ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

পিলখানা ট্রাজেডির বিচারে আশার আলো

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল মইনুল ইসলামকে ঢাকা বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুবাই হয়ে কানাডায় যাওয়ার সময় হজরত শাহাজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে তাকে আটক করা হয়। ২০০৯ সালের ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারীতে ঢাকার পিলখানায় আমাদের সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিত পরে মইনুল ইসলাম বিডিআর ডিজি হন। পিলখানা ম্যাসাকারে ৫৭জন চৌকষ, দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারসহ ৭৪জন নিহত হয়। কথিত বিডিআর বিদ্রোহের কথা বলা হলেও শুরু থেকেই এই হত্যাকান্ডের পেছনে রাজনৈতিক মোটিফ এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। দেড় দশক ক্ষমতায় থাকলেও এই ট্রাজিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত অণুঘটকদের বিচারের সম্মুখীন করার কোনো উদ্যোগ শেখ হাসিনা গ্রহণ করেননি। বিদ্রোহের বিচারের নামে যা ঘটেছে, তা প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। পিলখানা হত্যাকান্ড জাতির বিবেক ও আবেগকে চরমভাবে নাড়া দিয়েছিল। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠুৃ তদন্ত কিংবা বিচার যে আদৌ সম্ভব ছিল না, তা সকলেরই জানা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি ক্রমে জোরালো হয়েছে। বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল(অব.)আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠনের তিনদিনের মাথায় বিমান বন্দর দিয়ে সপরিবারে কানাডায় যাওয়ার সময় মইনুল ইসলামকে আটকানো হলো। একে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তার সময়েই বিডিআর’র নাম পরিবর্তন করে বিজিবি রাখা হয়। বিডিআর’র পোশাকেও পরিবর্তন আনা হয়। তার সময়েই কথিত তদন্ত ও বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। হত্যা পরবর্তী ঘটনাবলীর তিনি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীও বটে।

পিলখানা হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করতে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক, নাফযুদ্ধ, পাদুয়া-রৌমারি ও বড়াইবাড়ি যুদ্ধের নায়ক আ ল ম ফজলুর রহমানকে তদন্ত কমিশনের প্রধান করে সামরিক-বেসামরিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নতুন কমিশন গঠন এ ক্ষেত্রে অর্ন্তবর্তী সরকারের একটি বড় কাজ। এর আগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের ভূমিকা জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিডিআর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে সন্দেহভাজন শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গির কবির নানক, মির্জা আজমসহ অনেকেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা কোনো নতুন বিষয় নয়। অথচ স্বৈরাচারের দোসররা কিভাবে বিমানবন্দর বা স্থলভণ্দর দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারলো, তা অবশ্যই একটি বড় প্রশ্ন। ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ কিভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলো, তার জবাব সরকারের সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে। যাহোক, পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ও সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসররা পুরো প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দিতে কিংবা ব্যাহত করতে সদা সক্রিয় রয়েছে। তা নাহলে এমন একটি জাতীয় ট্রাজেডির সাথে জড়িত এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিভাবে দেশ ত্যাগ করার সুযোগ পেল! অনেক দেরিতে হলেও আ ল ম ফজলুর রহমানের মত সাহসী দেশপ্রেমিক সেনানায়ককে প্রধান করে নতুন তদন্ত কমিশন গঠনের দুইদিনের মধ্যেই সাবেক বিজিবি মহাপরিচালককে বিদেশে যাওয়া বারিত করার মধ্য দিয়ে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনার তদন্ত নতুন মোড় নিতে চলেছে।

পিলখানায় একটি পরিকল্পিত গণহত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সেখানে ডাল-ভাত কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ ও বিদ্রোহের প্রচারণা চালিয়ে প্রকৃত অপরাধী ও মূল কুশীলবদের তদন্ত ও বিচারের বাইরে রাখা হয়েছিল। ভারতের পুতুল সরকারের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকারের এ বিষয়ে দায়সারা, গা ছাড়া ভাব মেনে নেয়া যায়না। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও পাচারের হোতাদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। শেখ হাসিনাসহ বিডিআর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রভাবশালী কুশীলবদের যারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে, তাদের বিষয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তারা রেহাই পেতে পারেনা। অসম সাহসী সেনানায়ক আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিশন পিলখানা হত্যাকান্ডের মূল হোতাদের বিচারসহ দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচন করতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশাবাদি। পরিবর্তি নামের বিজিবি একটি অকার্যকর বাহিনীতে পরিনত হয়। বিজিবি একটি অর্থব ও ভারতের প্রতি নতজানু বাহিনী হয়ে ওঠে। বশংবদ সরকারের বশংবদ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির চোখের সামনেই প্রায় প্রতিদিন বিএসএফ পাখির মত গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করেছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের আগে এবং পরে বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় বিস্তর ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। সীমান্তের কাঁটাতারে কিশোরী ফেলানির গুলিবিদ্ধ ঝুলন্ত লাশ ভারত-বাংলাদেশ ভারসাম্যহীন সম্পর্কের প্রতিক হয়ে আছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনাকে ব্যর্থ করে দেয়ার ব্যাপক ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হলে প্রথমেই পিলখানা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় নবগঠিত তদন্ত কমিশন পিলখানা হত্যাকা-ের তদন্ত ও বিচারে নতুন গতি আনতে সক্ষম হবে। দেশবাসী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকা-ের ন্যায়বিচারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। পিলখানা হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দেশের নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতে হবে
সংবিধান সংশোধন-পুনর্লিখন প্রসঙ্গে
বিশ্ব পরিস্থিতি কেমন
বই আত্মার মহৌষধ
তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

মুসলিম জাগরণের অগ্রপথিক মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ আজ জন্মদিন

মুসলিম জাগরণের অগ্রপথিক মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ আজ জন্মদিন

গত সাড়ে ১৫ বছর যারা শাসন করেছে, তারা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদেরকে সাজিয়েছে: আমীরে জামায়াত

গত সাড়ে ১৫ বছর যারা শাসন করেছে, তারা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদেরকে সাজিয়েছে: আমীরে জামায়াত

রাজস্থানে ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি ৭০০ ফুট গর্তে আটকে থাকা শিশু

রাজস্থানে ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি ৭০০ ফুট গর্তে আটকে থাকা শিশু

জকিগঞ্জে বালাউটি ছাহেবের ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে ভক্ত-মুরিদানের ঢল

জকিগঞ্জে বালাউটি ছাহেবের ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে ভক্ত-মুরিদানের ঢল

‘অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা এই কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে’

‘অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা এই কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে’

বিমান হামলায় গাজায় একসঙ্গে ৫ সাংবাদিককে হত্যা

বিমান হামলায় গাজায় একসঙ্গে ৫ সাংবাদিককে হত্যা

বান্দরবানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো নির্মাণের নির্দেশ

বান্দরবানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো নির্মাণের নির্দেশ

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে উপদেষ্টারা

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে উপদেষ্টারা

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরায়েলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরায়েলের

ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা বাদ জোহর, অংশ নেবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা বাদ জোহর, অংশ নেবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সচিবালয়ের আগুন লাগা ভবনেই উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের মন্ত্রণালয়

সচিবালয়ের আগুন লাগা ভবনেই উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের মন্ত্রণালয়

সচিবালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

সচিবালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

চাঁদপুরে দুই উপজেলার মধ্যবর্তী সেতু ভেঙ্গে পড়েছে

চাঁদপুরে দুই উপজেলার মধ্যবর্তী সেতু ভেঙ্গে পড়েছে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাস মালিককে কুপিয়ে হত্যা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাস মালিককে কুপিয়ে হত্যা

মোজাম্বিকে কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় নিহত ৩৩, দেড় হাজার বন্দির পলায়ন

মোজাম্বিকে কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় নিহত ৩৩, দেড় হাজার বন্দির পলায়ন

কেনাকাটার সময় আমরা সাধারণত যে ভুলগুলো করি

কেনাকাটার সময় আমরা সাধারণত যে ভুলগুলো করি

মিরপুরে সাংবাদিকদের ২১ বিঘা জমি এখনও ইলিয়াস মোল্লাহর দখলে!

মিরপুরে সাংবাদিকদের ২১ বিঘা জমি এখনও ইলিয়াস মোল্লাহর দখলে!

রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মিলন গ্রেপ্তার

রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মিলন গ্রেপ্তার

ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার

ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার

সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার

সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার