সহজে কলকাতায় এসে অফিস এবং কাজকর্ম সেরে চলে যেতে পারছে। আমাদের দেশে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকে রাজধানীতে কাজকর্ম করে ফিরে যাওয়া কল্পনাও করা যায় না। এর মূল কারণ যে যানজট, তা বলাবাহুল্য। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, রাজধানীকে ভারমুক্ত করতে হবে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তাহলে দেশের সকল প্রান্তের মানুষের ঢাকামুখী হওয়া ঠেকানো যাবে। তারা এ কথাও বলেছেন, বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোকে ঢাকার মতো সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির উদ্যোগ নিতে। যদি এসব শহরের উন্নয়ন সাধন করা যায়, তবে ঢাকামুখী মানুষের ঢল অনেকাংশে কমে যাবে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করত না এবং থেকেও যেত না। এসব মানুষের আগমনের মূল কারণই হচ্ছে, প্রশাসন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়া। রাজধানীর এসব সুবিধাদি দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলাগুলোতে ছড়িয়ে দিলে ঢাকা যেমন ভারমুক্ত হতো, তেমনি যানজট ও এর কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে, তা অনেকাংশে কমে যেত। এসব সমস্যা ও সমাধানের কথা বহুবার বলা হলেও এ ব্যাপারে সরকারের চিন্তা-ভাবনা ও উদ্যোগের কথা শোনা যায় না। সরকার মনে করছে, রাজধানীতে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল ইত্যাদি চালু করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এসবের মাধ্যমে হয়তো কিছুটা যানজটমুক্ত হবে, তবে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার কারণ নেই। কারণ অপরিকল্পিতভাবে ঢাকার সম্প্রসারণের সাথে সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা ও যানজটও সমানভাবেই এগিয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে, এসব ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলও পরিস্থিতি সমাল দিতে পারবে না।
চার.
রাজধানীতে যেহেতু সড়কের পরিমাণ কম এবং যান চলাচলে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, তাই সরকারকে ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। মেট্রোরেলসহ সড়কের উপর ফ্লাইওভার নির্মান ও ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে বহুমুখী সড়কের মিলনস্থল এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণ করলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। সোনারগাঁও হোটেল মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, কাকরাইল, বাংলামোটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যদি মাটির নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচলে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়, তবে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। বিশ্বের বহুদেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা করা কঠিন বিষয়ও নয়। সরকার যদি প্রায়োরিটি বেসিসে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প করতে পারে, তবে আন্ডারপাসের মতো ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়। এসব প্রকল্প অনায়াসেই বাস্তবায়ন করা যায়। প্রয়োজন শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও তার বাস্তবায়ন। যানজটে ক্ষতির পরিমান দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অর্থনীতির স্বার্থে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সরকারের উচিত। এর পাশাপাশি দখল হওয়া ফুটপাত ও সড়ক উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্টেশন নির্মাণ করতে হবে এবং সেখানে যাত্রীবাহী যানবাহন থামাতে বাধ্য করতে হবে। যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা বন্ধ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এক অংশ দখল করে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা উঠিয়ে দিতে হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন। যানজটের কারণে বছরে দেড় লাখ কোটি টাকা ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। কিছু লোকের দখলদারিত্ব ও সড়ক ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলার কারণে অর্থনীতির এত বড় ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না, মানা উচিতও নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা